260324

মাউন্টেইন ডিউ ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়!

ডেস্ক রিপোর্ট : এদেশের জনপ্রিয় কিছু খাবার বিশ্বের অন্যান্য দেশে কি-না সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ অন্যান্য দেশগুলোতে তা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ভাবছেন এর কারণ কি? কারণ জানলে হয়তো আপনার পিলে চমকে যাবার মতো হবে।

মাউন্টেন ডিউ 
মাউন্টেন ডিউতে ব্যবহৃত হয় ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েল। নামটি নিরিহ হলেও এর ক্ষতিকারের মাত্রা দেহে অত্যাধিক। ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত যে, এটি মানুষের হাঁটা, মেমরি লস এবং ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে ফেলে। এই উপাদানটি কিছুটা বিষাক্তও বটে। মূলত এটি মাউন্টেন ডিউয়ের অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ সঠিকভাবে তারতম্যের কারণে ব্যবহার করা হয়েছে। ভারত, জাপান, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ে, আরব আমিরাতে এই পানীয়টি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েলের পরিমাণ কমিয়ে এটি তৈরি করা হয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, বাংলাদেশ, জাপানসহ মাত্র কয়েকটি দেশে এটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সমুচা
প্রতিদিন যে সমুচা আপনি খাচ্ছেন সেটিও একটি নিষিদ্ধ খাবার। সোমালিয়ায় সমুচা খাওয়া নিষিদ্ধ। কী দোষ এই সাদাসিধে খাবারটির? আর কিছু না, স্থানীয় দল আল শাহবাবের মতে, সমুচার ভেতরে পঁচা মাংস ভরে দেয়া হয়। আর তাই এটি সোমালিয়ায় নিষিদ্ধ। অনেকে আবার ভেবে থাকেন সমুচার ত্রিকোণ আকৃতিই এর নিষিদ্ধ হওয়ার মূল কারণ। সত্যিই কি তাই? কে জানে!

কাসু মারজু
কাসু মারজু এক ধরণের পনির। ভাবছেন, পনিরের উপরে কেন এই নিষেধাজ্ঞা? কারণ, পনির হলেও অনেক বেশি অস্বাস্থ্যকর আর বিপজ্জনক এই কাসু মারজু। ‘কাসু মারজু’ শব্দের অর্থ পচা পনির। আর বাস্তবেও, এই পনিরে থাকে অসংখ্য জীবন্ত শূককীট। এটি গ্রহণ করলে আপনার মুখের ভেতরে ছোট ছোট জীবন্ত পোকা তো প্রবেশ করবেই, সেই সঙ্গে নানারকম শারীরিক সমস্যাতেও ভুগবেন আপনি। আর তাই ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কাসু মারজুকে।

ক্যাভিয়ার

‘ক্যাভিয়ার’ নামটির সঙ্গে আমাদের অনেকেই কম পরিচিত। আর এর কারণ, ক্যাভিয়ার কেবল দুষ্প্রাপ্যই নয়, বেশ দামিও। তাই এটির স্বাদ পেতে হলে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে আপনাকে। সামুদ্রিক মাছ বেলুগা স্টারগিওনের ডিম থেকে তৈরি হয় ক্যাভিয়ার। বেশ বিরল এই মাছটিকে পাওয়া যায় কেবল আড্রিয়াটিক সাগর, কাস্পিয়ান সাগর এবং ব্ল্যাক সী-তে। একটি কিংবা দু’টি নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্যাভিয়ার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ আর কিছু নয়, বেলুগা মাছের কমে যাওয়ার আশঙ্কাজনক হার। কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জারড স্পিসিস আনুষ্ঠানিকভাবেই বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে সমুদ্রসংলগ্ন দেশগুলোতে ক্যাভিয়ার নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে।

চুইংগাম 

অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হলেও, বাস্তবেই চুইংগামকেও নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। আর একে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। অবশ্য, কেবল চুইংগামই নয়, আরো নানারকম খাবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য বিখ্যাত সিঙ্গাপুর। তবে খাবারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে চুইংগাম। বেশ কয়েক বছর আগেও সিঙ্গাপুরের এখানে সেখানে চুইংগাম লেগে থাকতে দেখা যেত। হাঁটতে গেলেই চুইংগাম লেগে যেত জুতায়। আর এসব ঝামেলা থেকে দূরে থাকতেই এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।

কিন্ডার এগস
কেবল শিশুরাই নয়, বর্তমানে বড়দেরও খুব পছন্দের খাবার কিন্ডার এগস। তবে চকলেটের এই মজাদার খাবারটিকেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে খাবারটির পুরোটাই চকলেটে মোড়া থাকতো আর তার ভেতরেই থাকতো খেলনা। ফলে খেলনা আর চকোলেট অনেক সময় মিশে যেত। সম্প্রতি নিউ জার্সিতে অবশ্য কিন্ডার এগসের বাইরে এক ধরণের আবরণ জড়িয়ে কী করে খেলনা আর চকোলেটকে আলাদা করা যায় সেটার উপায় বের করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কিন্ডার এগের উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে এখনো।

ফোয়ি গ্র্যাস
ফোয়ি গ্র্যাস বেশ আমুদে ধরণের খাবার। অসম্ভব মোটাসোটা আর চর্বিযুক্ত হাঁসের ফুসফুস দিয়ে তৈরি হয় ফোয়ি গ্র্যাস। খাবারটি খেতে মজাদার আর বেশ নরম হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে খাবারটিকে। কারণ, এটি তৈরি করার জন্য হাঁসদের জোর করে অতিরিক্ত মোটা বানানো হয়।

যেটা কিনা অনেক দেশের কাছেই বেশ অমানবিক। ইসরায়েল, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ, ভারত এবং ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই ফোয়ি গ্র্যাসকে নিষিদ্ধ খাবার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু দেশ অবশ্য হাঁসকে অতিরিক্ত মোটা না বানিয়েই ফোয়ি গ্র্যাস বানানোর পদ্ধতি তৈরি করেছে। তবে বাকিদের জন্য খাবারটি এখনো নিষিদ্ধই রয়ে গিয়েছে।

ফুগু মাছ 
মানবিক কিংবা ছোটখাটো শারীরিক সমস্যার হাত থেকে বাঁচার জন্য নয়, জীবন বাঁচানোর জন্যই ফুগু নামের মাছটিকে নিষিদ্ধ করেছে জাপান। সাধারণ কোনো পাচক এই খাবার রান্না করতে পারেন না। অসম্ভব বিষাক্ত এই মাছটিকে খেতে গেলে সেটার ভেতরের সব বিষাক্ত পদার্থ বের করে নিতে হয়। তবে সেটি খুব কঠিন কাজ। এজন্য দরকার পড়ে বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ এবং অভ্যাসের। তারপরেও অনেকে ভুল করে ফেলেন, মৃত্যু হয় মানুষের ফুগু খেতে গিয়ে। আর ঠিক এ কারণেই মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ থেকে জাপানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ফুগু মাছ। মজার ব্যাপার হল, আমেরিকায় মাছটি নিষিদ্ধ না। আর তাই, আমেরিকায় ফুগু মাছ গ্রহণ করে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে বেশি।

হাগিস
মজাদার এই খাবারটি তৈরি হয় ভেড়ার ফুসফুস, শ্বাসতন্ত্র, কলিজা ইত্যাদি দিয়ে। শুনতে গা গোলালেও বাস্তবে খাবারটি বেশ উপাদেয় এবং স্কটিশদের কাছে সবচাইতে সেরা খাবারের মধ্যে অন্যতম এটি। তবে তাতে কী? সব জায়গার মানুষেরই যে খাবারটি ভালো লাগবে, তা তো নয়। আর তাই যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আছে হাগিসের উপরে। সেখানে ভেড়ার শ্বাসতন্ত্র গ্রহণের উপরে নিষেধাজ্ঞা আছে। আর সেজন্যই হাগিসও নিষিদ্ধ খাবার।

কেচাপ
শুনতে হাস্যকর মনে হলেও, ফ্রান্সে কেচাপের উপরে নিষেধাজ্ঞা আছে। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেচাপ গ্রহণ করবে তাদের খাবারের সঙ্গে, তা ভাবাটাও অসম্ভব। ফ্রান্সে এ বয়সী বাচ্চাদের নিজেদের খাবারের স্বাদ শেখানো হয়, নিজেদের রন্ধন পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে পরিচিত করা হয়। তাদের মতে,  এই বয়সে যদি কোনো শিশু কেচাপ দিয়ে খাবার খাওয়া শুরু করে তাহলে সে নিজের দেশ এবং দেশের খাবারের স্বাদ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকবে। ভালোভাবে বুঝতে পারবে না নিজেদের রান্নার স্বাদকে। আর তাই, প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য খাবারে কেচাপ নিষিদ্ধ করেছে ফ্রান্স।

অরটোলান
হাঁসের মতন অরটোলান নামক পাখিটির ক্ষেত্রেও মূল সমস্যা জোর করে খাবার খাওয়ানো। অরটোলান নামক ফ্রেঞ্চ পাখিগুলো এমনিতে তেমন একটা খায় না। তবে আপনি যদি তাকে অন্ধকারে রেখে দেন আর তার সামনে খাবার রাখেন। সে একটু একটু করে যতটাই খাবার দেবেন সেটা খেয়ে নেবে এবং মোটা হয়ে উঠবে। তবে কেবল এটুকুই নয়, অরটোলান খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আরো কারণ আছে। আর কারণটি হল একে খাওয়ার প্রক্রিয়া। অরটোলান পাখিদের খাওয়ার আগে তাদেরকে একটা ছোট অন্ধকার বাক্সে অনেকটা খাবার সহ ভরে দেয়া হয়। পুরোটা খাবার খেয়ে ফেললে তারপর পাখিগুলোকে আরম্যাগনাক ব্র্যান্ডিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। তারপর খাবার জন্য উপযুক্ত হলে খাদ্যগ্রহণকারীর মাথার উপরে একটা কাপড় দিয়ে ঢেকে খাওয়া শুরু করা হয়। বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না যে, কেন অরটোলানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

খামারের স্যামন মাছ
সাধারণ স্যামন মাছ নয়, বলা হচ্ছে খামারে জন্ম নেওয়া স্যামন মাছের কথা। সাধারণত, খামারে স্যামন মাছেদের গোলাপি আভা দেওয়ার জন্য রাসায়নিক পদার্থ এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এ কারণে বেশ বিষাক্ত হয়ে যায় স্যামন মাছেরা। আর এই কারণেই নিউজিল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া এবং রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে খামারের স্যামন মাছ।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.