259392

মুরগির বাচ্চা পালন শুরু স্মার্টফোনের আসক্তি কমাতে 

ডেস্ক রিপোর্ট : ইন্টারনেট জ্বরে ভুগছে বিশ্ব। সবার হাতে এখন স্মার্টফোন। ইন্টারনেটও সহজলভ্য। সময়ে, অসময়ে, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ভার্চুয়াল জগতে ঢুঁ মারা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। ডিজিটাল জগতে মজে গেছে শৈশবও। ক্লাস শেষে আড্ডা আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। মোবাইলে চোখ রেখেই পরিবেশ চিনছে শিশুরা। এই ভয়ঙ্কর রোগ তার শেষ ছোবল মারার আগেই এক অভিনব উদ্যোগ নিল এই দেশের সরকার। শিশুদের ইন্টারনেটে আসক্তি কাটাতে সরকারি প্রচেষ্টা প্রশংসা পেয়েছে গোটা বিশ্বে। দ্য ওয়াল

‘মোবাইলে গেম খেলো না’, ‘পড়া ছেড়ে ইন্টারনেট নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকো না’ ইত্যাদি সাবধানবাণীগুলো এখন ফিকে। ডিজিটাল যুগের শিশুরাও এখন অনেক স্মার্ট। তাই নেশা কাটানোর এক মহার্ঘ্য দাওয়াই খুঁজে বার করেছে ইন্দোনেশিয়া সরকার। পশ্চিম জাভার বানদুং শহরে ইতিমধ্যেই এই কর্মসূচি চালু হয়ে গেছে। সাফল্যের হারও দুরন্ত।

কী সেই উদ্যোগ? বানদুং সরকার ঘোষণা করেছে প্রতিটি স্কুলে বাচ্চাদের মুরগির ছানা দেওয়া হবে পোষার জন্য। মোবাইল ছাড়াতে হাতে ধরানো হবে লঙ্কার বীজ। স্কুলের সিলেবাসেই শেখানো হবে পোষ্যের যত্নআত্তির প্রক্রিয়া। শিক্ষক-শিক্ষাকারা দেবেন সবুজ বাঁচানোর পাঠ। মুরগির ছানার কতটা দেখভাল করছে পড়ুয়ারা সেটাও খোঁজ নেবে স্কুল। তার উপরেই থাকবে নম্বর
প্রাথমিকভাবে বানদুংয়ের ১০টি স্কুলে প্রায় ২০০০ মুরগির ছানা ও ১৫০০ লঙ্কা গাছের বীজ বিলি করেছেন সরকারি আধিকারিকরা। মেয়র ওডেড এম ড্যানিয়েল বলেছেন, ‘‘মাত্র এক সপ্তাহে অবিশ্বাস্য ফল পাওয়া গেছে। দেখা গেছে পোষ্যদের সামলাতে শিশুরা এতটাই ব্যস্ত যে মোবাইলে গেম খেলা ভুলে গেছে। টিভি দেখার বদলে বদলে মুরগির ছানার লালন পালনেই বেশি সময় দিচ্ছে তারা।’’ সরকারি উদ্যোগে খুশি অভিভাবকরাও। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, শিশুদের পড়াশোনাতেও উন্নতি হয়েছে। ইন্টারনেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর বদলে তারা এখন পরিবেশ, প্রকৃতির সান্নিধ্য বেশি পছন্দ করছে। ঠিক সময় ঘুম থেকে উঠে পোষ্যের দেখভাল করে। পড়াশোনা, খাওয়া, ঘুমও সময় ধরে করছে। টিভিতে কার্টুন দেখাও ভুলে গেছে অনেক শিশু। পরীক্ষামূলকভাবে বানদুং-এ শুরু হয়েছিল এই ‘চিকেনাইজেশন প্রোগ্রাম’। এখন গোটা ইন্দোনেশিয়ায় এই কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ইন্টারনেটে আসক্ত শৈশব
ইন্টারনেটে আসক্ত মানুষের শতকরা হিসাবে কোন দেশে কত নম্বরে রয়েছে এই নিয়ে ২০১৬ সালের শেষে অনলাইনে সমীক্ষা চালিয়েছিল প্যারিস কেন্দ্রিক গ্লোবাল মার্কেট রিসার্চ সংস্থা ইপসোস (Ipsos)। দেখা গিয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ভারত। এ দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮২ শতাংশ মানুষই ইন্টারনেটে তীব্র ভাবে আসক্ত। দ্বিতীয় স্থানে ব্রিটেন আর দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দুই দেশেই, ৭৮ শতাংশ ইন্টারনেট জ্বরে ভুগছে। চারে চিন। ৭৭ শতাংশ। পাঁচে ইন্দোনেশিয়া ৭৬ শতাংশ।

গ্লোবাল ডিজিটাল রিপোর্ট ২০১৯ মাফিক ইন্দোনেশিয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকীরার প্রতিদিন ৮ ঘণ্টারও বেশি সময় নেট সার্ফিং, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটিয়ে দেন। এদের মধ্যে স্কুল, কলেজ পড়ুয়াদের সংখ্যা সিংহভাগ। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ইন্টারনেট বা সোশ্যাল সাইটে অতিরিক্ত আসক্তি আসলে একটা রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে Internet Addiction Disorder। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যার মধ্যে প্রায় ২১০ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত।

আমাদের দেশে ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ সার্ভের রিপোর্ট বলছে, ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে থাকা ছেলেমেয়েদের মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৭.৩৯ শতাংশ বেড়েছে। অতিরিক্ত ইন্টারনেটে মজে থাকার জন্য দেশের যুব সম্প্রদায়ের ২০ থেকে ২৫ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে মানসিক বৈকল্যের শিকার হয়ে পড়ছেন। ইন্দোনেশিয়া পেরেছে, আমরা কবে পারব সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.