255394

কলেজে ৩৪ বছর শিক্ষকতার পর এখন পত্রিকার হকার

দীর্ঘ ৩৪ বছর কলেজে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। অবসর নেয়ার পর এখন হয়েছেন পত্রিকার হকার। তার কোনো আর্থিক অনটন নেই। একটি নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের মাঝে তথ্য ও জ্ঞান পৌঁছে দিতে তার এই প্রয়াস।
বলা হচ্ছে, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার আবুল কালাম ডিগ্রি কলেজের রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক ইসাহাক শরীফের কথা। ৭৫ বছর বয়সে প্রতিদিন ৮০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ৩শ’ কপি পত্রিকা বিক্রি করেন তিনি।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে কলেজ শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান। পরে ২০১৬ সালের ১ মে থেকে হকারি শুরু করেন। প্রতিদিন এই কাজে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হাঁটেন তিনি।

শুধু অর্থ আয়ই নয়, যারা ছোট কাজ করতে অপমানিত বোধ করেন, লজ্জা পান- সেই সব নতুন প্রজন্মের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতেই এই কাজ তিনি বেছে নিয়েছেন। এই দৃষ্টান্ত অনুকরণ করে কেউ বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত হলেই তিনি স্বার্থকতা খুঁজে পাবেন বলে জানান।

এদিকে হকারি জীবনের শুরুতে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত মহল ইসাহাকের এই কাজটি তুচ্ছজ্ঞান করেননি বটে, তবে তারা বিভিন্নভাবে হকারি কাজে বাঁধ সাধেন। শিক্ষিকা স্ত্রী, মেয়ে এবং মেঝভাই তার হকারির বিরুদ্ধে জোড়ালো প্রতিবাদ করেন। তবে ইসাহাক শরীফ এসব নিয়ে কারো সঙ্গে বিতর্কে যাননি। তার বক্তব্য, আমার একটা লক্ষ্য আছে, তারা (আত্মীয়-স্বজন) তো সেটা ফেলে দিতে পারেন না।

শুরুর দিকে তিনি প্রতিদিন দেড়শ’ কপি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা বিক্রি করতেন। এখন জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ৩শ’ কপি পত্রিকা বিলি করেন। হকারি করে কমিশনে প্রতিদিন প্রায় ৪শ’ টাকা আয় করেন। তবে কিছু টাকা আজীবন তার বাকি থেকে যায়।

ইসাহাক শরীফ জানান, হকারি করে গত মে মাসে ১৩ হাজার, জুনে ৬ হাজার, জুলাইতে ৭ হাজার, আগস্টে ৮ হাজার এবং সেপ্টেম্বরেও ৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। জানা গেছে, এই আয়ের একটি অংশ শিক্ষায় উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করেন। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে গিয়ে ‘পড়ুন শিখুন, জীবন গড়ুন’ বলে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করেন তিনি।

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে হকারি কাজ শুরু হয় ইসাহাক শরীফের। পায়ে হেটে ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটারসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাবুগঞ্জের কেদারপুরের পূর্ব ভূতেরদিয়া থেকে বাহেরচর, রাকুদিয়া, রহমতপুর, ৭ মাইল ক্যাডেট কলেজ এবং উজিপুরের গুঠিয়া এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেন। রোদ-বৃষ্টি, ঝড়, শৈত্য প্রবাহ কোনো কিছুই ইসাহাকের হকারি কাজে বাঁধ সাধতে পারেননি।

ইসাহাক শরীফ বলেন, উন্নত দেশে সবাই কাজকে সম্মান করে। এদেশে কাজের শ্রেণি বিন্যাসে যুবকরা পরিশ্রম বিমুখ। তারা পরিশ্রমের কাজকে হেয় মনে করে এবং এ কারণে তারা কাজ পায় না। তারা বেকারত্বের মধ্যে নেশায় মত্ত হয়। তার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মুরুব্বিরা নতুন প্রজন্মকে উদাহরণ দিক সেটাই ইসাহাক শরীফের প্রত্যাশা।

দেহেরগতি ইউপি চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান বলেন, ইসাহাক শরীফের সব কর্মকাণ্ডই ভালো। সে শতভাগ ভাল মানুষ। সমাজের বেকারদের কাছে ইসাহাক শরীফের কর্মকাণ্ড অনুকরণীয় হতে পারে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.