256450

চলমান পাথর, যার রহস্য আজও অজানা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ পাথর কেমন পদার্থ? এমন প্রশ্নের জবাবে আপনি বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে উত্তর দেবেন, জড় পদার্থ। হ্যাঁ সত্যিই তাই। পাথর চলতে ফিরতে পারে না, নিজে থেকে কোনো কাজ করতে পারে না। অর্থাৎ জড় পদার্থের একটি সুন্দর উদাহরণ হলো এটি।

কিন্তু যদি শোনেন কোনো পাথর চলাচল করছে? কি, কিছুটা গা ছমছম করে উঠল? স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটি ভৌতিক মনে হতে পারে। নির্জন মরুভূমিতে নিজে নিজে এগিয়ে চলছে পাথর, রেখে যাচ্ছে নিজের চলার পথে চিহ্ন। এমন দৃশ্য দেখলে কিছুটা ভয় পাবেন যে কেউ।

তবে সত্যিই এমন চলমান পাথরের অস্তিত্ব রয়েছে পৃথিবীতে। বিজ্ঞানের এই যুগে এসে এমন তথ্য হয়তো অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কিন্তু, পৃথিবী বড্ড রহস্যময়। এখানে লুকিয়ে আছে এমন কিছু রহস্য যার ব্যাখ্যা আজও বিজ্ঞানীরা অব্দি বের করতে পারেননি।

বলছিলাম ডেথ ভ্যালি উপত্যকার চলমান পাথরের কথা। সেখানকার রেসট্র্যাক প্লায়া নামক জায়গাটির এই রহস্যময় পাথর যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়। জনমানবহীন এক বৈচিত্র্যময় জায়গা এটি। সচরাচর কোনো প্রাণীর দেখা মেলে না সেখানে।

অবিশ্বাস্য হলেও, এই উপত্যকায় থাকা রহস্যময় পাথরগুলো কোনো এক অজানা কারণে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে বয়ে চলে। চলমান পাথর নামে পরিচিত এই পাথরগুলোকে কেউ নিজের চোখে চলতে যা দেখলেও তাদের চলাচলের অস্তিত্ব দেখা যায়। পূর্বের দিন তারা যেখানে অবস্থান করে পরেরদিন তার থেকে বেশ দূরের অবস্থানে তাদের খোঁজ মেলে।

চলার পথে এরা বালুর গায়ে যে ছাপ ফেলে তা থেকেই এদের অবস্থান পরিবর্তনের ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়া যায়। সবচেয়ে মজার দৃশ্য দেখা যায় ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের রেসট্র‍্যাক প্লায়াতে। সেখানের চিত্র দেখলে মনে হবে পাথরগুলো যেন রেস প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। আর এই বিরল রেসের কারণেই ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের এই এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে রেসট্র‍্যাক।

হয়ত ভাবছেন মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী এসের অবস্থান পরিবর্তন করাতে পারে। কিন্তু না, আশেপাশের মাটিতে তাদের কোনো পদচিহ্নের পাওয়া যায় না। সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালে বিশেষজ্ঞদের নজরে এই স্থান পরিবর্তনের বিষয়টি ধরা পড়ে। কিছু গবেষক মনে করেন, মাটি কর্দমাক্ত থাকা এবং বরফ পড়ে পিচ্ছিল হওয়ার কারণে বাতাসের ধাক্কা লাগে পাথরগুলোর গায়ে। আর তাতেই স্থান পরিবর্তন করে সেগুলো।

শেষ অব্দি অবশ্য এই যুক্তিও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কারণ গ্রীষ্মকালে যখন মাটি একেবারে শুকনো থাকে তখনো এই পাথরগুলো স্থান পরিবর্তন করে। আর এরা এক রাস্তায় যে চলে তাও না বরং প্রতিটি পাথরের চলার পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা।

১৯৫৫ সালে এম স্ট্যানলী বন্যার পর সৃষ্ট বরফকে এই অদ্ভুত আচরণের জন্য দায়ী করেন। এই মতবাদকে ‘আইস শিট’ মতবাদ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু পাথরের চলার পথে বক্রতা থাকায় এই তত্ত্বও বাতিল হয়ে যায়।

এরপর ১৯৭৬ সালে রবার্ট শার্প ও ডুই ক্যারে এই চলাচলের জন্য দায়ী করেন বছরের বিভিন্ন সময়ে তীব্র বাতাসের গতিবেগকে। কিন্তু ১৯৯৫ সালে হ্যাম্পশায়ার কলেজের ভুত্বাত্তিকগণ শার্প ক্যারের মতামতকে বানচাল করে দিয়ে আইস শিট মতবাদকে গ্রহণ করেন।

কিন্তু দুটো মতামতই বাতিল হয়ে যায় যখন দেখা যায় একই জায়গায় পাথরগুলো পাশাপাশি নিজেদের অতিক্রম করতে থাকে। কারণ বাতাস বা আইসশিট যাই থাকুক পাথরগুলো অন্তত একদিকে চলবে। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটে তা দুটো মতবাদকে তুড়িতে উড়িয়ে দেয়।

আধুনিক স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে রহস্যময় পাথরগুলোর স্থান পরিবর্তনের প্রমাণ ঠিকই মেলে কিন্তু তার কারণ আজও জানা যায়নি। হয়ত প্রকৃতি কিছু রহস্য রাখতেই ভালোবাসে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.