262248

মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের সময় টানা ৬ ঘণ্টা বেহালা বাজালেন রোগী! (ভিডিওসহ) 

ডেস্ক রিপোর্ট : বাস্তবতা কখনো কল্পনাকেও হার মানিয়ে যায়! এ যেন এক আজব ও অবিশ্বাস্য কাণ্ড। অপারেশন থিয়েটারে চলছে রোগীর মস্তিষ্কের টিউমার অপসারণের কাজ, অন্যদিকে তিনিই বাজাচ্ছেন বেহালা (ভায়োলিন)। কারণ তার শান্তি ওই বেহালার সুর। চিকিৎসকরাও রোগীর কল্যাণে ওটি’তে বেহালা বাজানোর অনুমতি দেন।

বলছি, ৫৩ বছর বয়সী ডাগমার টার্নেরের কথা। ২০১৩ সালে এই নারীর মাথায় একটি মস্ত বড় টিউমার আবিষ্কার করেন চিকিৎসকরা। এক সন্তানের জননী ডাগমার দীর্ঘদিন ধরেই এই টিউমারটি নিয়ে ভুগছিলেন। বেশ কয়েকবার রেডিওথেরাপি নেয়ার পরও তার টিউমারটি ৮/৪ সে.মি. বেড়ে যায়। এটি তার মস্তিষ্কের ডান দিকের সামনের অংশে বিস্তার করছিল। অবশেষে অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় নেই। শেষমেষ ওটিতেই যেতে হলো ডগমারকে। টিউমারটি অস্ত্রোপচার করতে সময় লেগেছিল ছয় ঘণ্টা।

এই জটিল অস্ত্রোপচারের মধ্যেও কীভাবে টানা ছয় ঘণ্টা রোগী বেহালা বাজালেন? প্রথমে চিকিৎসকরা দেখলেন টিউমারের অংশটি ভায়োলিন বাজানোর সময় প্রভাবিত হচ্ছে কিনা? অতঃপর দেখা গেল বাম হাত দিয়ে ভায়োলিন বাজালে মস্তিষ্কের ডানদিকের অংশে প্রভাব পড়ছে না। আর এই উপায়েই টানা ছয় ঘণ্টা রোগী হাতে বেহালা নিয়ে বাজালেন।

তাকে এই বিষয়ে আগে থেকেই চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন। যাতে করে একই স্কেলের বাইরে অন্য কোনো সুর সে বেহালায় না বাজায়। আর এভাবেই রোগী ছয় ঘণ্টা ধরে পাকা হাতে বেহালা বাজিয়ে নিজ মুন্সয়ানা দেখালেন। লন্ডনের কিং কলেজ হাসপাতালে ডাগমারের সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। প্রফেসর ড. কেওমার্স আশকানের তত্ত্বাবধায়নে রোগীর মস্তিষ্ক থেকে বড় একটি টিউমার অপসারণ করা হয়।

ডগমার একজন বেহালাপ্রেমী। তিনি জানান, বেহালা বাজানো আমার শখ। সেই ১০ বছর বয়স থেকে আমি বেহালা বাজানো শুরু করি। যদিও আমি জানতাম, অপারেশনের সময় বেহালা বাজানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে। তবে ড. আশকান আমার মনোভাব বুঝতে পারেন। এজন্য কীভাবে বেহালা বাজালে আমার অপারেশনে ক্ষতি হবে না সেদিকে তারা লক্ষ্য রাখেন। আমার ভালো লাগাকে প্রাধান্য দিয়েই তারা সফল অপারেশন করেন। আমি ভেবেছিলাম যদি ওটিতেই মরে যাই তবে বেহালা বাজিয়েই মরব!

ডগমারের ১৩ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছেন। স্বামী ও সন্তান নিয়ে তার বসবাস লন্ডনে। তিনি একজন সফল সুরকার ও বাদক। আইল অব উইট সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা নামে তার একটি নিজস্ব দল রয়েছে। মাথায় টিউমার ধরা পড়ার পর তিনি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিছু সময়ের জন্য তিনি ভেবেছিলেন বেহালা হাতে বোধ হয় তিনি আর দাঁড়াতে পারবেন না। পছন্দের সুরগুলো আর বেহালায় তুলতে পারবেন না।

অস্ত্রোপচারের সময় তার মস্তিষ্ক অবশ করে নেয়া হয়েছিল। তবুও ডগলার কীভাবে মনোযোগ সহকারে বাদ্যযন্ত্র বাজালেন? কারণ তিনি বাম হাত দিয়ে বেহালা বাজাচ্ছিলেন। এতে করে তার মস্তিষ্কের বাম পাশই প্রভাবিত হচ্ছিল, ডান পাশ নয়। আর এ কারণেই অস্ত্রোপচারটি এতোটা সুক্ষ্মভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে। ডগমার বলেন, চিকিৎসকরাই আমাকে বেহালা বাজাতে সাহায্য করেছিলেন। আমি স্পষ্ট শুনছিলাম তারা আমাকে বাদ্য বাজাতে বলছিলেন। তিনি ওটিতে অ্যানাস্থেসিস্ট এবং একজন চিকিৎসক দ্বারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

প্রফেসর আশকান বলেন, আমরা জানতাম ডগমারের জন্য বেহালা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা তার মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে চেয়েছিলাম। এজন্যই সেখানকার সূক্ষ্ম অংশ যাতে বাদ্য বাজানোর মাধ্যমে সচল রাখা যায় সেই প্রচেষ্টাই ছিল আমাদের। এভাবেই তার মস্তিষ্কের ৯০ শতাংশ টিউমার অপসারণ করতে সক্ষম হই আমরা। অস্ত্রোপচারের মাত্র তিন দিন পরই ডগমার তার স্বামী এবং ছেলের সঙ্গে বাড়িতে ফিরে যান। বর্তমানে তিনি সুস্থ রয়েছেন।
সূত্র: ডেইলিমেইল

পাঠকের মতামত

Comments are closed.