258776

আদর্শ নাগরিক হতে এবং নাগরিকত্বের অধিকার পেতে কর দিতে হবে

ডেস্ক রিপোর্ট : আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসাবে আমার যেমন চাওয়া-পাওয়ার অধিকার থাকবে তেমনি দেয়ার দায়বদ্ধতাও থাকতে হবে।

একটি দেশের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার দিতে রাষ্ট্রের যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে নাগরিকদেরও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হতে হবে।

পৃথিবীর সব দেশের নাগরিকদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য রয়েছে তার নিজ দেশের প্রতি। যেমন রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলা, নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য প্রত্যেক নাগরিককে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে।

দেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান মেনে চলা এবং আইনের প্রতি সম্মান দেখানো নাগরিকদের অন্যতম দায়িত্ব। কেউ আইন অমান্য করলে সমাজে বিশৃঙ্খলার কারণে স্বাভাবিক জীবনের ব্যাঘাত ঘটে। তাই সুষ্ঠু জীবনযাপন, শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন মেনে চলতে হবে।

সঙ্গে সততা এবং সুবিবেচনার ভোট দেয়া নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত না করে অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ প্রার্থীকে নির্বাচিত করলে দেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।

একটি দেশের আয়ের প্রধান উৎস নাগরিকদের প্রদেয় কর ও খাজনা। দেশের প্রশাসনিক, প্রতিরক্ষা এবং উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। নাগরিকদের কর প্রদান করে দেশের কাজে সহযোগিতা করতে হবে।

প্রত্যেক নাগরিককেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে। তার নিজস্ব সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় অর্জন ও সফলতা এবং সবসময় দেশের মঙ্গল কামনা করা তাদের কর্তব্য।

ভিন্নমতকে মূল্যায়ন করা এবং সম্মান করার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংহতি অর্জন করা এবং বিশ্বাস করা বৈচিত্র্যের মধ্যেই সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে।

প্রত্যেক নাগরিককেই দুর্নীতি এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বেআইনি কোনও কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তবে কোনোক্রমেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। এমনটি হলে সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে না।
এখন যদি জনগণের প্রতিনিধি বেআইনিভাবে বা জনগণের ভোট ছাড়াই ক্ষমতা দখল করে তখন তাদের পক্ষ থেকে কোনোভাবেই সাহায্য পাবেনা। জোর করে জনগণের ভালোবাসা আদায় করা যায় না। আবার দেশের অবকাঠামোতে যদি জনগণের কন্ট্রিবিউশন না থাকে তখন রাষ্ট্র্রের থেকে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

বাংলাদেশে জন্মসূত্রে আনুমানিক ১৭ কোটি মানুষ। তাদের মধ্যে যারা বছরে ন্যূনতম আড়াই লাখ টাকা আয় করে তাদের কর প্রদান করার কথা। সে ক্ষেত্রে ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে যদি আনুমানিক কমপক্ষে ৪ কোটি মানুষ যারা নূন্যতম আড়াই লাখ টাকা আয় করে, তারা যদি সবাই নিয়মানুযায়ী কর দেয়, তাহলে জনগণ তার মৌলিক অধিকার ডিমান্ড করতে পারে।

কর প্রদানে জনগণ তার মৌলিক অধিকার ফিরে পাবে এবং তখন তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেশ চালাবে। প্রশাসন জনগণকে তার বেস্ট সার্ভিস দিতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি মানুষের আয়কর দেয়ার সামর্থ্য রয়েছে এবং তাদের কর দেয়া কর্তব্য। অথচ বর্তমান আয়কর প্রদান করে মাত্র ২২-২৫ লাখ মানুষ। কিভাবে সে দেশের মানুষ তার নাগরিক অধিকার আদায় করবে?

আদর্শ নাগরিক হতে এবং নাগরিকত্বের অধিকার পেতে হলে সর্বপ্রথম কর প্রদান করতে হবে। কর প্রদান করা একটি দেশের মানুষের সাংবিধানিক দায়িত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

সুইডেনে আমরা সবাই নিয়মানুযায়ী কর প্রদান করি যার কারণে আমাদের জীবনের ভ্যালু, নাগরিকত্বের ভ্যালু এবং অধিকার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক উর্ধ্বে।

২০১৮ সালে সুইডেনের মোট লোকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ১২ লাখ। এদের মধ্যে ১৬ বৎসরের ওপর যাদের বয়স তাদের সংখ্যা ছিল ৮৩ লাখ। ৮৩ লাখের মধ্যে ১৩ লাখ মানুষ কর প্রদান করেছে যা মোট লোক সংখ্যার ১৬%। দেশের মোট আয়ের ৪৩.৮% ইনকাম আসে কর থেকে।

বাংলাদেশে কর প্রদানকারীর সঠিক সংখ্যা এবং শতকরা কতজন কর প্রদান করে জানতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। কারণ সুইডেনের মতো করে তুলনা করার মতো তথ্য পেলাম না। ভেবেছিলাম বাংলাদেশ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে বাণিজ্যিক যাত্রায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর পেছনে তাতে এই প্রযুক্তির যুগে সঠিক তথ্য মিলবে কিন্তু মেলেনি!

আমি এখনও আশাবাদী তাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি বাংলাদেশ তার গণতন্ত্র এবং নাগরিক অধিকার ফিরে পাবে যদি ঠিকমতো কর দেয়া শুরু করে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.