অটোরিকশা চালকের ‘শ্বশুর’ হলেন পুলিশ সুপার !
ডেস্ক রিপোর্ট : ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের রিকশাচালক আবুল কালাম। মেয়ে জাহেদা বেগমের বিয়ে ঠিক হলে মানুষের কাছে হাত পেতে ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। নিজের কিছু গচ্ছিত টাকাসহ মানুষের থেকে সংগ্রহ করা টাকা নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর সোনাগাজী উপজেলায় বিয়ের বাজার করতে গেলে, হারিয়ে ফেলেন সেই টাকাগুলো।
এতেই দরিদ্র পিতার মেয়ের বিয়ের লালিত স্বপ্ন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। তাই সোনাগাজী বাজারে প্রকাশ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিষয়টি সাধারণ মানুষের চোখে পড়লে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় রিকশাচালক বাবা-মায়ের আর্তনাদের সেই দৃশ্য।
বিষয়টি ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের নজরে এলে তিনি বিয়ের দায়িত্ব নেন। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার জাহেদার গ্রামের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে উপস্থিত হয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এসপি বাবার ভূমিকা পালন করে জামাতার হাতে মেয়েকে তুলে দেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। এসপির এমন ভূমিকায় ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ বলে প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন ওই এলাকার সব শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে।
শুধু এতেই শেষ নয়, এসপি বাবা হয়ে মেয়ের গলায় জড়িয়ে দিলেন আট আনী ওজনের সোনার গয়না। সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের রীতি অনুযায়ী সঙ্গে দিলেন লেপ-তোষক, হাঁড়ি-পাতিল নতুন বউয়ের সঙ্গে যাওয়া যাবতীয় জিনিসপত্র।
এসপির আগমনের সংবাদে ছুটে যাওয়া স্থানীয় ও পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান নতুন বরকে একটি অটোরিকশা উপহার দেন। এ রকম একটি দৃশ্যের অবতারণা দেখতে ওই গ্রামে ভিড় জমে হাজারো মানুষের। না খেতে পারলেও মিষ্টি মুখে ফিরেছেন সকলেই। স্থানীয়রা জানান, এই দুই বর-কনের বিয়েতে এসপির উপস্থিতি তাদের জীবনের বিরল ঘটনা।
রিকশাচালক আবুল কালাম জানান, এটি আমার জীবনের সেরা ঘটনা। জীবনের কোনো ভালো কাজের প্রতিদান স্বরুপ এটি পেয়েছি। এসপি আমার মতো রিকাশাচালকের মেয়ের বিয়েতে এসে আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমার মেয়ে এখন রিকশাচালকের মেয়ে না, একজন এসপির মেয়ে। মেয়ের জামাতা পেল পুলিশ সুপার শ্বশুর।
এ বিষয়ে বর বলেন, ‘আমার বিয়েতে এসপি স্যার আসায়, আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি আগামী সকল কর্মকাণ্ডে এসপি স্যারের সুনাম রক্ষা করব।’
ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে। গরিব এবং ছোট্ট একটা দুর্ঘটনায় একটা বিয়ে ভেঙে যেতে পারে না। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।’
বাবা হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু আমরা দাওয়াত পেলাম না— এমন প্রশ্নের উত্তরে এসপি বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে হওয়াতে দাওয়াত করা যায়নি। আজ একটি ভিন্ন স্বাদ পেয়েছি। বাবা হয়ে মেয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিতা করতে পারা এটি আসলে গৌরবের বিষয়।’
সূত্র : দৈনিক আমাদের সময়