259297

ক্লাসে ঘুমান, শিশুদের দিয়ে ‘সিগারেট আনান’ এ প্রধান শিক্ষক

রেজাউল করিম রেজা: শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে সিগারেট আনিয়ে খাওয়া, নিয়মিত স্কুলে না যাওয়া, তার পরিবর্তে বহিরাগতকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানোসহ নানা অভিযোগ উঠেছে জয়পুরহাট ক্ষেতলালের জিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াদুদ ফারুকের বিরুদ্ধে। অভিভাবকরা জানান, স্কুলে পাঠদান ভালো না হওয়ায় আশপাশের বেসরকারি, প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন স্থানীয়রা। জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বে থাকায় কাউকে তোয়াক্কা না করেই এসব অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে জানা যায়, ১৯২৫ সালে শিক্ষানুরাগী মৃত আছির উদ্দিন মুন্সি এলাকার দরিদ্র কৃষকের সন্তানদের নিরক্ষরতা দূর করতে তার নিজের জমি দান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তৈরির উদ্যোগ নেন। এলাকার কিছু দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর ওয়াদুদ ফারুক ১ মার্চ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তারপর থেকে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। প্রধান শিক্ষকের অব্যবস্থাপনা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে সিগারেট-ভাত আনানো, ক্লাস রুমে ঘুমানো, স্কুলে নিয়মিত না আসাসহ নানা কারণে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কয়েক বছর আগে প্রায় পাঁচ শ শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে ১৯১ শিক্ষার্থী নিয়েই চলছে স্কুলের পাঠদান।

স্কুলটির শিশু শিক্ষার্থীরা বলে, ‘ওয়াদুদ স্যার ঠিকমতো ক্লাস করান না, মাঝে মাঝে স্কুলে আসেন, ক্লাসরুমেই তিনি ঘুমিয়ে পাড়েন। আমাদের দিয়ে সিগারেট আনিয়ে খান’। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক নূর ইসলাম, স্থানীয় লিটন, তোয়াব হোসেন, মাহবুব, মেহেদী হাসানসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম চলছে। এখানে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ভালো না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ঠিকমতো স্কুলে আসেন না। ছেলেমেয়েদের দিয়ে সিগারেট আনিয়ে খান। তার পরিবর্তে অন্য একজন মেয়েকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করানো হয়। এখানে এখন পড়াশোনা ভালো হয় না। এ কারণেই আমরা এ স্কুল থেকে আশপাশের প্রি-ক্যাডেট স্কুলে বাচ্চাদের পড়াশোনা করাচ্ছি’। তারা বলেন, ‘ওয়াদুদ মাস্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কে? তার বিরুদ্ধে কথা বলাও সমস্যা’।

জিয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ওয়াদুদ মাস্টারের হাত অনেক লম্বা, আর আপনারা সাংবাদিকরা সামান্য। একজন শিক্ষক যদি মাসের পর মাস ক্লাস না করেন, আমি শিক্ষক হয়েও তাকে খাতির করব না। ষোলো আনার জায়গায় আপনি দুই-চার আনা করেন। এখান থেকেই তো রেজেক, রেজেকটা একটু হালাল করে খান। তিনি (ওয়াদুদ ফারুক) একদিন মাইক্রো নিয়ে আসেন, একদিন গাড়ি নিয়ে আসেন, পরের দিন ক্যাডার নিয়ে এসে সই দিয়ে চলে যান। এর চেয়ে বেশি বলা যাবে না। বললে আমাদের অসুবিধা হবে’।

প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ সময় দায়িত্বে থাকা সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে আমরা বহুবার স্কুলে মিটিং ডেকে রেজুলেশন করার পর ঊর্ধ্বতনকে জানানো হয়েছিল, কোনো ব্যবস্থা হয়নি’। সর্বশেষ সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, ‘এ বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারপর আর কোনো মিটিং না হওয়ায় নতুন কমিটিও হয়নি। তিনি নিজের ইচ্ছামতো স্কুল চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী যা বলেছে তার প্রায় সবই সত্য’।

অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমি স্কুলে থাকাকালীন সে আমার চাপে কিছুটা হলেও নিয়মের মধ্যে চলত। এখন সে-ই তো প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তার মতো করেই চালাচ্ছেন’। শিক্ষক ওয়াদুদ ফারুক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে সিগারেট নিয়ে আসা এটা টোটালি একটা ভিত্তিহীন কথা। স্কুলে নিয়মিত আসি না এটা দেখার জন্য আমার সংশ্লিষ্ট অথরিটি আছে, আমার এখানে অ্যাটেনডেন্স খাতা আছে, আমাদের টিও আছে, এটিও আছে, জেলা শিক্ষা অফিস আছে, কমিটি আছে, এগুলো দেখার তো অনেক লোক আছে। যারা এগুলো বলে সেটা উড়ো কথা’। ক্ষেতলাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. নাদিরুজ্জামান বলেন, ‘জিয়াপুর স্কুলে প্যারা শিক্ষিকার ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি যদি আমরা অভিযোগ আকারে পাই সরকারি বিধান ও ডিপার্টমেন্টের নিয়ম অনুযায়ী আমরা ঊর্ধ্বতনকে জানাব বা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করব’। সূত্র: দেশ রূপান্তর।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.