আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল উহান শহর
ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দিন দিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। মৃতের সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যাও। ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে সেখানকার মানুষদের। বিশেষ করে বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে করোনাভাইরাসের উৎসস্থল উহানে। সেখানকার একেকটি রাতকে ৩৬৫ দিনের সমান বলে উল্লেখ করেছেন সেখানে বসবাসরত এক বাংলাদেশি।
গতকাল সোমবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজের একটি স্ট্যাটাসে একথা বলেন উসাই মারমা নামে ওই বাংলাদেশি। তিনি লিখেন, ‘বর্তমানে উহান শহরের এক একটা রাত ৩৬৫ দিনের সমান।’
এমন স্ট্যাটাস দেখার পর উহানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও জানতে উসাই মারমার সঙ্গে দৈনিক আমাদের সময়-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, কেমন আছেন? উত্তরে তিনি জানান, ‘আমরা আসলে খুব আতঙ্কে আছি।’
চীনের এমন পরিস্থিতিতে দেশে আসবেন কিনা-জানতে চাইলে উসাই মারমা বলেন, ‘আমাদের শহরের (উহান) সঙ্গে অন্যান্য শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এমনকি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়াও নিষিদ্ধ। উহান শহরটি পুরো বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তিনি জানান, উহানে বর্তমানে প্রায় ৯০ লাখের মতো মানুষ ঘরবন্দী। এদের মধ্যে বিদেশি রয়েছে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজারের মতো। বেশির ভাগ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। সবাইকে বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছে উহানের স্থানীয় সরকার।
উহানে আটকা পড়া বাংলাদেশিদের সম্পর্কে জানতে চাইলে উসাই মারমা বলেন, এই মুহূর্তে উহান শহরে প্রায় ৩০০-এর বেশি বাংলাদেশি আটকে আছেন। এদের অনেকেরই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তবে বাংলাদেশিরা বেশির ভাগই দেশে ফিরতে চায়।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দুটি হটলাইন খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া নিয়মিত বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান উসাই মারমা।
তিনি আরও জানান, দেশে ফেরার বিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশের। কিন্তু তারা এই মুহূর্তে ছাড়তে চাচ্ছে না। তারা সেটিকে বড় ঝুঁকি মনে করছে।
ইতিমধ্যে চীন সরকার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন শহর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স উহান শহরে পৌঁছেছে। তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর বর্তমানে ২ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট নতুন দুটি হাসপাতাল তৈরি করছে চীন, যেটি ১০ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা বলেও জানান উসাই মারমা।
তবে ভয়ংকর এই ভাইরাস দেশটির সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এখন অনেক দেশেই। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং, ম্যাকাউ, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সেও প্রাদুর্ভাব ঘটেছে এই ভাইরাসের।
সবশেষে তথ্য অনুযায়ী, চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৩ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য কমিশন। সূত্র : আমাদের সময়