261642

মারিয়ম ৩৭ বছর বয়সেই ৩৮ সন্তানের জননী!

ডেস্ক রিপোর্ট : সন্তানের মা হওয়া প্রত্যেক নারীর কাছেই এক সৌভাগ্যের বিষয়। একটি জীবনকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার মতো ক্ষমতা শুধু নারীর শরীরেই থাকে ৷ তবে এ ক্ষমতার জেরেই মাত্র ৩৭ বছরে ৩৮ টি সন্তানের মা হয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন এক নারী। তিনি উগান্ডার কামিবিরি গ্রামের নাবাতানজি মারিয়ম।

মাত্র তিন দিন বয়সে মারিয়মকে ফেলে রেখে চলে যায় তার মা। এরপর তার বাবা অনেকগুলো বিয়ে করে। একদিন মারিয়মের সৎ মা খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকেসহ চার ভাইবোনকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। এতে তার ভাইবোনেরা ঘটনাস্থলে সবাই মারা যায়। তবে সৌভাগ্যক্রমে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। তারপর থেকে দাদির কাছেই বড় হয় মারিয়ম। ১২ বছর বয়স হলে তাকে জোর করেই বিয়ে দেন তার দাদি।

১৯৯৩ সালে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ১৯৯৪ সালে ১৩ বছর বয়সে প্রথম মারিয়ম যমজ সন্তানের জন্ম দেন। যমজ সন্তান পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন মারিয়ম। ৩৮ বছরের জীবনে মরিয়ম ছয় বার যমজ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। চার বার জন্ম দিয়েছেন তিনটি করে সন্তান আর তিন বার চারটি। বাকি বছরগুলোতে তিনি একটি করে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

মারিয়ম তার বাবা সম্পর্কে বলেন, আমার বাবা অনেকগুলো বিয়ে করেছেন। তার সন্তানের সংখ্যা ৪৫ জন। আমার সৎ মায়েদেরও এক সঙ্গে ৪টি, তিনটি ও দুটি করে সন্তান হয়েছে। এরপর টানা চার বার তিনি যমজ সন্তানের জন্ম দেন। মারিয়ম বুঝতে পারেন কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। তিনি চিকিৎসকের কাছে যান।

চিকিৎসক তাকে জানান, তার ডিম্বাশয়ের আকার অত্যন্ত বড় এবং তিনি নিজেও উর্বর। এই অবস্থায় যদি তার জন্ম নিয়ন্ত্রণের অপারেশন করা হয়, তাহলে তার ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হতে পারে। কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধও তার জন্য মারাত্মক হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না মারিয়ম। এরইমধ্যে তিনি ৮ সন্তানের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। স্বামীকে বিষয়টা জানান।

বারবার এভাবে একাধিক সন্তানের জন্ম দেয়াটা বন্ধ হওয়া উচিত বলেও জানান মারিয়ম। তবে স্বামী তার কথায় একেবারেই কান দেননি। এরপর তিনি চার বার এক সঙ্গে তিন সন্তান এবং পাঁচ বার এক সঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দেন মারিয়ম। ১৮ বছর আগে শেষ বার মা হয়েছেন মারিয়ম। সে বারো যমজ সন্তানের জন্ম দেন। তাদের মধ্যে একজন মারা যায়। এরপরই তাকে বাড়ি থেকে বার করে দেন তার স্বামী।

সব মিলিয়ে মোট ৪২ সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে তাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে ৩৮ জন। বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর ৩৮ সন্তানকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে তাকে যেন দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ভাগ্য। ৩৮ সন্তানকে ভালো শিক্ষা-খাবার কীভাবে দেবেন সেটাই তাকে দীর্ঘদিন ভাবিয়েছে। তবে হাল ছাড়েননি তিনি।

তখন তার দাদি অনেক সাহায্য করেছিলেন। কামপালার উত্তরে ৫০ কিলোমিটার দূরে কফি বাগান দিয়ে ঘেরা একটা ছোট গ্রামে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। এ বাড়িটি তাকে দাদিই করে দিয়েছেন। ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন মারিয়ম। নানা রকম কাজ করে সংসার চালান তিনি।

মারিয়ামের দিনের শুরু হয় কাপড় ধোয়া দিয়ে। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে এতগুলো সন্তানের ময়লা হওয়া কাপড়গুলো ধুতে যান মারিয়াম। কাপড়গুলো ধুতে ধুতেই সকালের নাস্তার সময় হয়ে যায় তার। এর মধ্যে গৃহস্থালীর অন্য কাজগুলোও সারেন। নাস্তার সময় সব ছেলেমেয়েদের গোল করে বসান। একবারে কিনে আনা রুটি দিয়ে তাদের হয় না। একাধিকবার দোকানে যেতে হয়।

তারপর বাচ্চাদের স্কুলে পাঠান। এরপর চলে দুপুরের খাবারের আয়োজন। এসব কিছুতেই সময় চলে যায় মারিয়মের। একটুও বিশ্রামের উপায় নেই তার। বড় ছেলে চার্লস মুসিসি (২৩) বলেন, আমাদের বড় হওয়ার ক্ষেত্রে বাবার কোনো আদর পাইনি। সব পেয়েছি মায়ের কাছে। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমার ভাইবোন জানে না বাবা কী জিনিস। আমি তাকে সর্বশেষ ১৩ বছর বয়সে দেখেছিলাম। তিনি শুধু রাতে আসেন।

মারিয়ম জানান, পরিবারের জন্য দিনে ২৫ কিলোগ্রাম ভুট্টা লাগে। আর্থিক অনটনের জন্য মাছ-মাংস রান্না হয় না বললেই চলে। বড়রা রান্না এবং ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে। কোনো দিন কে কোন কাজটা করবে, তার একটা রুটিন ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে। এছাড়াও মারিয়মের ঘরের দেয়ালে সব সন্তানদের ছবি টানানো রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা পড়াশোনা অনেক দূর পর্যন্ত করেছে, তাদের গলায় সোনালি চকচকে মালাও পরিয়ে রেখেছেন মারিয়ম।

ঙ্ক্ষীও এসে খাবার দিয়ে যান। সৌভাগ্যবশত তার কিছু ছেলেমেয়েকে সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ দিয়েছে।

মারিয়াম বলেন, আমি আমার খাবারের জন্য সংগ্রাম করি। আমার ছেলেমেয়েদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য আমার চেষ্টার কোনো কমতি রাখি না। জীবন সংগ্রামী এ নারী বলেন, আমি কষ্ট করে আমার ছেলেমেয়েদের মানুষ করছি। তারা স্কুলে যায়। আমার আশা একদিন তারা ডাক্তার, শিক্ষক ও ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমি এটা শুধু প্রত্যাশা করি, কিন্তু এটি বাস্তবে হবে কিনা তা জানি না। সূত্র : ডেইলি বাংলাদেশ

পাঠকের মতামত

Comments are closed.