206053

সাইকেল চালিয়ে ৬৪ জেলা ভ্রমন করা রাকিবের গল্প

ডেস্ক রিপোর্ট : মানুষটার পুরো নাম রাহিবুল হাসান রাকিব। লালমনিরহাট জেলায় জন্ম, কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামে বেড়ে উঠা এই মানুষটির প্রিয় শখ সাইকেল ভ্রমণ। কতটা প্রিয়, তার প্রমাণ তিনি দুই চাকার বাহন নিয়ে ঘুরে ফেলেছেন ৬৪ জেলা। এগিয়ে চলো ডটকমে আজ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণকারী রাহিবুল হাসানের গল্প। তার মুখ থেকেই শুনে আসা যাক এই ভ্রমণবৃত্তান্ত!

শুরুর গল্প
বিডিসাইক্লিস্টস গ্রুপে ঘুরতে ঘুরতে সাইকেলের প্রতি ভালোবাসা, ভাললাগা শুরু হয়। স্বপ্ন দেখি সাইকেল নিয়ে বাংলাদেশকে ঘুরে দেখব। ২০১৬ সাল থেকে ৬৪ জেলায় ভ্রমণ করবো এমন স্বপ্নের বীজ বুনেছিলাম মনে মনে! পনের হাজার বাজেটের সাইকেল ভেলোস ৩০ নিয়ে সাইকেল ট্রাভেলিং শুরু করেছিলাম! এরপর রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে চাকুরী করে ২০১৮ এর কোরবানি ঈদে নতুন সাইকেল কিনেছি। এবারের সাইকেল সারাসেন টাফট্রাক্স কম্প ডিস্ক। এই সাইকেলকে সঙ্গী করে উড়িয়েছি আমার স্বপ্ন বাংলার পথে প্রান্তরে।

পেছনে কতটা পথ ফেলে এলেন সেটাও দেখে নেন রাকিব।

প্রথম লং ট্যুর
২০১৬ সালের অক্টোবর মাস। সেই বছর দুর্গাপূজার ছুটিতে ঘুরবার প্ল্যান হলো। ঠিক করলাম বরিশালে যাব। বরিশাল বিভাগের ৫ টি জেলা দিয়েই শুরু হয় আমার প্রথম সাইকেলে লং ট্যুর! বরিশাল অসাধারণ জায়গা। সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত আমাদের একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দুটোই দেখা যায়। হ্যা, সেই কুয়াকাটা সমুদ্র দেখে সাগরে বিশালতা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়ে গেছে। এই ট্যুর যখন মনে দাগ কাটলো তখন মনে হলো আরেকটু বড় ট্যুর হলে মন্দ হয় না!

বান্দরবানের জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশের পতাকা হাতে রাকিব।

তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ সাইকেলে ভ্রমণ
তারপর চিন্তা করলাম টেকনাফ – তেতুলিয়া একটা ট্যুর যদি দেয়া সম্ভব হয়! কিন্তু, জীবনে সব শখ পূরণের সাথে কিছু অনিচ্ছার কাজ করতে হয়। টিউশনি করে টাকা জোগাড় করতে হয় বলে সবসময় সাইকেলে বড় ট্যুর দেয়া সম্ভব হয় না, তাই ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়! পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা থেকে যাত্রা শুরু করি, টানা ৯ দিন সাইকেল চালানোর পর টেকনাফ পৌছে যাত্রা শেষ হয়!

এই ট্যুর কে প্রকাশ করে এসব শব্দ – প্রচণ্ড রোদ, প্রচণ্ড বৃষ্টি, বাতাস নাই একদম, প্রচণ্ড বিপরীতমুখী বাতাস, রাতের আকাশের তারা , ভোরের স্নিগ্ধ আমেজ! এই ৯ দিনের প্রথম কয়েকদিন পেয়েছি প্রচণ্ড রোদ, শেষের আগের দুইদিন প্রচণ্ড বৃষ্টি, মেরিন ড্রাইভের প্রচণ্ড বিপরীতমুখী বাতাস, প্রায় ৫ দিন রাতে চালাতে হয়েছে তখন তারার মেলা দেখেছি!

শেষমেশ ৬৪ জেলা সাইকেলে ঘোরা
যেহেতু বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে তাই একবারে ৬৪ জেলা পূরণ করা সম্ভব নয়! তাই চিন্তা করি ভেংগে ভেংগে ৬৪ জেলা সাইকেলে চালাবো! শেষ ৪১ জেলা ট্যুরে প্রত্যেকদিনের রুট প্লান আমি নিজের হাতে করেছি, অনেক সময় নিয়ে করা লেগেছে! ২৭ দিনে, ২৯০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ৪১ জেলা ভ্রমণ করেছি! শুধু নৌপথে যানবাহনের সাহায্য নিয়ে পুরাটা সাইকেলে শেষ করেছি! আমি যে শুধু সাইকেল চালিয়েছি তা কিন্তু নয় প্রত্যেক জেলার দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও বিখ্যাত খাবার টেস্ট করা ছিলো আমার কাজ!

পেছনের দিগন্তকে ফেলে রেখে সামনের দিগন্তে নজর দেশবিজয়ী রাকিবের।

স্মৃতিময় ঘটনা
আমি সাইকেল চালানোর সময় একটা সময় পর পর ব্রেক নিতাম, সে ব্রেকেই আমার সব স্মৃতিময় ঘটনা ঘটেছে! প্রত্যেকটি ব্রেকেই এলাকাবাসীদের সাথে আড্ডা জমে উঠত, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতাম আমরা, সেখানকার সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস বুঝার চেষ্টা করতাম! মনে পড়ে নওগাঁর এক ভাই প্রায় ২০ কিলোমিটার আমার সাথে মোটরসাইকেল চালিয়ে আমার অভিজ্ঞতা শুনেছেন! শেষে দুপুরের খাবার না খেয়ে যেতে দেননি! তারপর মনে পড়ে মধুপুর গড়ের পূর্বে এক চা দোকানদার এক পয়সা বিল নেননি, আমি তাকে অনুরোধ করার পরও, এভাবে পথে পথে অনেক মানুষ সহযোগীতা করেছেন! এরপর রাঙামাটি – কাপ্তাই রোডে আসামবস্তি এলাকায় হাতির ভয়ের কথা! কতটা ভয়ের মধ্যে সাইকেল চালিয়েছি সেটা এখনো মনে পড়ে!

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইচ্ছা আছে দেশেই আরো কিছুদিন ঘুরতে, তারপর ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা যাওয়ার ইচ্ছা আছে! অবশ্যই স্পন্সর পেলে বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটরেবল রাস্তা খারদুংলা পাস যাওয়ার স্বপ্ন আছে! সাইকেল ভ্রমণ অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব এবং সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হলো, সাইকেল ট্যুরে নিজেকে নতুনভাবে চেনা যায়। প্রকৃতি আমাদের জন্য কত রুপের বাহার ছড়িয়ে রেখেছে, তা জানার জন্য সাইকেল ট্যুর খুব দারুণ এক উপায়। এই প্রকৃতির মায়ায় পড়ে গেছি, হয়ত এই প্রকৃতি হবে আমার ঠিকানা!
সূত্র : এগিয়ে-চলো

পাঠকের মতামত

Comments are closed.