206047

নিষ্পাপ ভালোবাসার গল্প ‌‌‘মাই স্যাসি গার্ল’

ডেস্ক রিপোর্ট : ‘প্রথম দেখাতেই প্রেম’ বলে একটা কথা আছে। ফার্স্ট ইম্প্রেশনেই কাউকে ভালো লেগে যেতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। ভালো লাগাটা অনেকে মনেই রেখে দেয়। মোহ ভেবে আর পাত্তা দেয় না। হুম, হয়তো সেটা মোহ… কিংবা হতে পারে সেটাই সত্যিকারের একটা ভালোবাসার জ্বালানি।

কিউন-হু খুব সাধাসিধে একটা ছেলে, বয়স আর কত হবে? ১৮/২০? শরীর থেকে এখনো বালক বয়সের স্বভাবটা যায়নি। মাকে নিয়েই তার ভুবন। সেই সাধাসিধে সহজ সরল ছেলেটা রেস্টুরেন্টের জানালা দিয়ে একদিন কী যেন ভেবে বাইরে তাকায়। তারপর শুধু তাকিয়েই থাকে। এক আলোক রশ্মি দেখতে পায়। কিছু সময় পরে আবারও সেই আলোক রশ্মির মুখোমুখি হতে হয় স্টেশনে। একটা মেয়ে, মদ খেয়ে মাতাল। ঢুলু ঢুলু শরীরে পথ চলছে, তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না বাসায় ঠিকভাবে পৌছুতে পারবে। কিছু দায়িত্ব মানুষ নিজেই ঘাড়ে নিয়ে নেয়, আর কিছু দায়িত্ব অযাচিতভাবেই মানুষের অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিতে হয়। কিছুই করার থাকে না সেখানে।

ছেলেটার সাথে মেয়েটাকে দেখে ট্রেনের যাত্রীরা ভাবা শুরু করে দেয়, মেয়েটা ছেলেটার গার্লফ্রেন্ড টাইপ কিছু হবে। মেয়েটা নেশার চক্করে ছেলেটার কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে ঝিমুতে থাকে। একটা সুন্দরী মেয়ে কাঁধে মাথা এলিয়ে ঘুমোচ্ছে- এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছেলেটার জন্য। বারবার তার কাছে মনে হতে থাকে, ইস আজীবন যদি এভাবেই মেয়েটা তার কাঁধে ঘুমাতো… ইস, এই পথটা যদি শেষ না হতো! এক অদ্ভুত সম্পর্ক, যে সম্পর্কটা না ছিল কোন বন্ধুত্বের, না ছিল প্রেমের। যেন এই সম্পর্কটা এই ক্ষণটার জন্য এতদিন প্রস্ফুটিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। রেল স্টেশন, রাতের আকাশের এক কোণে ভেসে থাকা চাঁদটা, ধীর গতিতে এগিয়ে যাওয়া সময়টা, আশেপাশের মানুষগুলো- সবাই যেন অপেক্ষায় ছিল এই দুজন তরুন-তরুণীর ভালোবাসা শুরুর জন্য!

হো সিক কিম একজন লেখক। তার জীবনে এসেছিল এরকমই কিছু ভালোবাসার সুখময় মুহূর্ত, তিনিও অবগাহন করেছিলেন তার জীবনে হঠাৎ করে আসা সেই আলোক রশ্মির দ্যুতির আভায়, তার এবং তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে প্রথম পরিচয়, তাদের ভালোবাসার পথে একসাথে পথ চলা, তাদের প্রেমময় মুহূর্তগুলো সবকিছুর বিবরণ দিয়ে একটা বই লেখেন। পাবলিশ হওয়ার পর রাতারাতি সেই বই কোরিয়ায় “বেস্টসেলিং বই” এর খেতাব অর্জন করে। সেই বইটিতে সবাই যেন নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়। ২০০১ সালে কোরিয়ায় বেস্টসেলিং হওয়া সেই বইটি অবলম্বনে জেই ইয়ংক সিদ্ধান্ত নেন সিনেমা তৈরী করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ, বইয়ের লেখকের সাথে একদিন সাক্ষাত করে তার অনুমতি নিয়ে জেই ইয়ংক সিনেমার স্ক্রিট লেখা শুরু করে দেন। একটা সপ্তাহ দিন-রাত তিনি ডুবে ছিলেন এই স্ক্রিপ্ট লেখার কাজে। স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ করে সিনেমা তৈরীর কাজও শুরু করে দেন তিনি। সিনেমায় সেই প্রেমিক প্রেমিকা জুটিতে দেখা যায় তেই হুন চে ও জি হুন জুনকে।

সিনেমাটি রিলিজ হয় একই বছরেই, ২০০১ সালে। বইটা যেমন সবার মধ্যে সাড়া ফেলে দিয়েছিল, সিনেমাটির ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। সিনেমা হলগুলোতে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের জলের মতো মানুষ যায় এই সিনেমাটি দেখার জন্য! তখনকার সময়ের ব্লকব্লাস্টার হিট এই সিনেমায় আসলে কী এমন ছিল যা দেখার জন্য মানুষ ধৈর্যহারা হয়ে গিয়েছিল? ছবিটার সমগ্র দৃশ্যপটজুড়েই ছিল ভালোবাসার এক মোহনীয় কাহিনী। আমি তোমায় ভালোবাসি- এই কথাটি মুখে বলা হয় না অনেক সময়, হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত থাকে। অনেক সময় সাহস করে বলতে পারে না কেউ। এ যেন এক অন্য ধরনের অনুভূতি, প্রিয় মানুষটার সবকিছুই তখন ভালো লাগতে শুরু করে। তার ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসিটা তখন দেখতে ভালো লাগে, তার কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে, তার এলোকেশি চুল মনে বারবার দোলা দিয়ে যায়। ভালোবাসা বলেকয়ে আসে না। হঠাৎ করে মনের দরজায় কড়া নাড়ে। তার হাতে হাত ধরা পিচঢালা রাস্তায় হাঁটা, বৃষ্টিতে একসাথে ভেজা- এই মুহূর্তগুলো তখন অমূল্য ক্ষণ হিসেবে মানব জীবনে অনুভূত হয়। মাঝেমধ্যে সেজন্যই মনে হয়, লাইফে কেউ একজন থাকলে মন্দ হয় না। আর দুজনের স্বভাবে যদি মিল থাকে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!

ছেলেটি আবোল তাবল, মেয়েটি পাগল পাগল- এই রকম অবস্থায় ভালোবাসার মুহূর্তগুলোতে মাঝেমাঝে জটিল মনস্তাত্ত্বিক দন্ধ এসে হাজির হয়। জীবন নিয়ে দুজনের চিন্তাভাবনাতেই হঠাৎ করে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ভবিষ্যত জীবনের হিসেবনিকেশগুলো তখন এক লহমায় কেমন কঠিন মনে হয়, অবাস্তব মনে হয়। একটা অজানা অচেনা ভবিষ্যৎ, সেই ভবিষ্যতে তাদের ভালোবাসার পরিণতিটা কেমন হতে পারে আসলে? মানুষ তো সবসময়ই ভাবে এক, হয় আরেক। ছেলেটা মেয়েটার ভালোবাসা কি শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পায় নাকি জীবনের চোরাবালিতে সেটা হারিয়ে যায়? বেঁচে থাকার অর্থ, জীবনের গতিপথ কি এভাবেই পরিবর্তন হয়ে যায়? অনেক প্রশ্ন, কিন্তু কোনো উত্তর নেই। উত্তর জানা নেই।

কিছু মানুষের জীবনের অনেকটা সময়ই পার হয়ে যায় তার ভালোবাসার মানুষটাকে খুঁজতে খুঁজতে। কেউ পায়, কেউ পায় না। আবার, কাউকে খুঁজতে হয় না। ভালোবাসা নিজেই তার দুয়ারে এসে উপস্থিত হয়। ভালোবাসার মানুষটাকে তখন যত্ন করে আগলে রাখতে হয়। বাস্তবতাকে সাথে করেই তার হাতটা ধরে পথ চলতে হয়। কে জানে, জীবনে এরকম শুদ্ধতম ভালোবাসা আর তো নাও আসতে পারে? সূত্র : এগিয়ে-চলো

পাঠকের মতামত

Comments are closed.