256983

বাবাকে হারিয়েও জেসসি পরীক্ষা দিল নাফিল

জেএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে নাফিল। বাবা ইসলাম মিয়া (৪০) তাকে পরীক্ষার হলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হন। যাত্রাপথে একটি বেপরোয়া গতির মোটর বাইকের ধাক্কায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইসলাম মিয়া। গুরুতর আহত ইসলাম মিয়াকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চোখের সামনে বাবার মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জেএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে নাফিল। তবে, শেষতক অসুস্থ অবস্থায় নাফিলকে কোলে করে স্থানীয়রা নিয়ে যান পরীক্ষার হলে। এ অবস্থায় সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

সোমবার (৪ নভেম্বর) সকালে আড়াইহাজার-গোপালদী সড়কে স্থানীয় মার্কাজ মসজিদের সামনে হৃদয়বিদারক ওই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। নিহত ইসলাম মিয়া পেশায় একজন রঙ মিস্ত্রী। সে উপজেলার ফতেপুর ইউপির বগাদী এলাকার আব্দুল ছামাদের ছেলে।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আর্থিক ক্ষতি আদায় করে ঘটনাটি উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসা করে দিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাবার লাশ বাড়িতে রেখে জেএসসি পরীক্ষা দেয় ছেলে নাফিল। আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশের প্রহরায় তার পরীক্ষা নেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয় আড়াইহাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইহাহিয়া খান স্বপন।

এর আগে এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে নাফিলের বাসায় ছুটে যান আড়াহাইহাজার উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহাগ হোসেন। তিনি নাফিলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং হাসপাতালের কেবিনে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। পরে নাফিলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসার পর সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে হাসপাতালের কেবিনে তার পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

ইউএনও সোহাগ হোসেন বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত নাফিলের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া হয়। অসুস্থ নাফিলকে হাসপাতালে ভর্তি করে সেখানে তাকে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। একজন শিক্ষক ও পুলিশ পরীক্ষার গার্ড দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, নাফিল তার বাবাকে হারিয়ে এতিম হয়ে গেছে। তার লেখাপড়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন নেবে। স্কুলে সে ফ্রি লেখাপড়া করবে। নাফিলের বাবাকে চাপা দেয়া সেই মোটরসাইকেলের চালক রাসেলকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.