261728

‘ভারতের দিকেও চোখ রাঙাচ্ছে করোনাভাইরাস’

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের হুবেইপ্রদেশের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হয়ে নতুন ধরনের প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে আরও অন্তত ২৪টি দেশে। সংক্রমণের ভয়াবহতার কারণে ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাস ঘিরে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিছুটা দেরিতে হলেও বাংলাদেশের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী দিল্লিতে গত এক সপ্তাহে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ১৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে। একই সন্দেহে উরিষ্যার কটকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৮ জনকে। পশ্চিমবঙ্গে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৪ জন রয়েছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে। তবে সবচেয়ে আতঙ্কে আছে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা।

গত সোমবার রাজ্যটিতে ৩ শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। খুব দ্রুত সেখানে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে তা মহামারীর রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর। ইতোমধ্যেই রাজ্য সরকার একে ‘বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর মধ্যেই করোনা আতঙ্কে চীনের কোনো নাগরিককে আপাতত দেশে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত সরকার বিবৃতি জারি করেছে, গত ১৫ জানুয়ারির পর থেকে এখন পর্যন্ত চীনা নাগরিক কিংবা দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিদের যেসব ভিসা দেওয়া হয়েছে তা আর ‘বৈধ’ নয়। নির্দিষ্ট ওই দিনের আগে যেসব চীনা নাগরিক ভারতীয় ভিসা করেছেন তাদের আর ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শুধু চীনা নয় চীন থেকে ভারতে আসতে চাচ্ছেন এমন বিদেশি নাগরিকদের কাছে ভিসা থাকলেও তা ‘অবৈধ’ বলে গণ্য হবে।

আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, চীনের উহান থেকে যাদের ফিরিয়ে এনে দিল্লি থেকে কিছুটা দূরে মানেসরের নজরদারি কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৫ জনকে সেনাবাহিনীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণগুলো ওই ৫ জনের শরীরে দেখা গেছে। উহান থেকে ইতোমধ্যেই ছয়শর বেশি ভারতীয়কে এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি বিমানে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দিল্লিতে গত এক সপ্তাহে ১৩ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে।

সরকারি সূত্রের খবর, দিল্লিতে সেনাবাহিনীর হাসপাতালে যে ৫ জনকে ভর্তি করা হয়েছে, বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য তাদের রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে। তার মধ্যে একজনের রক্ত পরীক্ষার ফলে জানা গেছে, তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি। বাকি ৪ জনের রক্ত পরীক্ষার ফল এখনো জানা যায়নি।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণকে ‘রাজ্যের বিপর্যয়’ বলে ঘোষণা করেছে কেরালা। এর ফলে এ সংক্রমণ মোকাবিলায় বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে রাজ্যটির সরকার। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেরালা পুলিশও পাবে বাড়তি ক্ষমতা। সংক্রমণ মোকাবিলায় কেরালায় গঠন করা করেছে আলাদা টাস্ক ফোর্সও। ওয়ান ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, সোমবার রাজ্য সরকারের জারি করা একটি বুলেটিনে জানানো হয়েছে, যে তিন শিক্ষার্থীর শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তাদের অবস্থা সন্তোষজনক আছে। এখন পর্যন্ত চীনের উহান ভ্রমণ করা মোট ২২৩৯ জনকে চিহ্নিত করে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ২১৫৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনের অধীনে এবং ৮৪ জনকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালের ভিন্ন ওয়ার্ডে।

এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় নিজেদের ভুল আর ঘাটতির কথা স্বীকার করে নিয়েছে চীনের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিবিসি জানায়, সোমবার চীনের দ্য পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি বলেছে, জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের আরও উন্নতি করতে হবে। এর মধ্যে বন্যপ্রাণীর বাজারে বড় ধরনের অভিযান চালানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সোমবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২৫ জনে। এর মধ্যে শুধু একদিনেই তিন হাজার মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী সোমবারই হুবেইপ্রদেশে মারা গেছে ৬৪ জন। সূত্র : আমাদের সময়

পাঠকের মতামত

Comments are closed.