260993

প্রচণ্ড শীতেও মায়ের ঠাঁই হলো না ঘরে, ঠাঁই মিলল গোয়ালঘরে গরুর সঙ্গে!

ডেস্ক রিপোর্ট : মাকে বোঝা মনে করে গোয়ালঘরে রেখেছেন ছেলেরা। প্রচণ্ড এ শীতে একটি কম্বলও দেননি তারা। অভাগা এ মায়ের নাম হাজেরা বেগম। ময়মনসিংহের উপজেলার গফরগাঁও ইউপির উথুরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার সকালে কাউসার খান নামে এক যুবক কম্বল দিতে গিয়ে তাকে গোয়ালঘরের মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার প্রতিবাদ করায় ‘আমার মাকে যেখানে খুশি রাখব তাতে তোর কি’ বলে কাউসারকে অপমান করেন হাজেরার ছেলে আব্দুস সাত্তার।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মুখলেছুর রহমান খোকা জিজ্ঞাসা করলে আব্দুস সাত্তার ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। খবর পেয়ে গফরগাঁও থানার এসআই নাজিম উদ্দিন হাজেরার দুই ছেলে আব্দুস সাত্তার ও উজ্জলকে আটক করে।

উপজেলার গফরগাঁও ইউপির রেসমত আলী প্রায় ১৬ বছর আগে মারা যাওয়ার সময় ১২ কাঠা জমি স্ত্রী হাজেরা বেগমকে লিখে দেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর চার ছেলে কিছুদিন মাকে ভরণপোষণ দেন। পরে গোপনে ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম মায়ের কাছ থেকে জমি লিখে নেন। খবর পেয়ে অন্য ছেলেরা মায়ের খোঁজখবর নেয়া বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় সাইফুলের বাড়িতে আশ্রয় নেন হাজেরা। কিন্তু জমি লিখে নেয়ার পর থেকে তিনিও মায়ের সেবা-যত্নের প্রতি উদাসীন ও অবহেলা করতে থাকেন। তিন বেলার মধ্যে এক বেলা খাবার দেন। কখনো হাজেরা বেগম ক্ষুধায় কাতরালেও খাবার না দিয়ে উল্টো বকাঝকা ও মারধর করতেন সাইফুল ও তার স্ত্রী। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও ছেলেদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

গত বছরের মে মাসে একদিন হাজেরা বেগম ভাতের জন্য ‘বাবারে কয়ডা ভাত দে, আর যে পারি না, জানডা বারইয়া যাইতাছে’ বলে কান্নাকাটি শুরু করলে সাইফুল ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বাড়ির সামনে সড়কের পাশে ফেলে রাখেন। এভাবে টানা তিনদিন হাজেরা সড়কে ছিলেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ওই সময় গফরগাঁও থানার তৎকালীন ওসি আব্দুল আহাদ খান হাজেরার ছেলেদের আটক করেন। পরে ছেলেরা কথা স্বীকার করে মায়ের সেবা-যত্ন করার মুচলেকা দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বাড়ি নিয়ে যান। চার ছেলে আলোচনা করে তিন মাস করে মায়ের খাওয়া-দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করেন।

সর্বশেষ হাজেরার আশ্রয় হয় বড় ছেলে আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে। কিন্তু সাত্তার প্রচণ্ড শীতে মাকে বসতঘরে না রেখে গোয়ালঘরে গরুর সঙ্গে রেখে আসেন।

স্থানীয় যুবক কাউসার খান বলেন, অসহায় বৃদ্ধা হাজেরা বেগমকে একটি কম্বল দিতে গিয়ে গোয়ালঘরে দেখে আব্দুস সাত্তারকে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি আমার প্রতি ক্ষিপ্ত হন। উল্টো আমাকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে অপমান করেন।

গফরগাঁও থানার ওসি অনুকূল সরকার বলেন, এ ঘটনায় দুই ছেলেকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.