260463

অহেতুক কখনোই কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিবেন না

ডেস্ক রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রে এক বরফ শীতল রাতে, এক কোটিপতি তার ঘরের সামনে এক বৃদ্ধ দরিদ্র মানুষকে দেখতে পেলেন। তিনি বৃদ্ধ মানুষটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, বাইরে এত ঠাণ্ডা আর আপনার গায়ে কোনো গরম কাপড় নেই, আপনার কি ঠাণ্ডা লাগেনা?

বৃদ্ধ লোকটি উত্তর দিল, আমার কাছে গরম কাপড় নেই কিন্তু আমি মানিয়ে নিয়েছি।

কোটিপতি বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। আপনার জন্যে দেখি কোনো গরম কাপড় পাই কি না!

বৃদ্ধটি খুব খুশি হয়ে অপেক্ষায় থাকল।

কোটিপতি তার বাড়িতে ঢুকলেন এবং ব্যস্ত হয়ে পড়লে এবং দরিদ্র বৃদ্ধটির কথা ভুলে গেলেন।

সকালে তার মনে হলো সেই দরিদ্র বৃদ্ধের কথা। তিনি সাথে সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন বৃদ্ধকে খুঁজতে। দেখলেন বৃদ্ধ মানুষটি ঠান্ডার জমে মরে পড়ে আছে। তার হাতে একটি চিরকুটে লিখা ছিলো – ‘যখন আমার কোন উষ্ণ কাপড় ছিল না, তখন ঠান্ডার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা আমার ছিল কারণ আমি মানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আপনি আমাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিলেন, তখন আমি আশান্বিত হয়ে উঠলাম এবং তীব্র ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম। কাউকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার আগে ভাবুন এবং অহেতুক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি থেকে বিরত থাকুন। (ফেসবুক থেকে পাওয়া)

অহেতুক প্রতিশ্রুতি প্রতারণায় পরিণত হলে অন্যের অধিকার দারুণভাবে খর্ব হয়। নৈতিক, ধর্মীয় ও মানবিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়। সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মানুষের নেকআমলকে ধ্বংস করে এবং তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত করে। অথচ হরহামেশা আমরা সমাজে সর্বত্রই মানুষের কথাবার্তায়, কাজকর্মে, লেনদেনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিদেশ গমনে এমনকি রাজনীতিতেও বিভিন্নভাবে প্রতারণার উদাহরণ দেখতে পাই।

ইসলামে ধোঁকা ও প্রতারণার কোনো স্থান নেই। কোনো মুসলমান ধোঁকা দিতে পারে না। ধোঁকা মুনাফেকের স্বভাব। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে প্রতারণার জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময় মুনাফেকরা মুখে বলতো আমরা আল্লাহকে, আল্লাহর নবীকে এবং এই কুরআনকে মানি কিন্তু তারা বাস্তবে তা মানতো না। যার ফলে আল্লাহতায়ালা এই আয়াত নাজিল করেন: ‘এমন কিছু লোক আছে যারা বলে আমরা আল্লাহকে এবং শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করি। প্রকৃতপক্ষে তারা বিশ্বাস করেনি, তারা আল্লাহকে ও মুমিন বান্দাদেরকে ধোঁকা দিতে চায়। (সত্য কথা এই যে) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না। এবং তাদের এই বিষয়ে কোনো উপলব্ধি নেই।’(সূরা বাকারা : ৮-৯)

আমরা প্রত্যেকে দিনে অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখতে পারি কখনো কাউকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি কি না। বন্ধু বন্ধুকে, স্বামী স্ত্রী, সহপাঠী সহপাঠীনিকে এমনকি আল্লাহকে বান্দা হিসেবে। আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছি তা পূরণ করতে পারছি কি না যথাসময়ে। কারণ কুরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, তারা যদি তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। তিনিই নিজ সাহায্যে মুমিনদের দ্বারা তোমাকে শক্তিশালী করেছেন। (সূরা আনফাল : ৬২)

আমরা যতই প্রতিশ্রুতির মুখোশ পড়ে থাকি কি না, লেনেদেনে, ওঠাবসায়, সবখানে দুটি আয়াতে আল্লাহতায়ালা ধোঁকাবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় তারা মুখের কথার মাধ্যমে আল্লাহ ও মুমিন বান্দাকে ধোঁকা দিতে চায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেরাই ধোঁকার শিকার হয়েছে। কেননা, এ ধোঁকার পরিণাম তাদের জন্য অশুভ হবে। তারা মনে করছে নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে তারা কুফরের পার্থিব পরিণতি থেকে রক্ষা পেয়েছে। অথচ আখেরাতে তাদের জন্য কঠিন আজাব অপেক্ষা করছে। নবী করীম (সা.) ধোঁকা ও প্রতারণাকারী সম্পর্কে কঠোর বাক্য উচ্চারণ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ধোঁকাবাজ ও প্রতারণাকারী জাহান্নামে যাবে। -বায়হাকি

প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অন্তরে মজবুত ঈমান লালন করা, এজন্যে প্রতিনিয়ত চর্চা করা। ঈমানের কথা প্রকাশ করা ও সে অনুযায়ী আমল করা। মনে রাখতে হবে, মুখে এক কথা আর অন্তরে আর এক কথা- এটা কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না। এ লেখার শুরুতে গল্পের সেই ধনী লোকটির মত যেনো কারো অবস্থা না হয়। যাকে খুশি ইচ্ছে মত দেদারছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলাম, রাখতে পারলে রাখলাম না হলে রাখলাম না এটা হতে পারে না। এটা মানুষের প্রতি মানুষের অপেক্ষার প্রহরকে শুধু দীর্ঘায়িত করে না মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসকে বিনষ্ট করে। মানুষ হিসেবে আমার, আপনার এবং প্রত্যেকের কখনোই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ঠিক নয়।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.