201702

এই ১০ টি খাবার থেকে দূরে থাকুন থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে

থাইরয়েড কিন্তু খুবই সমস্যার ব্যাপার। , সে আপনারা যারা ভুক্তভোগী সবাই জানেন। একবার থাইরয়েড ধরা পড়লো তো ব্যাস! সারা জীবনই মোটামুটি ওষুধ খেয়ে যাওয়ার পালা শুরু হয়ে যায়। থাইরয়েডকে অনেকসময় সাইলেন্ট কিলারও বলা হয়। ‘অ্যামেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশনে’র মতে প্রায় ২০ লক্ষ অ্যামেরিকানই থাইরয়েডের সমস্যায় ভোগেন, যাদের মধ্যে ৬০%-ই বোঝেন না যে তাঁদের থাইরয়েড হয়েছে।

থাইরয়েড ডায়েট? : থাইরয়েড ধরা পড়লে ওষুধ তো খেলেনই। কিন্তু জানেন কি, এমন অনেক খাবারই আছে যেগুলোর মধ্যে থাকা নিউট্রিয়েন্টস আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দেয়। ফলে তখন ওষুধ খেলেও কোনো কাজ হয় না। তাই একটু বুঝে খাবার খেলে কিন্তু আপনি থাইরয়েডকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। আর একেই ডাক্তাররা বলেন থাইরয়েড ডায়েট। আজকের আর্টিকলে দেখে নিন থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোন কোন খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত।

১. সয়াবিন, তোফু : সয়াবিন আপনার যতই প্রিয়ই হোক না কেন, থাইরয়েড থাকলে কিন্তু এটা খাওয়া আপনাকে বন্ধ করতেই হবে। সয়াবিনে থাকা আইসোফ্ল্যাভিন থাইরয়েডের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হতে পারে। আর আপনি যদি রোজ আপনার ডায়েটে সয়াবিন রাখেন? তাহলে কিন্তু আপনার থাইরয়েডের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যেতে পারে।

২. ব্রকোলি আর ফুলকপি : ব্রকোলি আর ফুলকপি খাওয়া যে স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো তা তো আপনারা জানেনই। কিন্তু থাইরয়েড থাকলে ব্রকোলি আর ফুলকপি না খাওয়াই ভালো। ব্রকোলি আর ফুলকপিতে থাকা ফাইবার আর অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই আপনার থাইরয়েড ধরা পড়লে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, শালগম খাওয়া বন্ধ করুন, কারণ এগুলো কিন্তু থাইরয়েড হরমোনের আয়োডিনকে ব্যবহার করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে আপনার শরীরে নানা সমস্যা হতে পারে।

৩.পাউরুটি, পাস্তা আর ভাতে থাকা গ্লুটেন : ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্সে’র বিশেষজ্ঞ রুথ ফ্রেচম্যানের মতে থাইরয়েড ধরা পড়লে পাউরুটি, পাস্তা, ভাত বা কোনো গ্রেন অ্যাভয়েড করাই ভালো। কারণ এতে থাকা গ্লুটেন নামক প্রোটিন ক্ষুদ্রান্ত্রে সমস্যার কারণ হতে পারে, যা থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের অ্যাবসর্ভে বাধা দেয়। তাছাড়া গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট কিন্তু থাইরয়েডকে খানিক নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। আর আপনার ডায়েটে যদি গ্লুটেন রাখতেই হয়, তাহলে চেষ্টা করবেন যেন হোল গ্রেন থাকে।

৪. মাখন বা ভাজা জিনিস, ফাস্ট ফুড : ফ্যাট কিন্তু আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট মেডিসিনের অ্যাবসর্ভে বাধা সৃষ্টি করে। আর তাছাড়া আপনার যদি থাইরয়েড নাও থেকে থাকে, তাহলেও কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় ফাস্ট ফুড, ফ্যাট বা ভাজা জিনিস খেলে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে হরমোন উৎপাদনেও সমস্যা হয়। তাই আজ থেকেই আপনার ডায়েট থেকে মাখন, মেয়োনিজ, তেলেভাজা, বার্গার বাদ দিয়ে দিন। দেখবেন সুস্থ থাকছেন।

৫. মিষ্টি খাবার : মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসেন? কিন্তু আপনার যদি থাইরয়েড থাকে, তাহলে মিষ্টি খাওয়া আপনাকে বন্ধ করতেই হবে। কারণ থাইরয়েড আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে আস্তে করে দেয়। ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। আর মিষ্টি খাবার খেলে কোনো পুষ্টিগুণ তো শরীরে যায়ই না, উল্টে বাড়তি ক্যালোরি ঢুকে ওজন বাড়তে শুরু করে। তাই মিষ্টি, কেক বা মিষ্টিওয়ালা যেকোনো খাবারকে কিন্তু ডায়েট থেকে বাদ দেওয়াই ভালো।

৬. প্রসেস করা প্যাকেট করা খাবার, ফ্রোজেন ফুড : আমাদের বর্তমান লাইফ স্টাইলে প্রসেস করা খাবার তো আমাদের ডায়েটের অঙ্গ হয়েই গেছে। কিন্তু জানেন কি, প্রসেস করা খাবারে প্রচুর পরিমাণে প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে, আর প্রিভারভেটিভ মানেই সোডিয়াম। থাইরয়েডের ক্ষেত্রে কিন্তু সোডিয়াম খাওয়া একদম উচিত নয়। আর বেশী সোডিয়াম খাওয়া মানেই হাই ব্লাড প্রেশার, যা আপনার থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এমনিতেই কিন্তু এই প্যাকেট করা খাবার না খাওয়াই ভালো। তাই সুস্থ থাকতে এড়িয়েই চলুন, আর ঘরের খাবার ঘরেই তৈরি করে নিন।

৭. বিনস, ডাল আর সবজিতে থাকা অতিরিক্ত ফাইবার : ফাইবার খাওয়া ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার আপনার থাইরয়েডের সমস্যাকে আরও কমপ্লিকেটেড করে দিতে পারে। ‘ডেলি গাইডলাইনস ফর অ্যামেরিকানস’-এর হিসেব অনুযায়ী পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ২০-৩৫ গ্রাম ফাইবার খাওয়া উচিত। আর এর বেশী যদি হয়ে যায়? তাহলে তা কিন্তু হজমের সমস্যা করতে পারে, আর থাইরয়েডের ওষুধের অ্যাবসর্ভে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আপনার ডায়েটে ডাল, বিনস, সবজি সবই রাখুন, কিন্তু একগাদা করে খেয়ে ফেলবেন না।

৮. কফি : কফিতে থাকা ক্যাফেইন কিন্তু থাইরয়েড রিপ্লেসমেন্ট হরমোন মেডিসিনের কাজে বাধা দেয়। তাই যারা নিয়ম করে থাইরয়েডের ওষুধ খান, বা যাদের থাইরয়েডের সমস্যা আছে তাঁরা একটু কষ্ট করে কফি এড়িয়ে চলুন। কারণ কফি অনেকসময় থাইরয়েডকে কন্ট্রোলের বাইরে নিয়ে গিয়ে বিপদও ডেকে আনে।

৯. অ্যালকোহল : আপনার থাইরয়েড আছে, আর তাও কি আপনি অ্যালকোহলের নেশা ছাড়তে পারছেন না? সাবধান! অ্যালকোহল কিন্তু আপনার শরীরে থাইরয়েড হরমোনের সামঞ্জস্যকে একদম নষ্ট করে দিতে পারে। শরীরে স্বাভাবিক থাইরয়েড উৎপাদনকেও ব্যহত করে অ্যালকোহল। তাই অ্যালকোহলের নেশাকে ছাড়ান। আর একান্তই যদি না পারেন? তাহলে মাসে একবার খান, কিন্তু নিয়ম করে নয়।

১০. কোল্ডড্রিঙ্কস : আগেই বলেছি থাইরয়েড থাকলে মিষ্টি বা চিনি একদম খাবেন না। আর কোল্ড ড্রিঙ্কসে তো একগাদা চিনি থাকে, তা আপনারা জানেনই। ভেবে দেখুন, ১০০ মি.লি. মাউন্টেন ডিউতে ১৩ গ্রাম আর কোকাকোলাতে ১০.৬ গ্রাম সুগার থাকে। আর এতটা চিনি আপনার পেটে যাওয়া মানেই বিপদ। আর এমনিতেই কিন্তু এই সফট ড্রিঙ্কসগুলো খাওয়া একদম ভালো না। তাই থাইরয়েড থাকুক কি না থাকুক, আজ থেকেই নাহয় কোল্ড ড্রিঙ্কস না খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করুন। তাহলে আপনার হেলদি অ্যান্ড পারফেক্ট থাইরয়েড ডায়েট জেনে গেলেন তো? এবার এই ডায়েট মেনে চলুন আর থাইরয়েডকে দূরে রেখে সুস্থ থাকুন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.