260435

বিস্ময় শিশুর ধমকে চমকে গেল বিশ্ব!

ডেস্ক রিপোর্ট : দাবদাহে জ্বলছে পৃথিবী। পুড়ছে বন-জঙ্গল। গ্রীষ্মকালে অতীব গরম, শীতকালে অতিরিক্ত শীত। গ্রিনহাউস গ্যাস লাগামহীন বৃদ্ধির ফলে গলে যাচ্ছে মেরুর বরফ। ক্রমশ বেড়ে চলেছে সমুদ্রের জল।

দূষণের মাত্রা বাড়ছে প্রতিদিন। কিন্তু জলবায়ু ও পরিবেশের সংকটের দিকে খেয়ালই নেই বিশ্বের নেতাদের। জেগেও যেন ঘুমিয়ে তারা।

কিন্তু হঠাৎই এক বিস্ময় শিশুর ধমকে চমকে গেল বিশ্ব। মোহনিদ্রা টুটে গেল সবার। সেই বিস্ময় শিশু আর কেউ নয়, সে গ্রেটা থানবার্গ। সুইডিশ কিশোরী।

‘জলবায়ু বাঁচাও’ স্লোগানে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতা ও তাবৎ রথী-মহারথীকে উদ্দেশ করে তার সেই ‘হাউ ডেয়ার ইউ’ গর্জন।

হতভম্ব হয়ে যান সামনে বসা তাবড় তাবড় সব বিশ্বনেতারা। হিংসায় মুখ ভেংচি কাটেন জলবায়ু নীতি বিরোধী বিশ্বমোড়ল ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেদিন গ্রেটার এই গর্জন চাবুকের মতো আছড়ে পড়ছিল। এখনও তা বিশ্ববাসীর কানে বাজছে। গ্রেটার প্রেরণায়ই জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে জরুরি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এর বিরূপ প্রভাব ও ক্ষতি এড়ানোর বিষয়টিকে চলতি বছর সামনে নিয়ে আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ। তার উদ্যোগেই প্রায় সারা বছর জলবায়ু বিক্ষোভে উত্তাল ছিল সারা বিশ্ব।

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা তা অতীতের তুলনায় অত্যন্ত দ্রুতগতির। যেমন : উনিশ শতকের তুলনায় বর্তমানে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।

আর এর পেছনের মূল কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের আধিক্য, যা তৈরি করছে গ্রিনহাউস এফেক্ট। গ্রিনহাউস এফেক্ট দ্রুতগতিতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে। অতিরিক্ত শিল্পকারখানা, জ্বালানি হিসেবে তেল ও কয়লার ব্যবহার, নগরায়ণ, বন উজাড় ও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুততর হচ্ছে।

জলবায়ুর সব উপাদান একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত। যে কোনো একটির পরিবর্তন অন্যান্য উপাদানকেও প্রভাবিত করে। যেমন : বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় দুই মেরু অঞ্চলের হিমশৈলসহ গলে যাচ্ছে বরফের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এমনকি প্রথমবারের মতো গলতে শুরু করেছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ এবং সেটা ধারণার চেয়ে দ্রুতগতিতে।

বিপুল পরিমাণ কার্বন ধারণ করে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতি খানিকটা শ্লথ রাখা বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজন নিজেই এখন জ্বলছে। চলতি বছর আমাজন রেইন ফরেস্টে ৭২ হাজার ৮৪৩টি দাবানলের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় যা ৮৩ শতাংশ বেশি এবং ২০১৩ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।

ফলে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। কিন্তু এ ব্যাপারে যাদের ভাবার কথা সেই বিশ্বনেতারা একেবারে উদাসীন। তারা আছে তাদের ক্ষমতা আর রাজনীতি নিয়ে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরিত দেশগুলো পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পায়ন যুগ-পূর্ব তাপমাত্রার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নিরাপদ তাপমাত্রার বৃদ্ধি ধরা হয় দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস। লক্ষ্য অর্জনে নেতারা প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল।

কিন্তু জাতিসংঘের ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এ নিয়ে একটি বোমা ফাটিয়েছে। এক রিপোর্টে সংস্থাটি জানায়, পৃথিবীর তাপমাত্রা ইতিমধ্যে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।

২০১৮ সালে আইপিসিসির আরেক রিপোর্টে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেগুলো আসলে কাজে আসছে না। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিকে এগোচ্ছে। আর এই তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রিতে পৌঁছায়, তাহলে তা ভয়ংকর হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের এ সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব যখন ব্যর্থ তখন জলবায়ু পরিবেশ বাঁচানোর প্রত্যয় নিয়ে সামনে আসে গ্রেটা থানবার্গ। শুরুতে একাই লড়াই শুরু করে সে। কিন্তু জলবায়ু নিয়ে গভীর জ্ঞান, তার কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে কথা বলার ধরন ও তার দুটো বুদ্ধিদ্বীপ্ত চোখ দ্রুতই বিশ্ববাসীর নজর কাড়ে।

বিমানে চড়লে পরিবেশ দূষণ হয় বলে নৌকায় করে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেয় সে। এতে তার দুই সপ্তাহ সময় লাগে। আজ জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে যে স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, দেশে দেশে লাখো লাখো মানুষের বিক্ষোভ তা তার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহেই।

তার অনুপ্রেরণায়ই গত ২০ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর ৪০০ শহরে পালিত হয় ‘জলবায়ু ধর্মঘট’। এ জন্য সবার মুখে মুখে সে এখন পরিচিত ‘জলবায়ুকন্যা’ হিসেবে।

নিউইয়র্কে জলবায়ু সম্মেলনেই এই কিশোরীর এক অন্যরূপ দেখে বিশ্ববাসী। চোখে-মুখে আত্মপ্রত্যয়ের ছাপ। সঙ্গে তীব্র ক্ষোভ। মাত্র ১৬ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ ঝড় বইয়ে দেয়।

পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বিশ্বনেতাদের উদাসীনতায় রাষ্ট্রনায়কদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেন ঘৃণামিশ্রিত সাহসী বাক্য- কি সাহস আপনাদের! আমাদের স্বপ্ন ও শৈশবকে হরণ করেছেন… কি সাহস আপনাদের। এরপর সে তীব্র ক্ষোভ আর ঘৃণা উগরে দিয়ে বলতেই থাকে। বাস্তব সত্য হল- আপনারা আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।

আমরা এখন আপনাদের বেইমানি বোঝা শুরু করেছি…। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চোখ এখন আপনাদের ওপর। আপনারা আমাদের রক্ষায় ব্যর্থ হলে মনে রাখবেন, আপনাদের আমরা কখনও ক্ষমা করব না। সূত্র : যুগান্তর

পাঠকের মতামত

Comments are closed.