260365

ভিপি ‍নুরের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেত্রী রিপা একজন!

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ ঘটনায় ভিপি নুরসহ অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। হামলার ভিডিওতে এক উত্তেজিত তরুণীকে লাঠি হাতে দেখা যায়। তিনি হলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমাতুজ জুহরা রিপা। তার এমন ঘটনায় নিজ শহর রামগঞ্জসহ সারাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা নিন্দার ঝড় তুলছেন।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে মোবাইলে কথা হলে লাঠি হাতে থাকা তরুণী নিজেই বলে স্বীকার করেছেন ফাতেমাতুজ জুহরা রিপা।

তার দাবি, নিজের নিরাপত্তার তাগিদে লাঠি হাতে তুলে নিয়েছি। শিবির-ছাত্রদল ঠেকাতে, তবে কারও ওপর হামলা করতে নয়। ভিপি নুরের সঙ্গে থাকা বহিরাগত ছাত্রদল-শিবিরের নেতাকর্মীরা আমাদেরকে গালমন্দ করেছেন। এজন্য লাঠি হাতে তাদের ধাওয়া করেছিলাম।

এদিকে, ডাকসু ভিপি নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার পর থেকে লাঠি হাতে রিপার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিজের ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ করে রাখেন নিপা।

এ অবস্থায় তার নামে (Fatema Ripa) একটি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ খুলে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে লাঠি হাতে ছবিগুলো দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। ওই পোস্টগুলোতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন। এতে অনেকেই রিপোর্ট দিয়ে আইডি, পেইজ ও গ্রুপগুলো বন্ধের অনুরোধ করেছেন।

রিপা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভার বাঁশঘর এলাকার বাসিন্দা ও রামগঞ্জ মডেল কলেজের অনার্সের ছাত্রী। একই পেইজ ও গ্রুপ থেকে রিমান্ডে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য ও মেহেদি হাসান শান্তকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। নুরদের ওপর হামলায় ঘটনায় এরা ৩ জন রিমান্ডে রয়েছেন।

ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। এতে অংশ নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও। এ ঘটনায় মঙ্গলবার শাহবাগ থানার নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ রইচ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, হত্যার চেষ্টায় দেশীয় অস্ত্রে নুরদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।

মামলায় আটজনের নাম উল্লেখসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি এ এস এম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এ এফ রহমান হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসিম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে অস্থায়ী বহিষ্কৃত), জিয়া হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম মাহিম ও মাহবুব হাসান নিলয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামুন, বুলবুল গ্রুপের ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে টেলিনর কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি বরাবর উকিল প্রদানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে মামুন ও বুলবুলের নেতৃত্বে ৩৫-৪০ জন নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

তবে আসামিদের মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে রিপার নাম নেই। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ থানায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরুর দায়েরকৃত অভিযোগপত্রে ৩২ নম্বরে রয়েছে রিপার নাম।

এ বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল হাসান ফয়সাল বলেন, রিপা স্থানীয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। লাঠি হাতে তার ছবিগুলো দেখেছি আমরা। এমন কাজ করা ঠিক হয়নি তার।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রামগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির একটি অনুষ্ঠানে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় এমপির সঙ্গে সভা মঞ্চে ওঠা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নেমে যেতে বলা হয়। ওই সময় সবাই নামলেও নামেননি রিপা। তখন রিপাকেও নেমে যেতে বলা হয়। পরে ফেসবুক লাইভ এসে কান্নাকাটি করে ভাইরাল হন রিপা। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ হয়।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.