260977

সব হারানোর স্মৃতি ভুলে আজ হুইলচেয়ারের মতোই ঘুরে চলেছে তাদের প্রেমের চাকা

ডেস্ক রিপোর্ট : দু’জন পঙ্গু মানুষ কীভাবে একসঙ্গে সংসার করতে পারে? এই প্রশ্নটিই উদয় হয়েছিল পারভীনের মনে। তবে মনিরের ভালোবাসা তিনি ফিরিয়ে দিতে পারেননি।

মনির ও পারভীনের ভালোবাসা যেন হার মানায় লায়লী-মজনুর প্রেম কাহিনীকেও। সব হারানোর স্মৃতি ভুলে আজ হুইলচেয়ারের মতোই ঘুরে চলেছে তাদের প্রেমের চাকা। আর সঙ্গী হয়েছে খুনসুটি।

মাত্র নয় বছর বয়সে মনির হোসেন সিকদারের জীবন যেন থমকে যায়! ২০০৯ সালে রাজধানীর এক ৫ তলা বাড়ির এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফিয়ে পার হতে গিয়ে নিচে পড়ে যান। অন্যদিকে গার্মেন্টসে আগুন ধরলে প্রাণে বাঁচতে ৬ তলা থেকে নিচে ঝাঁপ দেন পারভীন আক্তার। নিজেদের ভবিষ্যত শেষ হয়ে গেছে ভেবে যখন আশা ছেড়ে দিয়েছেন তখন পারভীন ও মনিরের দেখা হয় সাভার সিআরপিতে। ২০১০ সালে প্রথম পরিচয় হয় তাদের। এরপর তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পরে বিয়ে করেন তারা।

কীভাবে হুইলচেয়ারের দুই আরোহী প্রেমে পড়লেন, কীভাবেই বা সংসার করছেন তার? নিজেদের ভালোবাসা আর মান-অভিমান নিয়ে গল্প করেছেন এই দম্পতি।

পারভীন জানান, মনির যখন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তখন তিনি ভেবেছিলেন কীভাবে সম্ভব? কিছুদিন পর পারভীনও জানালেন তার মনের কথা। তারা দুই বছর প্রেমের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে মনিরের বাবা চাইতেন মনির সুস্থ স্বাভাবিক কোনো মেয়েকে বিয়ে করুক। মনির কিন্তু রাজি হননি। কারণ নিজে পঙ্গু হয়ে একজন সুস্থ স্বাভাবিক নারীকে বিয়ে করলে সে মনিরের মতো হতো না।

তাদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতো। সে হয়তো তার ওপর দয়া করতো। মনির ও পারভীনের মধ্যকার ভালোবাসার সম্পর্কে অগাধ। কেউ কাউকে দয়া করে না। মনির বলেন, সে আমাকে বুঝে আমিও তাকে বুঝতে পারি। অপরদিকে একই প্রশ্নের জবাবে পারভীন বললেন, আমি চাইলে একজন সুস্থ ছেলেকে বিয়ে করতে পারতাম। সে আমার টাকার লোভে আমাকে বিয়ে করতো ঠিকই কিন্ত সে হয়তো একসময় আমাকে ছেড়ে চলে যেতো।
সম্প্রতি বিবিসি’র এক সাক্ষাৎকারে মনির হোসেন জানান তাদের প্রেম, বিয়ে আর নিত্যদিনের খুনসুটির গল্প। মনিরের ভাষায় ৩৬৫ দিনের মধ্যে তারা ৩০০ দিনই টুকিটাকি ঝগড়া করতেন। পারভীন আক্তার বেশি রাগ করলে কথা বলেন না তিনি, চুপ করে থাকেন। তারা জানান, তাদের এ ঝগড়াটি বেশিক্ষণ থাকে না। কয়েক মুহূর্ত বা কয়েক মিনিটেই ঠিক হয়ে যায় সব। এই দম্পতি তাদের বিবাহিত জীবনে সুখী।

সিআরপিতে প্রায় ১০ বছর চিকিৎসা শেষে এখানেই চাকরি এবং বসবাস করছেন তারা। এই দম্পতির সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার। বাইরে তেমন একটা ঘুরতে যাওয়া হয় না। তাদের সুস্থতার জন্যই একটু বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, তাই সংসারের কাজে সময় বেশি লাগে। পরিবারের সব কাজ তারা ভাগ করে নিয়েছেন। দু’জন মিলেই সংসারের সব কাজ করেন।

হুইলচেয়ারে বসে মনির হোসেন শিকদার বিশেষ কায়দায় কাপড় ধুয়ে থাকেন। কারণ মনির অন্য কারো হাতের কাপড় ধোয়া পছন্দ করেন। সে বাথরুমও পরিষ্কার করেন এবং মাঝে মাঝে ঘরও মোছেন। পারভীন আক্তারও হুইলচেয়ারে বসেই ঘর সাজান। এমনকি স্বামীর পছন্দের গরুর মাংস বা সেমাইও রান্না করেন।

মনির বলেন, কাপড় ধোয়ার পর তা ভাঁজ করার দায়িত্ব পারভীনের। কেন না সে খুব ভালোভাবে কাপড় ভাঁজ করতে পারেন। এভাবেই খুনসুটি, ঝগড়ায় প্রায় আট বছর ধরে ঘর-সংসার করছে এই দম্পতি। তারা দু’জনেই চায় আল্লাহ তাদের পরিপূর্ণ বুড়ো অবস্থায় যাওয়ার আগেই যেন মৃত্যু দেয়। কারণ তারা কারো উপর বোঝা হতে চান না। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.