260021

জয়গুরু পীর রংপুরে তহশীলদার থেকে, অতঃপর ৪৮ ঘণ্টা

ডেস্ক রিপোর্ট : রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথ গ্রামের শাফিউল হোসেন। ছিলেন ভূমি অফিসের তহশীলদার। ১৯৬৫ সালে মেট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকরিতে যোগ দেন। টানা ৪০ বছর চাকরি শেষে ২০০৬ সালে অবসরে যান। এরপর শাফিউল হোসেন নিজেকে পীর দাবি করে বসেন। তার ছোট নামে যুক্ত হয় বড় তকমা। শাফিউল হোসেন থেকে তিনি হয়ে যান শাহ্ সুফি শাফিউল হোসেন শাফি আল-সুরেশ^রী-আল জাহাঙ্গীর।

কথিত এই পীর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথ গ্রামের বশির উদ্দিনের ছেলে। চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে শাফিউল হোসেন বাড়িতে পীরের আস্তানা গড়েন। সেখানে প্রতি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ঢাক-ঢোলের সাথে হালকায়ে জিকিরের আসর বসাতেন।

নিজেকে পীর দাবি করা শাফিউল হোসেনের ভক্ত (মুরিদ) রয়েছে। গেল বারো বছরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় পাঁচশ’ মানুষ তার কাছ থেকে বায়াত নিয়ে মুরিদ হয়েছেন। সবাই তাকে জয়গুরু বলে ডাকতেন।

তেরাশি বছর বয়সী কথিত এই পীর সোমবার সকালে মারা যায়। এরপর তার দাফন নিয়ে শুরু হয় ব্যতিক্রমি কার্যক্রম। ভক্তরা লাশের পাশে সাউন্ডবক্সে বেহালার করুন সুর বাজিয়ে শুয়ে বসে দাঁড়িয়ে শোকের উন্মাদনা করতে থাকেন।

ভক্তদের দাবি, শাফিউল হোসেন অছিয়ত করেছেন, তার মৃত্যুর ৭২ ঘন্টা পর লাশ দাফন করতে। সেই অসিয়ত অনুসরণ করে পীরের লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ভক্তরা। কিন্তু স্থানীয়দের চাপ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা পর কথিত এ পীরকে কবরস্থ’ করা হয়।

এদিকে মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার সময় বিষয়টি প্রশাসনের লোকজন জানতে পারে। সহকারি ভূমি কর্মকর্তার নেতৃত্বে কাউনিয়া থানা পুলিশ শাফিউলের বাড়িতে অবস্থান নেয়। এসময় শোক প্রকাশে ভক্তদের উন্মাদনা প্রকাশের ব্যতিক্রম এ কার্যক্রম বন্ধ করে দ্রুত লাশ দাফনের চাপ দেয়। কিন্তু এতে আপত্তি তুলে বাক-বিতন্ডর সৃষ্টি করে পীর অনুসারী ভক্তরা। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের চাপ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেলা তিনটার দিকে লাশ দাফন করতে বাধ্য হয় তারা।

পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ দাফনের সময় জয়গুরু জয়গুরু চিৎকারে জিকির তোলেন ভক্তরা। পরে দাফন সম্পন্ন হলে কবরে সেজদা করেন তারা। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থেকে হৈ-চৈ শুরু হলেও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।

আশিকুর রহমান নামে এক মুরিদ বলেন, ‘জয়গুরু আমাদের কাছে একজন আত্মাধিক গুরু ছিলেন। তার পথ অনুসরণ করে আমরা চলব। মৃত্যুর আগে পীর সাহেব অছিয়ত করেছিলেন। কিন্ত প্রশাসন আমাদের জয়গুরুর অছিয়ত পালন করতে দিলেন না।’

কথিত এই পীরের ছোট ছেলে রাউফুল রহমান জানান, ‘তার বাবা শাহ সুফি মতাদর্শের এক সুফি ছিলেন। তিনি মৃত্যুর আগে অছিয়তে তার মৃত্যুর ৭২ ঘন্টা পর লাশ দাফনের কথা বলেছিলেন। লাশের পাশে বেহুলার করুন সুর বাজিয়ে উন্মাদনা প্রকাশের কথা বলেছিলেন। কিন্তু প্রশাসরে চাপে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই লাশ দাফন করতে হয়েছে।’

এব্যাপারে কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘শাফিউল হোসেনের ভক্তরা অছিয়ত মেনেই ৭২ ঘন্টা পর লাশ দাফনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়ায় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে।’ সূত্র : আমাদের ব্রহ্মণবাড়িয়া

পাঠকের মতামত

Comments are closed.