184175

ফ্যাশনে ইন ‘স্কার ট্যাটু’

শরীরের কোনও কাটা জায়গা ঢাকতে কেউ যদি ট্যাটু করায়, তাহলে ক্ষতি কি? আমার এক বন্ধু তার অস্ত্রোপচারের দাগ ঢাকতেও ট্যাটু করিয়েছে। ফ্যাশনেব্‌লও লাগে, আবার ক্ষতটাও বোঝা যায় না। ভালই তো ব্যাপারটা! — জানাচ্ছেন অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়

সাধারণভাবে মানুষ ট্যাটু বিষয়টাকে স্টাইল স্টেটমেন্ট হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, শরীরের ক্ষতস্থান ঢাকতেও অনেকে ট্যাটু করাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে এক ঢিলে মারা যাচ্ছে দুই পাখি! এক, শরীরের ক্ষতস্থান ঢাকা পড়ছে রঙিন নকশায়। অন্যদিকে, ট্যাটু-স্টাইল যেহেতু এই মুহূর্তে ‘ইন’, তাই বাড়ছে স্টাইল কোশেন্টও।

দিনকয়েক আগের কথা, মুখের পোড়া অংশে ট্যাটু করে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন এক কানাডিয়ান মহিলা— বাসমা হামিদ। ঘটনার সূত্রপাত মাত্র দু’বছর বয়সে। ছোট্ট বাসমা তখন রান্নাঘরের মেঝেয় বসে খেলতে ব্যস্ত। পাত্রে গরম তেল নিয়ে যাওয়ার সময়, তার দাদার হাত থেকে কিছুটা তেল চলকে গিয়ে পড়েছিল বাসমার মুখে। সেই থেকেই মুখের বাঁ-দিকের পোড়া দাগ বাসমার নিত্যসঙ্গী। বিকৃত মুখের কারণে ছোটবেলা থেকেই স্কুল এবং কলেজে সহপাঠীদের কাছে ঠাট্টার পাত্রী ছিলেন বাসমা। ফল? অবসাদ! প্রাপ্ত-বয়সে পৌঁছে, মুখের ক্ষতস্থানে ট্যাটু করার সিদ্ধান্ত নেন বাসমা। তাঁর সিদ্ধান্ত শুনে আঁতকে উঠেছিলেন কানাডার অনেক তাবড় চিকিৎসকই। তাঁদের চিন্তা ছিল, মুখের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ট্যাটু আঁকার ধকল নিতে পারবে তো? বাসমা ছিলেন অনড়! প্রথমে মুখের সামান্য কিছু অংশে ট্যাটু করান বাসমা। কয়েক মাসের মধ্যেই ইতিবাচক ফল মেলায়, পুরো ক্ষতস্থানেই ট্যাটু করিয়ে ফেলেন তিনি। আপাতত পুরোপুরি সুস্থ জীবনযাপন করছেন বাসমা। তাঁকে দেখে কে বলবে, গরম তেল পড়ে ঝলসে গিয়েছিল তাঁর মুখ? ট্যাটু আর্টিস্ট হিসেবেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি কানাডায় নিজস্ব ট্যাটু পার্লারও খুলেছেন বাসমা।


শরীরের ক্ষত ঢাকতে ট্যাটু আঁকানোর ট্রেন্ড কলকাতায়ও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পথ দুর্ঘটনার ক্ষত হোক বা স্ট্রেচ মার্কস— প্রায় সকলেই দৌড়চ্ছেন ট্যাটু পার্লারে। আবার, অনেকে অল্পবয়সে করা ‘সেল্ফ-হার্ম মার্কস’ ঢাকতেও ট্যাটু করাচ্ছেন। মণি স্কোয়্যারের ‘মহা ইঙ্ক ট্যাটু’র মালিক মহাদেব মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘শরীরের ক্ষতস্থানে ট্যাটু করানোর জন্য অনেকেই আসেন। বেশিরভাগই দুর্ঘটনার আঘাতের ক্ষত নিয়েই আসেন। তবে ব্লেড বা ক্ষুর’এ কাটা দাগের উপর ট্যাটু আমরা করি না!’’ কেন? মহাদেবের কথায়, ‘‘ক্ষুর বা ব্লেড’এ কাটা অংশে ট্যাটু করলে রং থাকতে চায় না। অনেক সময় সংক্রমণেরও সম্ভাবনা থেকে যায়।’’ শহরের অন্য এক জনপ্রিয় ট্যাটু স্টুডিও-চেন ‘থ্রি-কিউব ট্যাটু’র কর্ণধার রাজদীপ পালের কথায়, ‘‘শারীরিক ক্ষত ঢাকতে ট্যাটু করাটাও এখন ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে।

 

দুর্ঘটনার ক্ষত তো বটেই, অনেক মহিলা তলপেটের স্ট্রেচ মার্ক ঢাকতেও ট্যাটু করাচ্ছেন। কিছুদিন আগে আমার কাছেই এমন এক মহিলা এসেছিলেন। আবার এমনও হয়েছে, আমাদের কাছে এসে মেয়েরা ব্লেডে হাত কাটার দাগ ঢেকে গিয়েছেন। পরে জেনেছি সামনেই সেই মেয়েটির বিয়ে।’’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.