262824

অফিস সহকর্মীর প্রতি ‘নোংরা রসিকতায়’ কি সৃষ্টি হতে পারে

ডেস্ক রিপোর্ট : রসিকতা হলো কোনো বক্তব্য, উচ্চারণ বা অঙ্গভঙ্গি যা মানুষের মনে হাস্যরসের সঞ্চার করে। এটি সংলাপ দিয়ে শুরু হয়ে গল্পে রূপ নিতে পারে, যা শেষ হয় পাঞ্চ লাইনে। আর এই পাঞ্চ লাইন শুনেই শ্রুতা বুঝতে পারে উপস্থাপিত কথাগুলোর দ্বিতীয় কোনো অর্থ বা ইঙ্গিত আছে। এ ধরনের রসিকতা যে সব সময় সীমার মধ্যে থাকে তা নয়। অনেকের মধ্যেই পরিমিতিবোধের অভাব দেখা যায়। আর যদি লক্ষ্য হোন নারী তাহলে তো কথাই নেই। একাধিক জরিপে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রায়ই এরূপ রসিকতার উপলক্ষ হতে হয়। তাদের লক্ষ্য করে পুরুষ সহকর্মীরা ‘নোংরা কৌতুক’ বলে খুব মজা পায়। যদিও এতে নারী সহকর্মীটির মনে কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না।

কয়েকজন কর্মজীবীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেখানে কেট (ছদ্মনাম) নামে একজন এক্সেকিউটিভ পুরুষ সহকর্মীদের ইঙ্গিতপূর্ণ নোংরা কৌতুকে অতিষ্ঠ হয়ে চাকরিই ছেড়ে দিয়েছেন। একদিনের একটি ঘটনা বর্ণনায় কেট বলেন, তিনি লাল হিল জুতা পরে অফিসে গিয়েছিলেন। তার একজন বস কৌতুকের ছলে বুঝিয়েছিলেন কীভাবে কেট ‘বিশেষ অন্তর্বাস’ না পরেই অফিসে এসেছেন। এখানেই শেষ নয়। বারংবার তাকে এমন সব যৌন উসকানিমূলক রসিকতার মুখোমুখি হয়েতে হয়েছে। আরেকবার কম্পিউটারে প্লাগ ঢুকানোর সময়ও একজন সিনিয়রের ইঙ্গিতপূর্ণ কৌতুক শুনতে হয়েছে।

কেট জানতেন এটা নিছকই মজা করার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে। কিন্তু একপাল পুরুষের মধ্যে বারবার যখন একটা মেয়ে হাস্যকৌতুকের উপলক্ষ্যে পরিণত হয় তখন কাঁহাতক আর সহ্য করা যায়! কেটও পারেননি। চাকরি ছেড়ে আসার সময় মানবসম্পদ বিভাগে তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের কৌতুক তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

২০ হাজার মানুষের মধ্যে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারী সহকর্মীর প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ নোংরা কৌতুক নিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্রিটিশ পুরুষরাই বেশি নির্বিকার। যেখানে এ ধরনের কৌতুক নিয়ে অস্বস্তিবোধ হয় না ব্রিটেনের এমন কর্মজীবী নারীর হার মাত্র মাত্র ১৬ শতাংশ। এমনকি যুক্তরাজ্যের ২৮ শতাংশ পুরুষ মনে করেন কর্মক্ষেত্রে নোংরা রসিকতার চর্চা ঠিক আছে। দেখা গেছে, তুরস্ক, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুরুষদের তুলনায় ব্রিটিশ পুরুষরা এ ধরনের চর্চা একটু বেশিই পছন্দ করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক হিলারি মার্গোলিস বলেন, রসিকতা করার ব্যাপারে কর্মক্ষেত্র আর মদের দোকানের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত আছে। অনেক নারী সহকর্মীদের কাছে তা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কৌতুক পুরুষের মধ্যে অস্বস্তি বোধ তৈরি করতে পারে, যদি নারী সংখ্যাগরিষ্ঠ অফিসে তিনি কর্মরত থাকেন।

মার্গোলিস বলে আরো বলেন, কখনও কখনও এই চর্চা নারীর মধ্যে এমন অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে পারে যে তাদের স্বকীয়তা লুকিয়ে রাখাই শ্রেয়। নারীরা প্রায়শই কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের রসিকতায় পুরুষের সঙ্গে তাল মেলাতে হেসে ওঠেন। কারণ পুরুষের সামনে নিজেদের খুব সিরিয়াস বা বেশি সংবেদনশীল হিসেবে উপস্থাপন করতে চান না। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্রোতে গা না ভাসালে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে- এমনও ভাবেন অনেকে।

ব্রিটেনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সামাজিক নেটওয়ার্ক সিটি হাইভ- এর প্রতিষ্ঠাতা বেভ শাহ বলেন, আজকাল এরকম খোলামেলাভাবে রসিকতা করেন এমন কেউ আছে বলে তার মনে হয় না। এই ধরনের রসিকতা এখন আর কোনো পাবলিক ফোরামে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমনটি বর্ণবাদী রসিকতা আর নেই। একসময় বর্ণবাদী রসিকতা মূল ধারার চর্চার মধ্যেই ছিল।

কিংস কলেজ লন্ডনের ইপসোস মোরি এবং গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর উইমেন লিডারশিপের সমীক্ষায় বিশ্বের ২৭টি দেশের মানুষের মধ্যে একটি মতামত জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ নোংরা রসিকতা সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বেলজিয়াম এবং চীনে। এখানে ৪৭ শতাংশ পুরুষ কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের রসিকতা বা গল্প করে থাকেন। যেখানে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় ১৩ শতাংশেরও কম পুরুষ এ ধরনের চর্চার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।

যখন আওয়াজ তোলার কথা আসে, কেটের মতো ব্রিটিশ নারীরাও অনুচিত রসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পিছপা হন না। যুক্তরাজ্যের ৮০ শতাংশের বেশি নারী বলেন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ রসিকতা করলে তিনি পরিবারের সদস্য হোন আর বন্ধু্স্থানীয় হোন তারা তীব্র প্রতিবাদ করবেন। ব্রিটিশ পুরুষরাও এ ধরনের চর্চার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ইচ্ছুক । ৭৩ শতাংশ পুরুষ নারীদের প্রতি সমর্থন জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি

পাঠকের মতামত

Comments are closed.