189925

দেশে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত রোগে আক্রান্ত সাড়ে ৮ লাখ

 

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে ভিটামিন ‘এ’র অভাবজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র শূন্য দশমিক পাঁচ ভাগ তথা প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মানুষ। সরকারিভাবে নিয়মিত শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ফলেই এই সফলতা। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের খাওয়ানো হবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল।

এ বছরের প্রথম সেশনে প্রায় ২ কোটি শিশুকে এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হলেও শনিবার দ্বিতীয় সেশনে সোয়া ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে বলে জানালেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক ডা. সুমিত কুমার বিশ্বাস।

তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, রাতকানা রোগ আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। দেশের মানুষ একেবারেই যার অভাবমুক্ত।

ভিটামিন ‘এ’ অভাবমুক্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. সুমিত বলেন, সরকারিভাবে প্রতিবছর আমরা দুটি সেশনে সারাদেশে শিশুদের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে থাকি। যা খুবই কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা দিয়েছে এ ক্ষেত্রে।

এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সারাদেশে দ্বিতীয় সেশনে ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে সোয়া ২ কোটি শিশুকে।

৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের ১ লাখ ইউনিটের নীল রঙের ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। আর ১২ থাকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের খাওয়ানো হবে ২ লাখ ইউনিটের লাল রঙের ক্যাপসুল।

ডা. সুমিত বলেন, উন্নত মানের এই ভিটামিন সংগ্রহ করা হয়েছে ডেনমার্ক থেকে। যা আন্তর্জাতিক ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষিত। এছাড়া দেশে আনার পরেও আমাদের জাতীয় ওষুধ পরীক্ষাগারে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে।

কিভাবে একদিনে দেশের সোয়া ২ কোটি শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের এই সহকারী পরিচালক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও সেমিনার এবং ওরিয়েন্টেশনের মাধ্যমে ২ লাখের বেশি স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত করেছি। যাদের মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও রয়েছেন সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক ও এনজিও প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। আর এটি খাওয়ানো খুবই সহজ। পরিচ্ছন্ন (জীবাণুমুক্ত) হাতে ক্যাপসুলটির মুখ খুলে ভেতরের তরলটুকু শিশুর মুখে দিলেই এটি দেহে কার্যকরী হয়ে ওঠে।

দেশের ১ লাখ ২০ হাজার স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও ২০ হাজার অস্থায়ী কেন্দ্রে শিশুদের এই ভিটামিন খায়ানো হবে। যার মধ্যে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, বাস স্টেশন, রেলস্টেশন এবং বঙ্গবন্ধু সেতু, দাউদকান্দি ও মেঘনা সেতুসহ জেলা পর্যায়ের সেতুগুলোকেও কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এতে যাত্রী হিসেবে চলমান শিশুরাও এই ভিটামিন প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে না।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের হেলথ ইনফরমেশন ইউনিট প্রধান ডা. আবদুস সালাম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকবেন দুজন করে স্বাস্থ্যকর্মী। যাত্রী শিশুদের টিকাদানের ক্ষেত্রে এই স্বাস্থ্যকর্মীদের একজন চলমান ওই শিশুদের অভিভাবককে বুঝিয়ে রাস্তার পাশের কেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। অন্যজন তাকে ক্যাপসুল খাইয়ে দেবেন।

সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের মানুষ এখন অনেক স্বাস্থ্য সচেতন। আর এই সচেতনতার কারণেই নিজ আগ্রহে অভিভাবকরা তার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুটিকে নির্দিষ্ট দিনে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাইয়ে থাকেন। এতে দেশের মানুষ আজ রাতকানা রোগমুক্ত জীবনযাপন করছে।

যেসব স্বেচ্ছাসেবী ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনে কাজ করেন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের শুধুই নাস্তা দেওয়া হয় বলে জানালেন ডা. আবদুস সালাম।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে জাতীয় ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন ২০১৭-এর দ্বিতীয় সেশনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এর আগে ৫ আগস্ট প্রথম সেশনে প্রায় ২ কোটি শিশুকে এই ভিটামিন খাওয়ানো হয়। যারা প্রথম সেশনে ভিটামিনটি পায়নি শুধু তাদেরকেই এই সেশনে ভিটামিন ‘এ’ দেওয়া হবে। সুত্র পরিবতন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.