214592

জাতীয় জাদুঘরের প্রত্নসম্পদ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দিতে নকলের আশ্রয় (ভিডিও)

নিউজ ডেস্ক : জাতীয় জাদুঘর ঐতিহাসিক নিদর্শনের এক তথ্যভাণ্ডার। এক লাখেরও বেশি প্রত্নসম্পদ রয়েছে। কিন্তু প্রায়ই সেখান থেকে চুরি হয় প্রত্নসম্পদ। ২০১০ সালের এমন একটি ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, নকল নিদর্শন বানিয়ে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে, চুরির বিষয়টি। জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি বোর্ড সভাপতি হাশেম খান জানান, শুধু চুরি নয়, প্রতিষ্ঠানটির সংগৃহীত নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে, বিদেশি নকল জিনিসও। খবর চ্যানেল২৪।

জাতীয় জাদুঘর, পেরিয়েছে প্রতিষ্ঠার একশ বছর। যুক্ত হয়েছে হাজার বছর আগের প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন ছাড়াও, ধ্রুপদী, অলংকারিক, সমসাময়িক শিল্প, ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতাসহ নানা নিদর্শন। কিন্তু বিভিন্ন সময় এখান থেকে চুরি হয় মূল্যবান জিনিস। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সালে ২১ নম্বর গ্যালারি থেকে খোয়া যায় ২৬টি নিদর্শন। ওই ঘটনায় মামলা হয় শাহবাগ থানায়। সাময়িক বরখাস্ত হন উপ-কিপার নূরে নাসরিন, সহকারী কিপার সাইফুজ্জামান ও ৩ কর্মচারী। ২০১১ সালে রহস্যজনকভাবে ২০টি নিদর্শন পাওয়া গেলেও, খোঁজ মেলেনি ছয়টি পদকের।

এক বছর পর কীভাবে মিললো চুরি হওয়া প্রত্নসম্পদ, প্রশ্ন ছিলো জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক প্রকাশ চন্দ্র দাসের কাছে। কিন্তু সবকিছু মনে থাকলেও, কিছুতেই মনে করতে পারলেন না এটি। তিনি বলেন, মনে নেই, হয়তো স্টোরে পাওয়া যায়। ডিপার্টমেন্টের ভিতরেই পাওয়া গেছে বাইরে না।

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, স্টোর বা গ্যালারিতে মেলেনি চুরি যাওয়া সামগ্রী। এমনকী শনাক্ত হয়নি অপরাধীও। তাহলে কোথায় পাওয়া গেলো? তা জানতে অনুসন্ধান শুরু হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাদুঘরে সে সময়ের কর্মকর্তা মোস্তফা কামালের মাধ্যমে নকল মুদ্রা ও পদক বানিয়ে ধামাচাপা দেয়া হয় ঘটনা।

জাদুঘরের ট্রাস্টিবোর্ডের চেয়ারম্যান হাশেম খানও জানান, প্রতিষ্ঠানটির একটি চক্রই অপকর্মে জড়িত। তিনি বলেন, একটি চক্র আছে, যারা ট্রাস্টি বোর্ডকে সান্তনা দিয়ে বলে মিটমাট হয়ে গেছে। ডিসপ্লে শাখার সাবেক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, নূরে নাসরিন করাইছে। কিপার, উপকিপার সহকারী কিপার সবাই জড়িত, সবাই অপরাধী, সাজুরে দিয়ে করাইছে তারা কাজটা। কে এই সাজু? জানা যায়, কাঁটাবনে ভাই-ভাই মেটাল নামে দোকান রয়েছে তার।

সেখানে অনুসন্ধান করে জানা যায়, দুই বছর থেকে সাজুর দোকান নেই। তাঁকে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান, জাদুঘরের কেউ নাম্বার দিছে? যারা কোটি কোটি টাকা মারে তাদের কিছু হয় না, কে বানাতে দিছে মনে নেই। অনুসন্ধানে জানা যায়, শাঁখারী বাজারের মহাদেব সিংহের দোকান থেকে বানানো হয়, এসব নকল নিদর্শন। ক্রেতা সেজে পদক ও কয়েনের ছবি দেখালে মহাদেব বলেন, দেশে তৈরি করা সম্ভব না, এটা তার কাজও না।

পরে অবশ্য ফোনে মহাদেব শিকার করেন। তিনি বলেন, ২০১০ কয়েন বানাই দিছি, আড়াই বছর আগেও সাজু বানিয়ে নিয়ে গেছে, পদকও বানাতে পারবেন, তবে ম্যাটাল আসল হবে না। তাহলে প্রায়ই কি জাদুঘর থেকে মূল্যবান নিদর্শন সরিয়ে, রাখা হয় নকল জিনিস? চুরি হওয়া প্রত্নতত্ত্বই বা যাচ্ছে কোথায়? নকল নিদর্শন বানানোর বিষয়ে শুনেছেন হাশেম খানও।

জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাশেম খান বলেন, সেই সময় ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। চুরি হয়েছে সেগুলো আমি শুনেছি, শাখারিবাজার থেকে বানানোর কথা শুনেছি, এমনকি জাদুঘরে বিদেশি নকল জিনিসও আছে, তদন্ত করছি।
ফোনে কথা বলা হয় জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিপার রেজাউল করিমের সাথে। তিনি বলেন, বিভিন্ন হাত ঘুরে বিদেশে পাচার করতে পারে, চক্রের সাথে না থাকলে কিভাবে হয়, বলা মুশকিল।

মোস্তফা কামালের বক্তব্য এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নূরে নাসরিন, সাইফুজ্জামান ও মনিরুল হকের কথা। নিদর্শন খোয়া যাওয়ার বিষয়ে মিল পাওয়া যায়নি তাদের বক্তব্যে। তবে জাদুঘরের মহাপরিচালক জানান, সহজেই পরীক্ষা করা যাবে এবং নকল নিদর্শন থাকলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।

জাদুঘরে এমন চুরির ঘটনা ঘটেছে ২০টির মতো। একটির অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। আলোচিত সেই চুরির পরের বছর আবারও খোয়া যায় নিদর্শন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চুরি প্রতিরোধে সরকারকেই নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। না হলে জাদুঘর হারাতেই থাকবে ঐতিহাসিক মহামূল্যবান সম্পদ।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.