256943

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ছাড়া বাড়ি ফিরবে না প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা (ভিডিও)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির পরও যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি না পাওয়ায় ফের ১৯ দিন ধরে অনশন করছেন প্রতিবন্ধী মাহবুবা হক চাঁদের কণা। রবিবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ ১৯দিন ধরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমরণ অনশন করছেন তিনি।

চাদের কণা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার মা। আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাই। তাকে আমার কষ্টের কথাগুলো বলতে চাই। তারপরে তিনি যেই সিদ্ধান্ত নিবেন তার পর আমি বাড়ি ফিরে যাব।

তিনি বলেন, আমি শুধু আমার যোগ্যতার ভিত্তিতে একটা সরকারি চাকরি চাই এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাতে করতে চাই। এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে তিনবার গিয়েছি কোনো লবিং না থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারছি না।

এভাবে কতদিন অনশন করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাড়িতে ফিরে যাবার মতো কোন অবস্থা আমার নেই। বাড়িতে ফিরে গিয়ে আমি কি করব। আমি যাদি সফল হই এখান থেকে সফল হব, না হয় এখানেই আমার মৃত্যু হবে। ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরব না। আমি শুধু শুনতে চাই আমার মা (শেখ হাসিনা) কি সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি যে ভাবে বেঁচে আছি এর থেকে মরে যাওয়া অনেক ভাল।

এর আগে গত ২৬ জুন রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশন করেন তিনি। স্নাতকোত্তর অর্জনের পর অনেক চেষ্টা করেও চাকরি না পাওয়ায় চাকরির জন্য এই তরুণী প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন। সেই অনশন নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। চাকরির আশ্বাস পেয়ে অনশন ভেঙে স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন চাঁদের কণা। তবে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির আশ্বাস পেলেও পরে সেটি দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়।

তিনি জানান, তার সরকারি চাকরির বয়স শেষের দিকে। তাই বাধ্য হয়ে গত জুনে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে আমরণ অনশন শুরু করেন। অনশনের তিনদিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী তাকে চাকরির আশ্বাস দেন এবং তার অধীনস্ত একান্ত সচিবকে চাকরির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কিছুদিন পর সেই সচিব তার দাবি অস্বীকার করেন এবং সিরাজগঞ্জের সমাজসেবা অফিসে অস্থায়ীভাবে হাজিরার ভিত্তিতে চতুর্থ শ্রেণির একটি চাকরি দেন। যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি না দেয়ায় তিনি সেই চাকরির নিয়োগপত্র নিতে যাননি।

চাঁদের কণা বলেন, আমার দাবি ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে একটা সরকারি চাকরি। সেই দাবিটাই মেনে নেয়া হয় কিন্তু পরবর্তীতে যে চাকরিটা দেয়া হলো, তা অস্থায়ী হাজিরার ভিত্তিতে তৃতীয় শ্রেণির চাকরি। তাহলে আমার দাবিটা কোথায় মানা হলো? শারীরিক অক্ষমতাকে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জয় করেছিলেন মাহবুবা হক চাঁদের কণা (৩১)। তবে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারছেন না তিনি। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। প্রতিবন্ধী হওয়ায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি মেলেনি তার। তাই বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ ও চাকরি চেয়ে গত জুনে অনশন করেও চাকরি না পাওয়ায় ফের অনশনে নেমেছেন তিনি।

জানা যায়, মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারায় চাঁদের কণা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতায় এবং নিজের প্রতিবন্ধিতা জয়ের অদম্য প্রচেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়ে যান তিনি। তিনি যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী তখন তার স্কুল শিক্ষক মা হাসনা হেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর তার বাবা ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মাকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে এই পরিবারে নেমে আসে চরম দারিদ্রতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন। শত কষ্টের মাঝেও গার্হস্থ্য অর্থনীতিতে সফলতার সাথে অর্জন করেন উচ্চতর ডিগ্রি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.