‘আল্লাহ মোরে অ্যাহোনো বাঁচাইয়া রাকছে’
মোর পোলারা বুড়া অইয়্যা গ্যাছে। হ্যাগো নাতি পুতি অইছে। নাতি, পুতি, ছাতি দ্যাখলাম। মোরে আল্লাহ আরো কত কি যে দ্যাহাইবে। মোর বয়েস এহন ১২৪। কত মাইনষেরে যে মুই কবর দিছি। মোর কবর যে কে দেবে আল্লাহই ভালো জানেন। তিন-চাইড্ডা যুদ্ধ দ্যাখলাম, বড় বড় বইন্যা দ্যাকছি। বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধ দ্যাকলাম। মোর দ্যাহার শ্যাষ নাই। বঙ্গোপসাগরের তুফানের লগে যুদ্ধ কইর্যা মুই বাঁইচ্যা রইছি। তুফান শ্যাষ অইয়্যা গ্যাছে। মোর কিচ্ছু অয়নাই। বন্যায় সাগরে মায়রে, দুইডা বউ, দুইডা পোলা, তিন মাইয়্যা লইয়্যা গ্যাছে।
রায়োডের কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কতা হুনছি। আজও হ্যার কতা মোর কানে ভাসে। হেইকাল অইতে বঙ্গবন্ধুর দলে নাম ল্যাহাইছি। আইজও মুই হ্যার দল করি। মুই হ্যার দলের সভাপতি। মোর বয়সী লোক অ্যাহোন আর একজনও বাঁইচ্যা নাই। মুই এ দেশের বুড়া মানুষ। মোরে আল্লাহ অ্যাহোনো বাঁচাইয়া রাকছে। মোর মতো অ্যাত্তো পোলা-মাইয়্যা, নাতি-নাতনী কার আছে কন দেহি?
কথাগুলো বলেছেন বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন নলবুনিয়া গ্রামের ১২৪ বছর বয়সী সেকান্দার আলী হাওলাদার।
তিনি বলেন, তার পিতা মোক্তার আলী হাওলাদারের মৃত্যুর পরে ১৯৩০ সালের পরে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুই ভাই মকবুল হোসেন হাওলাদার ও সেকান্দার আলী হাওলাদার পাথরঘাটার জালিয়াঘাটা গ্রাম থেকে তালতলীর নলবুনিয়ার গ্রামে আসেন। ওই সময় বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন নলবুনিয়া এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। শুধু ছিল বন আর বন। তখন দুই ভাই সাগরে মাছ ধরে ও বন কেটে জমি আবাদ করতেন।
পাথরঘাটা উপজেলার জালিয়াঘাটা গ্রামে ১৮৯৪ সালে মোক্তার আলী হাওলাদারের ঘরে জন্ম নেন সেকান্দার আলী হাওলাদার। বাবা আদর করে ডাকতেন সেকু। দুই ভাইয়ের মধ্যে সেকান্দার ছোট। নলবুনিয়া এলাকার মানুষ তাকে ডাকতেন ছোট মিয়া বলে। বড় ভাই মকবুল হোসেন ১০ বছর আগে ১১৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে বেড়ে ওঠা সেকু আজ ১২৪ বছর বয়সী বৃদ্ধ সেকান্দার। তিনি নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
১৯৭০ সালের প্রলঙ্করী বন্যায় বৃদ্ধ মা হাচন বরু, দুই স্ত্রী, দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে হারান। একা হয়ে যান সেকান্দার হাওলাদার। বেদনা ভুলতে তিনি পরপর দু’টি বিয়ে করেন। ওই দুই স্ত্রীর ঘরে জন্ম নেয় ৯ ছেলে ও চার মেয়ে। বর্তমানে ওই ছেলেমেয়েদের ঘরে জন্ম নেয়া তার ৩৮ নাতি-নাতনী রয়েছে। দুই স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে কোলাহলে দিন কাটান সেকান্দার হাওলাদার। এত মানুষের আতিথেয়তা হাসি খুশি যেন তার জীবনে এনে দিয়েছে সাচ্ছন্দ ও নতুন বৈচিত্র্য।
নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী বলেন, সেকান্দার হাওলাদার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের গর্ব। তার মতো এত বয়সী লোক কোথাও বেঁচে আছে কি-না আমার জানা নেই। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি। শতকষ্ট হলেও মিটিং মিছিলে তিনি উপস্থিত হন। সব চেয়ে বেশি বয়সী মানুষ হিসেবে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।