261382

কিশোরের ঘাড় ছিদ্র করে ফেলল সমুদ্র থেকে লাফিয়ে ওঠা মাছ

ডেস্ক রিপোর্ট : সমুদ্রে বন্ধুর সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন মুহম্মদ ইদুল। তখন পানি থেকে লাফিয়ে উঠা একটি মাছের আঘাতে তার ঘাড় ছিদ্র হয়ে যায়। সেই অবস্থাতেই তিনি সাঁতরে তীরে পৌঁছে হাসপাতালের দিকে ছোটেন। এভাবেই নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার এই কিশোর।

সূচের মত তীক্ষ্ণ মাথার একটি ‘নীডলফিশ’ সমুদ্র থেকে লাফিয়ে উঠে ১৬ বছর বয়সী মুহম্মদ ইদুলের ঘাড় এফোঁড়-ওফোঁড় করে ফেলে এবং সেই মাছের ধাক্কায় নৌকা থেকে পানিতে পড়ে যান তিনি। জীবন বাঁচাতে ওই অবস্থাতেই তীরের দিকে সাঁতার শুরু করেন এবং তীরে পৌঁছে হাসপাতালের দিকে দৌড় শুরু করেন।

মুহম্মদ ইদুল যে হাসিখুশি অবস্থায় বেঁচে আছেন এবং সবাইকে তার গল্প বলতে পারছেন, সেই কৃতিত্বের অধিকাংশই তার উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন বন্ধু ও হাসপাতালের যত্নশীল চিকৎসকদের পাওনা।

ওই ঘটনার পাঁচদিন পর মুহম্মদ ইদুল বন্ধু সার্দির সঙ্গে রাতে মাছ ধরতে সমুদ্রে যাওয়ার পরের ঘটনা বিবিসিকে জানান।

তিনি বলেন, সার্দির নৌকা আগে রওনা করে, তারপর আরেকটি নৌকায় যাই আমি। সৈকত থেকে প্রায় আধা মাইল দূরে যাওয়ার পর সার্দি নৌকার ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে দেয়। সেসময় হঠাৎ একটি নীডলফিশ পানি থেকে লাফিয়ে উঠে আমার ঘাড়ে তার সুঁচালো ঠোঁট ঢুকিয়ে দেয়।

তিনি জানান, সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার পানিতে পড়ে যান তিনি। মাছটি তখনও তার ঘাড়ে আটকে রয়েছে। মাছের সরু, লম্বা ও তীক্ষ্ণ মুখাগ্র তার চোয়ালের নিচের দিক দিয়ে ঢুকে মাথার পেছনের ভাগ দিয়ে বের হয়ে ছিল তখন। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, মাছটি সে অবস্থাতেও পানির মধ্যে পালানোর জন্য ছটফট করছিল এবং ইদুল তার ঘাড়ের ভেতর অনুভব করতে পারছিলেন মাছের ছটফটানি।

এসময় ইদুল মাছটি শক্ত করে ধরে রাখেন এবং বন্ধু সার্দির কাছে সাহায্য চান।

ইদুল বলেন, সার্দি আমাকে বলে মাছটিকে যেন ঘাড় থেকে বের না করার চেষ্টা করি, তাহলে রক্তপাত বেড়ে যাবে। ইদুল ও তার বন্ধু সার্দি দুইজনই তখন সাঁতরে তীরে চলে আসেন। পুরোটা সময় মুহম্মদ ইদুল প্রায় আড়াই ফিট লম্বা মাছটি হাত দিয়ে ধরে রাখেন যেন সেটি বেশি নাড়াচাড়া করতে না পারে।

এরপর ইদুলের বাবা সাহারউদ্দিন দ্রুত বাউ-বাউ’এর একটি হাসপাতালে নিয়ে যান ছেলেকে। হাসপাতালে যেতে তাদের গ্রাম দক্ষিণ বুটন থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাগে। কিন্তু ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা মাছটি কাটতে পারলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় মুহম্মদ ইদুলের ঘাড় থেকে মাছের ঠোঁট বের করতে পারেনি। যার ফলে ঠোঁটটি আটকে ছিল মুহম্মদ ইদুলের ঘাড়েই। ঘাড় থেকে মাছের ঠোঁটটি বের করতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ সুলাওয়েসির রাজধানী মাকাসারের কেন্দ্রীয় হাসপাতালে। সেই আধুনিক ওয়াহিদিন সুদিরোহুসোদো হাসপাতালের কর্মীরাও এই দৃশ্য দেখে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন।

হাসপাতালের পরিচালক খালিদ সালেহ জানান, এ ধরণের ঘটনা এই প্রথমবারের মত দেখেছেন তারা। মাছের ঠোঁটটি ইদুলের ঘাড় থেকে বের করতে পাঁচজন বিশেষজ্ঞের এক ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রপচার করতে হয়েছে।

ঘটনার পাঁচদিন পর মুহম্মদ ইদুলের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা হয় তখন তিনি যথেষ্ট সুস্থ। তার ঘাড়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তিনি তখনও ঘাড় পুরোপুরি ঘোরাতে পারছেন না, তবে তার মুখে হাসি।

হাসপাতালের পরিচালক খালিদ সালেহ জানান, ইদুলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাকে কয়েকদিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। তবে সে এখনই তার গ্রামে ফিরে যেতে পারবে না, কারণ তার আরো বেশকিছু পরীক্ষা করতে হবে।

তবে এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটলেও মুহম্মদ ইদুলের মাছ ধরার শখ কিন্তু আগের মতই রয়েছে।

ইদুল বলেন, পরেরবার থেকে আমার আরেকটু সতর্ক থাকতে হবে। নীডলফিশ আলো সহ্য করতে পারে না। তাই আলো জালার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি লাফিয়ে পানির ওপর উঠে আসে। সূত্র : আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

পাঠকের মতামত

Comments are closed.