260471

ভীষণ গোনাহের কাজ কর্মস্থলে ফাঁকি দেয়া

ডেস্ক রিপোর্ট : মানবজীবনের ব্যাপ্তি যতখানি ইসলাম ঠিক ততখানি এবং ইসলামের দাবি হলো অংশবিশেষ নয় সম্পূর্ণটা মানা। আমাদের লেনদেন, ব্যবসাবাণিজ্য, চাকরি, আচার-আচরণসহ সবক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে এবং তা মেনে চলা নামাজ-রোজার মতোই ফরজ।

যেমন একজন ব্যবসায়ী অবশ্যই সঠিক পরিমাপ ছাড়াও কোনো ধোঁকা প্রতারণার আশ্রয় নেবে না, ভেজাল দেবে না, ফরমালিন মেশাবে না। তদ্রুপ একজন চাকরিজীবী কেবল সময় মতো অফিসই করবে না, সেই সঙ্গে সে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে এবং যে কাজ আধা ঘণ্টায় সম্ভব সে কাজে কখনোই এক ঘণ্টা লাগাবে না। আর তা করা হলে সেটা হবে প্রতারণা। আর ঘুষ নেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। ঘুষ হলো জ্বলন্ত আগুন ভক্ষণ করার শামিল। ঘুষদাতা ও গ্রহীতা জাহান্নামি।

বর্তমান সময়ে অফিস-আদালতে ফাঁকি দেয়া একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ইসলাম এভাবে অফিস ফাঁকি দেয়াকে আমানতের খেয়ানত (আত্মসাৎ) বলে অভিহিত করেছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব প্রদান করি, সে যদি এক টুকরো সুতা বা তার চেয়েও কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে।’

ইসলামে কথা হলো, কর্তব্যকর্মে ফাঁকি দেয়া ব্যক্তি নিজেকে কখনও পূর্ণ মুসলমান বলে দাবী করতে পারে না। কারণ কর্মস্থলে বিলম্বে উপস্থিতি আর মসজিদে নামাজের জামাতে বিলম্ব দু’টোতেই গোনাহ রয়েছে। তবে গোনাহের পরিমাণ কোনটাতে বেশি সেটা বলা মুশকিল। কারণ মানুষকে পূর্ণাঙ্গভাবে আল্লাহর আনুগত্যের মাঝে নিয়ে আসার জন্য ফরজ করা হয়েছে নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো আনুষ্ঠানিক ইবাদতসমূহ। নামাজের জন্যও নামাজ নয়, আবার রোজার জন্যও রোজা নয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী হলো, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’

এই অনুভূতির প্রেক্ষিতেই মানুষ মুয়াজ্জিনের আজান শোনে ছুটে যায় মসজিদ পানে এবং মসজিদে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করে যে সে একজন মুসলিম। হাত বেঁধে অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ের সাথে ওয়াদা করে যে, ‘আমরা কেবল তোমারই অানুগত্য করি এবং তোমারই নিকট সাহায্য চাই।’

এভাবে শুধু একবার দু’বার নয়, নানা কর্মব্যস্ততার মাঝে বারবার মসজিদে এসে তাকে একই প্রতিশ্রুতি প্রদান করতে হয়। এবার আপনিই বলুন, এ মুমিন কিভাবে আল্লাহর নাফরমানি করবে? লজ্জা বলতে তো কিছু আছে। বারবার আল্লাহর আনুগত্যের কথা স্মরণ করে দেয় বলেই নামাজকে জিকির বলা হয়েছে। এ নামাজের মধ্য দিয়েই বান্দা সারাক্ষণ আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহর ভাষায়, ‘তোমরা নামাজ সমাপনান্তে রুজির জন্য বেরিয়ে পড়ো আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’ অর্থাৎ আমি যে কাজই করি না কেন সে কাজে আল্লাহর দেয়া নিয়ম ও বিধি-বিধান অনুসরণ করার নামই আল্লাহর স্মরণ। এ স্মরণ সর্বক্ষণ-সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা শোয়া, বসা ও দণ্ডায়মান অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো।’ বস্তুত মানুষ এ তিন অবস্থার বাইরে থাকতে পারে না। আমরা এটা জানি, নামাজ মানুষকে বারবার আল্লাহর আনুগত্যের কথা স্মরণ করে দেয়। দুনিয়ার কেউ দেখে না, দেখেন কেবল আল্লাহ। গোপন ও প্রকাশ্য সব বিষয়ে আল্লাহ অবহিত এ বোধ উপলব্ধি সৃষ্টিকে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় বলা হয়। আর যার মধ্যে আল্লাহর স্মরণ ও তাকওয়া আছে তার দ্বারা আল্লাহর নাফরমানি বা গোনাহের কাজ অসম্ভব। সুতরাং সে কীভাবে অফিস ফাঁকি দিবে? কারণ, ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত সম্পদ তো হারাম, আর হারাম খাদ্যে গঠিত দেহ দ্বারা পালিত কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.