নতুন বছরে সৌভাগ্য বয়ে আনে কচি বাঁশ, এ যেনো এক নতুন প্রথা!
নতুন বছর উদযাপনে ব্যস্ত বিশ্ববাসী। ২০২০ সালে সবারই কিছু না কিছু চাওয়া বা স্বপ্ন রয়েছে। আর সেই স্বপ্ন পূরণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশে রয়েছে নানা প্রথা। এমনই কিছু অদ্ভূত প্রথার চিত্রে তুলে ধরা হলো-
লাল অন্তর্বাস
ইতালিতে রোমান্টিক পুরুষরা তাদের প্রেমিকা বা স্ত্রীকে লাল রঙের অন্তর্বাস উপহার দেন। আর এই লাল পোশাক পরে নারীরা সৌভাগ্যকে কাছে টানার আকাঙ্খায় নববর্ষকে বরণ করেন। তবে মজার ব্যাপার হলো- এই অন্তর্বাস শুধু বছরের শেষ রাতে বা একবার পরার জন্যই কেনা হয়। কারণ সে দেশের রীতি অনুযায়ী পরের দিন সকালেই এই পোশাক ফেলে দেয়া হয়।
কেকের ভেতরে এক পয়সা
নতুন বছরের জন্য একটি কেক বানানো হয় আর সে কেকের ভেতর দেয়া হয় এক পয়সার একটি কয়েন। কেক খাওয়ার সময় কয়েনসহ কেকের টুকরোটি যার মুখে পড়বে, তাকেই সবচেয়ে সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন গ্রিকরা।
বারো মিনিটে ১২টা আঙুর
৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার ঠিক ১২ মিনিট আগে, যে ব্যাক্তি ১২টা আঙুর খেতে পারবে, নতুন বছর তার জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করেন স্প্যানিশরা।
মধ্যরাতে লোকসঙ্গীত ও হুইস্কি
স্কটল্যান্ডে আতশবাজির ঝলকানি আর পুরুষরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে প্যারেড করে ৩১ ডিসেম্বর ‘হোগমানেই’ উৎসব পালন করে৷ মধ্যরাতে লোকজন দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লোকসঙ্গীত গায়। বিশ্বাস করা হয়, তারা সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছে এবং সম্ভব হলে তাদের এক বোতল হুইস্কি দিতে হয়।
মধ্যরাতে সমুদ্র স্নান
মধ্যরাতে সমুদ্র সৈকতগুলোতে হাজার হাজার ব্রাজিলিয়ান সাদা পোশাক পরে গোসল করেন, ঝাঁপ দেন। পানিতে ঝাঁপ দেয়া প্রতিটি তরঙ্গের সঙ্গে নতুন বছরের জন্য কিছু কামনা করতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন তারা। এছাড়া নববর্ষের আগের দিন ব্রাজিলিয়ানরা সাগরের দেবীকে সম্মান জানাতে পানিতে ফুল ছোড়েন এবং ঐতিহ্যগতভাবে নববর্ষকে বরণ করতে ব্রাজিলে সাদা পোশাক পরা হয়।
মধ্যরাতে চেয়ার থেকে লাফিয়ে পড়া
ডেনমার্কের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায় রানি দ্বিতীয় মার্গ্রেট নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান। তার ওই ভাষণ সব রেডিও ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। অনেকে মধ্যরাতে চেয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে নতুন বছরে প্রবেশ করেন।
সৌভাগ্য সাঁতরে পালাবে!
অস্ট্রিয়ায় নতুন বছরে ওয়াল্টজ্ নাচে অংশ নেয়া ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়াও সেখানে ‘সুইট ফিশ’ নামে মাছের আকৃতির একটি বিস্কুট খাওয়ার রেওয়াজ আছে, যেটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক ভাবা হয়। তবে মাছের পাখনা খাওয়া যাবে না, তবেই না-কি সৌভাগ্য সাঁতরে পালাবে বলে বিশ্বাস করা হয়।
প্রেতাত্মা ও দৈত্যদের তাড়াতে
সুইজারল্যান্ডে ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জোরে জোরে ড্রাম বাজিয়ে চিৎকার করতে করতে প্যারেড করা হয়। তাদের বিশ্বাস এভাবে শব্দ করে তারা প্রেতাত্মা ও দৈত্যদের তাড়াতে পারবে। তবে দেশটিতে আতশবাজি পোড়াতে খুব একটা দেখা যায় না। বরং ডিনারে ঐতিহ্যবাহী খাবার খান তারা।
ছোট ছোট উপহার
জার্মানিতে নতুন বছরে লোকজন ছোট ছোট উপহার বিনিময় করেন। এছাড়াও সীসার তৈরি কোনো ছোট মূর্তি গলিয়ে তা পানিতে ছুড়ে মারতে মারতে আসছে বছরের সৌভাগ্য কামনা করতেও দেখা যায়। এছাড়া চার পাতার ছোট গাছও উপহার হিসেবে দেয়া হয়।
শ্যাম্পেইন ও ওয়াইন
ফরাসিরা ভালো খাবার, শ্যাম্পেইন ও ভালো মানের ওয়াইন খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। এখানেও আতশবাজি পোড়ানোর খুব একটা চল নেই। চেক প্রজাতন্ত্রেও শ্যাম্পেইন ঝাকিয়ে এবং স্যান্ডুইচ খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়। মধ্যরাতে প্রাগে আতশবাজি পোড়ানো হয়।
নাচ
প্রেতাত্মাদের তাড়াতে নতুন বছরে বুলগেরিয়ার লোকজন প্রচণ্ড শব্দ করে। প্যারেডে পুরুষরা সাধারণত দানবের মুখোশ ও গোল পোশাক পরেন। নতুন বছরে প্রচুর ফসল কামনায় এই নাচ করা হয়।
বাড়ির সবগুলো পানির কল খোলা থাকে
তুরস্কে নতুন বছরে ‘ফাদার নোয়েল’ শিশুদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন। বড়রা বাড়ির সবগুলো পানির কল খুলে রাখেন। বিশ্বাস করা হয়, নতুন বছরে সৌভাগ্য কলের পানির সঙ্গে ভেসে আসবে।
বাঁশ
চীনে কচি বাঁশকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়ে থাকে এবং প্রিয়জনদের সৌভাগ্য কামনা করে এই ‘লাকি ব্যাম্বুস’ উপহার দিয়ে থাকেন। তবে চীনাদের বাঁশ গাছ উপহার দেয়ার প্রভাব আজকাল জার্মানদের মধ্যে চোখে পড়ে। তাই নববর্ষের আগে জার্মানির ফুলের দোকানগুলোতে এই গাছ দেখা যায়।
জুয়া
অনেক গ্রিকের কাছে ৩১ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা মানে শুধুই জুয়া খেলা। বিশ্বাস করা হয়, এই রাতে যিনি খেলায় জিতবেন তিনি নতুন বছরে ধনী হবেন এবং যিনি হেরে যাবেন তার জীবনে ভালোবাসা আসবে৷ বেকারিগুলোতে পাউরুটির মধ্যে কয়েন লুকিয়ে রাখা হয়, যিনি ওই কয়েন পাবেন তিনি নতুন বছরে লাখপতি হবেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ