202773

‘জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার পা কাইট্টা ফালাইছে’

অনলাইন সংস্করণ:- প্রতিদিনের মতো রাস্তার আইল্যান্ডে গাছ পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন মুক্তার মিয়া। হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে একটি কালো রংয়ের একটি গাড়ি (ল্যান্ড রোভার) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আইল্যান্ডে উঠে পড়ে সজোরে ধাক্কা দেয় তাকে। এক পর্যায়ে পায়ের উপর গাড়ি উঠিয়ে দিলে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন তিনি। এরপর আর কিছুই জানেন না। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখেন তিনি হাসপাতালের বিছানায়।

বলছিলাম একজন লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক মুক্তার মিয়ার কথা। কাজের সন্ধানে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে ছুটে যাওয়া এই বাংলাদেশির এখন জায়গা হয়েছে বৈরুতে আমেরিকান হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে।

বিষয়টি জানতে চাইলে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা এই বাংলাদেশি আর্তনাদ করে বলেন, ‘ভাই ডাক্তার আমার একটা পা কাইট্টা ফালাইছে। এখন আমি কি করুম। আমার এই জীবন রাইখ্যা লাভ কি? আমার জীবনটা যে ধ্বংস করছে, তার আমি বিচার চাই।’
হাসপাতালের বিছানায় মুক্তার মিয়া নিজের এমন অপূরণীয় ক্ষতির কথা জানাচ্ছিলেন আর আর্তনাদ করছিলেন। জীবনযুদ্ধে পরবাসে আসা এই বাংলাদেশি এখন পরিবারের ভরণপোষণ কীভাবে করবেন তা নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন। পা হারিয়ে সামনের দিনগুলোতে তিনি আর কোনো আলো দেখতে পাচ্ছেন না।

গত ২৫ জানুয়ারি লেবাননের রাজধানী বৈরুতের আল রৌশা এলাকায় মুক্তার মিয়া (২৫) সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তার ক্ষতিগ্রস্ত পা কেটে বাদ দেন।

মুক্তারের বড় ভাই লেবানন প্রবাসী খোরশেদ মিয়া জানান, প্রতিদিনের মতো সে বৈরুতের আল রৌশা এলাকায় সড়কের আইল্যান্ডে গাছের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ সকাল ৮টার দিকে দ্রুতগতির একটি কালো রংয়ের ল্যান্ড রোভার গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার আইল্যান্ডে উঠে গিয়ে মুক্তার আলীকে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দেয়। পরে রেডক্রসের কর্মীরা মুক্তার আলীকে আমেরিকান হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার শরীরে দুইবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুর্ঘটনায় থেতলে যাওয়া ডান পা কেটে ফেলে।

মুক্তার মিয়াকে আমেরিকান হাসপাতাল থেকে ডামুরের একটি স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এদিকে লেবাননের পুলিশ গাড়িটিকে আটক করেছে এবং গাড়ির চালক বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
অন্যদিকে মুক্তার আলীর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বৈরুত দূতাবাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হাসপাতালে ছুটে যায় এবং তার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করছে বলে মুক্তারের বড় ভাই খোরশেদ জানায়।

আহত প্রবাসী মুক্তার মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানায়। তার বাবার নাম কালা মিয়া। ২০১৩ সালে বড় ভাই লেবানন প্রবাসী খোরশেদ মিয়া তাকে দেশটির একটি কোম্পানির ভিসা লাগিয়ে লেবাননে নিয়ে যান।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.