262240

ইন্টারনেট ব্যবহারে দোষী তারা

ডেস্ক রিপোর্ট : চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে হাজার হাজার মুসলমানের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের নতুন দলিল ফাঁস হয়েছে। সেসব দলিলে শিনজিয়াং অঞ্চলে তিন হাজারের বেশি মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় খুঁটিনাটিসহ ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৩৭ পৃষ্ঠার ওই দলিলের প্রতিটি পাতায় ভিন্ন ভিন্ন কলাম এবং ছক কেটে সেখানকার মুসলমানরা কতবার নামাজ পড়েন, কী পোশাক পরেন, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণের বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। তবে চীন সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এগুলো দেশটির সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের অংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব দলিল অত্যধিক ব্যক্তিগত ঝুঁঁকি নিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত বছর শিনজিয়াং অঞ্চলের যে সূত্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সরকারি নথি পাওয়া গিয়েছিল, এবারও সেই সূত্রের মাধ্যমেই নতুন দলিলপত্র পাওয়া গেছে।

শিনজিয়াংয়ের চীনা নীতির বিশেষজ্ঞ ও ওয়াশিংটনে ভিক্টিমস অব কমিউনিজম মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো ড. আদ্রিয়ান জেনজ বলেন, ‘এসব দলিল আমার দেখা এ পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ যে, চীনের সরকার কীভাবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও চর্চার কারণে মানুষকে শাস্তি দিয়ে চলেছে।’

দলিলে পাওয়া ক্যাম্পগুলোর একটি ‘নম্বর ফোর ট্রেনিং সেন্টার’, যেখানে গত বছরের মে মাসে শিনজিয়াংয়ে চীন সরকার আয়োজিত এক সফরে বিবিসির একটি দল গিয়েছিল। সে সময় তার পাওয়া অনেক তথ্যউপাত্তের সত্যতা নতুন এসব দলিলে পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেছে বিবিসি। তারা বলছে, সেখানকার অনেক মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে বিবিসি ওই সময় অনেক তথ্য সম্পাদনা করে প্রকাশ করেছিল।

নতুন দলিলে সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের ৩১১ জন মানুষের ব্যাপারে ব্যাপকভিত্তিক অনুসন্ধানের অর্থাৎ তাদের পূর্ব ইতিহাস, ধর্মীয় আচার পালনের দৈনন্দিন রুটিন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। রিপোর্টের শেষ কলামে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, ওই ব্যক্তিদের বন্দিশিবিরে আরও রাখা হবে নাকি ছেড়ে দেওয়া হবে, অথবা আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এমন কাউকে আবার বন্দিশিবিরে ফিরিয়ে আনতে হবে কিনা। নতুন এসব দলিলের মাধ্যমে ওসব ক্যাম্পকে এতদিন সাধারণ স্কুল বলে চীন যে দাবি করে এসেছে তা ভিত্তিহীন হয়ে পড়েছে।

ড. জেনজ বলেছেন, এসবের মাধ্যমে ওখানে চলা সিস্টেমের ব্যাপারে ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনই ক্যাম্পে থাকা মানুষের ‘আদর্শিক ও মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী তাদের বিভক্ত করে পর্যালোচনা করার ব্যাপারেও ধারণা পাওয়া যায়।

দলিলের ৫৯৮ নম্বর সারিতে একটি কেস রয়েছে, যেখানে হেলচেম নামে ৩৮ বছর বয়সী এক নারীকে রি-এডুকেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে, কারণ তিনি কয়েক বছর আগে বোরকা পরতেন। অতীতের ঘটনার কারণে এবং নিয়মবহির্ভূত শাস্তির এটি একটি উদাহরণ মাত্র। অন্যদের মধ্যে কেউ আছেন, যারা কেবল পাসপোর্টের আবেদন করার কারণে সংশোধন শিবিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যার মাধ্যমে প্রমাণ হয়, কেউ দেশের বাইরে যেতে চাইলেও সেটাকে কর্তৃপক্ষ উগ্রপন্থার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে। আবার ২৩৯ নম্বর সারণিতে দেখা যায় নুরমেমেত নামে ২৮ বছর বয়সী একজনকে রি-এডুকেশন কার্যক্রমে পাঠানো হয়েছে, কারণ একটি ওয়েব লিংকে ক্লিক করার মাধ্যমে তিনি ‘অনিচ্ছাকৃতভাবে’ একটি বিদেশি ওয়েবসাইটে চলে গিয়েছিলেন।

তালিকায় যে ৩১১ জন ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, তারা সবাই শিনজিয়াংয়ের দক্ষিণে কারাকাক্স কাউন্টি নামে এক শহরের বাসিন্দা, যেখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু উইঘুর। এই উইঘুরদের বেশিরভাগই মুসলমান, এবং তাদের মুখাবয়ব, ভাষা এবং সংস্কৃতির সঙ্গে চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী অর্থাৎ যাদের হান চায়নিজ বলা হয়, তাদের চেয়ে বরং মধ্য এশিয়ার সাদৃশ্য বেশি।

সাম্প্রতিক কয়েক দশকে লাখ লাখ হান চায়নিজ শিনজিয়াংয়ে বসতি গড়ে তুলেছে। এর পর থেকে ক্রমে সেখানে এক ধরনের জাতিগত উত্তেজনা তৈরি এবং উইঘুরদের অর্থনৈতিক কর্মকা- থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে এমন আশঙ্কা ক্রমে বাড়ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই সেখানে বিক্ষোভ হলেও বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে যা কঠোরভাবে দমন করা হয়। এ জন্যই ক্রমে উইঘুর এবং শিনজিয়াংয়ের অন্য সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়গুলো যেমন কাজাখ এবং কিরগিজ সম্প্রদায়ের লোকেরা সরকারের দমননীতির টার্গেটে পরিণত হয়েছেন এবং তাদের বন্দিশিবিরে নেওয়া হচ্ছে। সূত্র : আমাদের সময়

পাঠকের মতামত

Comments are closed.