261535

যেখানে ভয়াবহ এক অপরাধ সন্তান জন্ম দেয়া

ডেস্ক রিপোর্ট : এমন কোনো শহর বা গ্রামের কথা শুনেছেন যেখানে শিশুর জন্ম নেয়া পাপ! কোনো নারীই গর্ভবতী ও সন্তান প্রসব করতে পারবে না, এমনই রীতি রয়েছে এক গ্রামে।
দক্ষিণ ঘানার একটি গ্রাম মাফি ডোভ। সেখানে বসবাস করেন প্রায় পাঁচ হাজার অধিবাসীরা। আর ওই গ্রামটিতেই সন্তানের জন্ম দেয়া এক অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত। এমনকি ঋতুস্রাবের সময়ও নারীরা এলাকার বাইরেই থাকেন।

ঘানায় বসবাসরত অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে মাফি ডোভের প্রচলিত রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য। যা প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে তাদের সমাজে। এই জাতির তিনটি বিশেষ রীতিই তাদেরকে বিশ্বের অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা করেছে। যা সবার কাছেই অদ্ভূত বটে!

মাফি ডোভের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো সেখানে কোনো পশু নেই। এমনকি একটি পাখি পর্যন্ত উড়ে না সেই অঞ্চলের উপর দিয়ে। কারণ শিকারিদের রয়েছে তীক্ষ্ণ নজর। মাফি ডোভে পশু পালনও নিষিদ্ধ। মজার বিষয় হলো, গ্রামটিতে কোনো প্রাণী আসলেই তা শিকার করে ততক্ষণাৎ জবাই করে পেটপূজো করে অধিবাসীরা।

এই গ্রামের দ্বিতীয় আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো, সেখানে কোনো সমাধিস্থল নেই। সেখানকার কেউ মারা গেলে অন্য সম্প্রদায়ের কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। মাফি ডোভ সম্পর্কিত তৃতীয় আশ্চর্যের বিষয়টি অত্যন্ত বর্বরতম আচরণ। গ্রামটিতে সন্তানের জন্ম নিষিদ্ধ। এছাড়াও ঋতুস্রাবের সময় এলাকার বাইরে গিয়ে থাকে হয় নারীদের।

ঋতুস্রাবের সম্ভাব্য তারিখের আগে তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামে বা শহরে চলে যান। ঠিক একইভাবে যদি কোনো নারী ভুলবশত গর্ভবতী হয়ে পড়েন অতঃপর তাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে বা শহরে স্থানান্তরিত করা হয়। সন্তানের জন্মের পর তবেই তারা গ্রামে ফিরে আসেন।
কারণ মাফি ডোভের পরিবেশ ও অনিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন গর্ভের সন্তানের জন্য সুখকর নয়। সেখানকার গর্ভবতী মা ও শিশু হামেশাই অপুষ্টির শিকার হয়ে থাকে। এর ফলে সুস্থ সন্তান জন্ম নেয়ার আশঙ্কা অনেক কম। এছাড়াও জন্ম দিতে গিয়ে অনেক নারীই মৃত্যুবরণ করেন।

এজন্যই এলাকাবাসী গর্ভবতী নারীদের প্রসবের অন্তত ২ মাস আগে পার্শ্ববর্তী এলাকায় বা শহরে স্থানান্তরিত করে। এছাড়াও ওই এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে সন্তান জন্ম দিতে মায়েরা পাড়ি জমান অন্য এলাকায়।
পুরোপুরিভাবে প্রসব রোধ করা প্রায় অসম্ভব। মাফি ডোভের প্রবীণরাও এটি স্বীকার করেন যে, গ্রামে শিশু জন্মের ঘটনা ঘটেছে। তবে, সেগুলো বিরল। এমন অবস্থাকে তারা দেবতার ক্রোধ হিসেবে বিবেচনা করেন। আর এ কারণেই গর্ভবতী মায়েরা সন্তানের জন্মকে ভালো চোখে দেখেন না। এ কারণেই অপুষ্টির শিকার হয়ে অসুস্থ নবজাতক জন্মগ্রহণ করে।

তবে কেউ যেন গর্ভধারণ না করে সে বিষয়ে কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া রয়েছে এলাকায়। গ্রামে যে নারী সন্তান প্রসব করে স্থানীয়রা তাকে অপরাধী বলে ডেকে থাকে। মাফি ডোভের অস্বাভাবিক রীতিনীতির মূল কারিগর হলেন গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা, টোগবে গেবোওফিয়া আকিতি নামক এক শিকারির।
গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ এই ব্যক্তির মতে, তিনি যখন মাফি ডোভে প্রথম পা রাখেন তখন আকাশ থেকে একটি অলৌকিক আওয়াজ শুনেন। এটি একটি পবিত্র এবং শান্তিপূর্ণ জায়গা, এখানে থাকতে হলে তিনটি নিয়ম মানতে হবে- কোনো প্রাণী লালন, সমাধি এবং প্রসব করা যাবে না।

সেখানকার প্রবীণদের মতে, যে এলাকায় শয়তানের বসবাস সেখানে কোনো উন্নতি হয় না। তারা জানান, এই তিন নিয়ম মানার কারণেই আমাদের মধ্যে কোনো রক্তারক্তি, হানাহানি ও কলহ নেই। আমরা এসব নিয়ম মানতে পেরে সত্যিই গর্বিত।
বর্তমানে অবশ্য সেখানকার অনেক নারীরা এলাকার পাশেই একটি ক্লিনিক তৈরির সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। তবে তাতে নারাজ প্রবীণরা। তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সেখানকার দীর্ঘকালীন এই নিয়মের বিষয়ে।

সূত্র: অডিটিসেন্ট্রাল

পাঠকের মতামত

Comments are closed.