183251

প্রযুক্তির বিষে আক্রান্ত শহুরে কৃষক

নূসরাত জাহান: বিশ্ব যত উন্নত হচ্ছে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ততই কমছে। বাড়ছে শহর। ঠিক শহর না বলে কংক্রিটের জঙ্গল বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। শহরের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিষাক্ত খাবারের সরবরাহ। নিজেকে সুস্থ রাখতেই কংক্রিটের জঙ্গলে শহুরে কৃষকরা ফসল আবাদের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এমন চেষ্টা এখন দেশে এবং দেশের বাইরে চোখে পড়ে। তবে সময়ের কারণে অনেকেই পেরে ওঠে না। এমনই একটি কংক্রিট আর প্রযুক্তি ভাগাড় বেঙ্গালুরুর রামাগোনদানাহালি গ্রাম। এখানকার মার্টির বেশ কয়েক স্তর পর্যন্ত আসল মাটির দেখা মেলে না। এ এলাকার মাটিয়ে কংক্রিট ছাড়াও লোহা, তামাসহ নানা ধরনের রাসায়নিকে ভরা। এমনই জমিতে আবাদ করছেন কৃষকরা। তবে বিষে ভরা এসব সবজি না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত বেঙ্গালুরুর ভারথুর লেকের পাশেই রামাগোনদানাহালি গ্রাম। এ লেকটি বেঙ্গালুরু দ্বিতীয় বৃহত্তম হলেও এটার পানি খুবই দূষিত। এ গ্রামের বেশির ভাগ জমিই ডেভোলপাররা কিনে নিয়েছে। চাষের জমিতে তারা গড়ে তুলেছে প্রযুক্তির গুদাম। ১৯৭০ সালের পর থেকেই এ এলাকায় প্রযুক্তির উন্নয়ন হতে শুরু করে। তবে এ গ্রামের মাটিতেই এখন ফলছে নানা ফসল। যে জায়গায় এক সময় ছিল আবর্জনার ভাগাড় সেখানে এখন ফলছে নানা ধরনের সবজি।

ধাতব মাটিতে সবুজ করতে এগিয়ে আসা শহুরে কৃষকদের একজন হনুমানথাপ্পা। চাষাবাদ করা ছাড়া তার সামনে আর কোনো উপায় ছিল না। এ কাজটি না করলে তাকে জমি বিক্রি করে দিতে হতো। লেকের পাড়ে গ্রামটি অবস্থিত হলেও এর পানি চাষাবাদে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু হুনমানথাপ্পার গভীর নলকূপ বসানোর মতো টাকাও ছিল না। বাধ্য হয়েই তিনি এ দূষিত পানি ব্যবহার করেন।

এতো প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও চাষ ছাড়েনি তিনি। অল্প সময়ে চাষ করা যায় এবং মার্টির খুব একটা গভীরে শেকড় যায় না এমন সবজি চাষ করে তিনি। তার জমি এখন ভরে আছে পালং শাকে। হনুমানথাপ্পা বলেন, ‘যারা জানে আমি দূষিত লেকের পানি দিয়ে সবজি উৎপাদন করি তারা আমার থেকে এগুলো কেনে না। আর কেউ কিনতে রাজি হলেও ঠিক মতো দাম দিতে চায় না। ’

শষীকলা নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি ও আমার পরিচিতরা এসব সবজি কিনি না। কারণ এতে লেকের পানি সরাসরি ব্যবহার করা হয়। এসব সবজি বিষাক্ত।’

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্সের অধ্যাপক টিভি রামাচন্দ্রাও এ ধরনের সবজি কেনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণে এ পানিতে মিশে আছে শিল্প-কারখানার রাসায়নিক। যা পেটে গেলে মানুষের শরীরে বাসা বাধতে পারে মারাত্মক সব রোগ। সূত্র: বিবিসি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.