শ্রীনগরের শ্যামসিদ্ধির উপ-মহাদেশের সব চায়ে উঁচু মঠ
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশের স্থাপত্য শিল্পে সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মাঝে ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুর হলো অন্যতম। ঐতিহ্যবাহী বিক্রমপুরে পুরাকীর্তি ও স্থাপত্য শিল্পের কথা বলতে গেলে শ্যামসিদ্ধির মঠের নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের বেষ্টনীতে আবৃত্ত শ্যামসিদ্ধির মঠটি স্ট্যাচু অব লিবার্টির মতো দাঁড়িয়ে আছে আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য।
ঐতিহ্যবাহী মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের শ্রীনগর থানার অর্ন্তগত শ্যামসিদ্ধি গ্রামে মঠটি অবস্থিত। শ্যামসিদ্ধি গ্রামের ধনাঢ়্য পরিবারের সন্তান শম্ভুনাথ মজুমদার তার স্বর্গগত পিতার স্বপ্নাদেশ পেয়ে তার স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য ১৭৫৮ইং বাংলায় ১২৪৩ সালে মঠটি নির্মাণ করেন। লাল ইটের তৈরী উঁচু মঠটি বাহিরের দিক থেকে দেখতে ঠিক অষ্টাভূজাকার। মঠের সমুন্নত চূড়ার ওপর ছিলো একটি কলস ও ত্রিশূল। কলসটি ভেঙ্গে গেলেও লোহার ত্রিশূলটি এখনো আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে।
শ্যামসিদ্ধি মঠ সমন্ধে বিভিন্ন লেখকদের বই থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মঠটির উচ্চতা প্রায় ২৪০-২৪২ ফুট, প্রত্যেক দিকের বর্গাকার ভূমির দৈর্ঘ্য ২১ ফুট, মঠের ভিতরে ক্ষেত্রফল ৩২৪ বর্গফুট এবং প্রবেশদ্বারের উচ্চতা ২৭ ফুট। মঠটির গায়ে সোনারং অঞ্চলের কিছু স্থাপত্য কর্মের নমুনা আছে যা দেখতে ঠিক ফনা বিশিষ্ট সর্পমূর্তি ও লতাপাতার অলংকরণের নকশা দিয়ে সজ্জিত। অষ্টাভূজাকার দেয়ালের প্রত্যেকটিতেই জানালার মতো প্যানেল আছে সেগুলো খোলা যায় না। বিক্রমপুরের হিন্দু রাজা রায় বংশধররা তাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি রক্ষার্থে এ অঞ্চলে বহুমঠ ও মন্দির নির্মাণ করেন। যেমন- তালতলার ফেগুনাসার মঠ, তাজপুরের সরকার বাড়ির সরকারদের মঠ, সোনারংয়ের মন্দির, আউটশাহীর মঠ, তেহরিয়ার মঠ, মাইজপাড়ার জোড়া মঠ, ষোলঘরের পাকিয়াপাড়ার সাদা মঠ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটির মধ্যে গৌরিপটে একটি শিব লিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত ছিলো। শিব লিঙ্গটির উচ্চতা ছিলো প্রায় ৩ফুট । সনাতন ধর্মালম্বী মানুষ এই মঠটি শিব মন্দির বলে থাকে। মঠটির উঁচু শিখরটির চারপাশে ঘিরে থাকা অনেক ছিদ্র দেখতে পাবেন। যার মধ্যে বাসা বেঁধেছে অজস্র পাখি, সন্ধ্যায় ঝাঁক বেঁধে ফিরে আসে নীড়ে। প্রতি বছর শিব চর্তুদশীতে বহুদূর দূরান্ত থেকে এসে হিন্দু সম্প্রাদায়ের কুমারী মেয়েরা সাতপাক ঘুরে সারারাত শিবের মাথায় জল ঢালেন। তাদের বিশ্বাস শিবের পূজা করলে সুদর্শন স্বামী পাওয়ার যায়।
মঠের একপাশে একটি বিদ্যালয় বিরাজমান, আরেক পাশে বিশাল এক মাঠ। সে মাঠে প্রতি বছর বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিন থেকে বৈশাখী মেলা (গোলইয়া) বসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সে মেলা দেখতে অনেক লোকের সমাগম ঘটে। ফলে শ্যামসিদ্ধি গ্রামটি পরিণত হয় এক মিলন মেলায়। বিক্রমপুরের মানুষ মনে করেন শ্যামসিদ্ধি গ্রামের মঠটি ভারতের দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়ে উঁচু তো বটেই, এটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উঁচু মঠ।
শ্যামসিদ্ধির মঠটি বর্তমানে কৃষ্ণ মন্ডলের স্ত্রী পারুল রানী মন্ডল মঠের পূজার কার্যাদি পরিচালনা করেন। মঠের শিব লিঙ্গটি কালো কষ্টি পাথরের ছিলো ১৯৯৫ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর শিব লিঙ্গটি শেষ দেখা গেছে মঠের ভিতরে। পুরাকীর্তির ঐতিহ্য বহন করা মঠটি দেখার জন্য দেশ তথা বিদেশ থেকে ও অনেক পর্যটক ছুটে আসেন শ্যামসিদ্ধি গ্রামে। সূত্র: আমাদের সময়.কম