259430

ইসলামিক বিধান বজায় রেখে সাংবাদিক হয়ে ওঠার যুদ্ধে সাবিহা

ডেস্ক রিপোর্ট : পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ডেরা ইসমাইল খানের গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তির সময় ছাত্রী সাবিহা শেখ তার বোরকা ও নেকাব নিয়ে কিছুই ভাবেননি। ডেইলি বাংলাদেশ

পরে সাবিহা শেখকে তার শিক্ষকরা প্রশ্ন করেন, বোরকা পরা মেয়েরা ভাল সাংবাদিক হতে পারে না, তুমি বোরকা পরে কিভাবে সাংবাদিকতা করবে। পশ্চিমে অনেকে বোরকাকে খারাপ চোখে দেখে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে তোমাকে মানুষের কথা শুনতে হবে।

তখন সাবিহা শিক্ষকদের বলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুধু একজন ভাল সাংবাদিকই হব না, বোরকা পরা মেয়েদের মডেল হবো। পেশাদার সাংবাদিক হতে বোরকা পরা মেয়েদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্মও স্থাপন করব।

২০১৮ সালের মে মাসে সাবিহা শেখ তার বন্ধু, সহপাঠি ও সাংবাদিকতায় স্নাতক সামিরা লতিফকে সঙ্গে নিয়ে বোরকা জার্নালিস্ট গঠন করেন। এ আইডিয়াটি তাদের জন্য সহায়ক হবে যারা রক্ষণশীল মুসলিম পরিবার থেকে এ সাংবাদিকতা পেশায় কাজ করতে চায়।

বোরকা পরা মেয়েদের স্বপ্ন পূরণে সাবিহা শেখ এগিয়ে এসেছেন। আর এ পেশায় স্বপ্ন পূরণ করতে বোরকা পরা মেয়েরা ছুটে আসছে তার কাছে।

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ একটি সামাজিক রক্ষণশীল অঞ্চল, মুসলিমদের বসবাস এখানে। এ অঞ্চলের নারীরা মুসলিম হিসেবে ইসলামের বিধান পর্দা মেনে চলেন। বোরকা পরিধান করেন। বেশিরভাগ মেয়েরাই তাদের মুখ ডেকে ঘর থেকে বের হয়।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বরাতে জানা যায়, এ এলাকায় নারীরা অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের জন্য আলাদা শিক্ষালয় না থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে পড়াশোনা করার অনুমতি দেয় না বলে তারা পড়াশোনা করতে পারে না।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কয়েকটি সংগঠন নারীদের শিক্ষাকে ইস’লামবি’রোধী মনে করে। তারা মেয়েদের যেনো শিক্ষা দিতে না পারে সেজন্য শত শত স্কুল ধ্বংস করে দিয়েছে।

এখন, সাবিহা শেখ ও লতিফা তাদের ক্যামেরার মাধ্যমে বোরকা পরা মেয়েদের জীবনের গল্পগুলো তুলে ধরছেন। খাইবার পাখতুনখোয়ার নারীদের সমস্যাগুলিও তুলে ধরছে।

সাবিহা শেখ এ বিষয়ে বলেন, আমরা বোরকা পরিধান করে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এজন্য আমরা গণমাধ্যমে একটি জায়গা তৈরি করতে চাই যেখানে মুসলিম নারীরা কোনো সমস্যা ছাড়া কাজ করতে পারবেন।

গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ওয়াসিম আকবর শেখ বিশ্বাস করেন, সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা এ জাতীয় কাজ করে বেশি দূর আগাতে পারবে না। এ জাতীয় প্রচেষ্টাও স্থায়ী হবে না। দুঃখজনক বিষয় হল এ সাংবাদিকদের রাজস্ব বা সরকারের কোনো সমর্থন নেই

লতিফা বলেন, আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি আমরা মুসলিম সাংবাদিক মেয়েদের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে, আরো বেশি নারীদের উপস্থিতি প্রয়োজন। আরো অর্থের প্রয়োজন। তবে আমরা আশাবাদী খুব অল্প সময়েই আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ক্যামরা নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য সাবিহা শেখ স্পটে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি জার্নালিজম পড়ার পর চাকরির জন্য অনেক জায়গায় গেলাম, সবাই বলল আপনি নেকাব পরে চাকরি করতে পারবেন না। তখন আমি চিন্তা করলাম এমন একটা নাম দিবো যেনো নামেই মানুষ বুঝে যে বোরকা পরিধান করেই তারা সাংবাদিকতা করে।

আমি যখন এ কাজে নামি আমার মা আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাকে এখন মানুষ সম্মান করেন। আমি চাই জার্নালিজমেও ইসলামের আদর্শ মেনে চলুক মুসলিম নারীরা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.