261956

করোনাভাইরাসের থাবা পড়েছে দেশের কাঁকড়া ব্যবসার উপর

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচটি জেলার হাজার- হাজার খামারে চাষ হওয়া শিলা কাঁকড়া রপ্তানিতে ধস নেমেছে। উৎপাদিত এসব শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হতো চীনে। করোনাভাইরাসের কারণে ২৩ জানুয়ারি থেকে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

একদিকে প্রধান আমদানিকারক দেশ চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ, অন্যদিকে শীতকালের শেষে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ পাঁচ পিপিটির নিচে নেমে যাওয়ায় মরতে শুরু করেছে খামারের কাঁকড়া। কেজি প্রতি তিন হাজার টাকা শিলা কাঁকড়া এখন ছয় থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই অবস্থায় চরম আর্থিক মুখে পড়েছেন কাঁকড়া খামারীরা।

মৎস্য বিভাগের হিসেবে গত অর্থবছরে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচটি জেলা ছাড়াও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৯ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে ১১ হাজার ৭৮৭ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুঁচে উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বাগেরহাটসহ সুন্দরবন সন্নিহিত পাঁচটি জেলায় উৎপাদিত বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। এর মধ্যে গত অর্থ বছরে ১১ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুঁচে রপ্তানি করে দেশ আয় করে প্রায় ২১৮ কোটি টাকা।

বাগেরহাট সদরের বিষ্ণপুর গ্রামের সোহবার হোসেন, মোংলার কানাইমারী গ্রামে অনিল মন্ডল ও রামপালের পেড়িখালী গ্রামের শিলা কাঁকড়া খামারী কবির হোসেন জানান, তারা এক-একজন থেকে এক থেকে দুই হেক্টর জমির খামারে রপ্তানি শিলা কাঁকড়া চাষ করে এবার বিপাকে পড়েছেন। চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর ২৩ জানুয়ারি থেকে চীন শিলা কাঁকড়া আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯ ও ২০ জানুয়ারি বড় সাইজের এক কেজি শিলা কাঁকড়া তারা তিন হাজার টাকায় ডিপো মালিকদের কাছে বিক্রি করলেও এখন তা বর্তমানে ছয় থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শিলা কাঁকড়া উৎপাদন ভালো হলেও করোনাভাইরাসের কারণে চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব খামারীদের মতো হাজার-হাজার কাঁকড়া চাষি চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই অবস্থায় ব্যাংক ও এনজিও থেকে লোন নিয়ে কাঁকড়া চাষ করা চাষিদের সর্বস্বান্ত হবার উপক্রম হয়েছে।

রামপালের কাঁকড়া ডিপো মালিক আ. রাজ্জাক জানান, বাগেরহাট জেলার চাষিদের খামারগুলোতে উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৩ জানুয়ারি থেকে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় তারা আর কাঁকড়া বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। চীনে রপ্তানি বন্ধের আগে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকায় কেনা কাঁকড়া নিয়ে এখন আমরা আশঙ্কায় রয়েছি। খামার থেকে তোলার পর কাঁকড়া ২৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই অবস্থায় খামারীদের পাশাপাশি আমরা ডিপো মালিকরাও চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। এখন বড় সাইজের কাঁকড়ার দাম কমে যাওয়ায় আরো ক্ষতির আশংকায় কোন ডিপো মালিক আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে সে দামেও কাঁকড়া কিনছে না।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনক জানান, বাগেরহাটের ৭টি উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষিদের ৩ হাজার ৭৭৮টি খামারে সনাতন ও আধুনিক বক্স পদ্ধতিতে শিলা কাঁকড়া ও কুঁচে চাষ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় বাগেরহাট জেলায় প্রতিবছর শিলা কাঁকড়া ও কুঁচে চাষের জমি ও খামারের সংখ্যা বাড়ছে। গত অর্থ বছরে বাগেরহাটের খামারীরা ২ হাজার ৬২৯ মেট্রিক টন শিলা কাঁকড়া উৎপাদন করে। এ বছর উৎপাদন ভালো হয়েছিলো। ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই সময়ে খামারগুলোতে পূর্ণ বয়স্ক পেটে ঘিলু ভরা শিলা কাঁকড়া পাওয়া যায়।

এই জেলায় উৎপাদিত শিলা কাঁকড়ার ৭০ ভাগই রপ্তানি হয়ে থাকে চীনে। আর দেশের মোট কাঁকড়া রপ্তানির ৩০ ভাগই হয়ে থাকে বাগেরহাট জেলা থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে চীনে শিলা কাঁকড়া রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থায় খামিদের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমাতে জেলা মৎস্য বিভাগ সরেজমিনে চাষিদের খামাগুলো পরিদর্শন করে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৫ পিপিটি’র উপারে রাখতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাতে পূর্ণ বয়স্ক কাঁকড়া মারা না যায়। সূত্র : ইত্তেফাক

পাঠকের মতামত

Comments are closed.