231913

আসছে ঈদ, ঝুঁকিতে রয়েছে বুথ

ঈদে ঝুঁকিতে এটিএম বুথ

ডেস্ক রিপোর্ট : ঈদের ছুটির মধ্যে রাজধানীর এটিএম বুথগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দেশি-বিদেশি জালিয়াতচক্র ছাড়াও দেশের বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরা বুথের টাকা লুট করার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা। এ বছর ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যানজটমুক্ত থাকায় প্রায় অধিকাংশ বাসিন্দাই নাড়ীর টানে ঢাকা ছাড়ছেন।

আর এ সুযোগে নানা অপরাধীচক্র তৎপর হচ্ছে। নগরীতে চুরি-ডাকাতির পাশাপাশি এটিএম বুথ লুট করার আশঙ্কাও রয়েছে। আর এটিএম বুথ লুটের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিকিউরিটি কোম্পানির সদস্যরাই অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ লুটের ঘটনার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাঞ্চল্যকর তথ্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে এটিএম বুথে জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছেন দেশি-বিদেশি জালিয়াত ও প্রতারকরা।

এসব জালিয়াতচক্র ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে লাখ লাখ টাকা লুট করছে। বাংলাদেশি সোর্সদের সহযোগিতায় নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন তারা। আর ঈদের ছুটির মধ্যে এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হচ্ছে। গত শনিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারণার অভিযোগে ৬ বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে।

পুলিশ জানায়, রাজধানীর ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে কার্ড জালিয়াতি করে তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে একটি জালিয়াতচক্র। এরপর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল গত শনিবার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছয় বিদেশি নাগরিককে আটক করে। আটকরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক বলে পুলিশ জানিয়েছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন- ভ্যালেনটাইন (পাসপোর্ট নম্বর ইওয়াই ০৫১৫৬২), ওলেগ (পাসপোর্ট নম্বর ইএক্স ০৮৯৯৬৩), ডেনিস (পাসপোর্ট নম্বর এফএল ০১৯৮৩৪) নাজেরি (পাসপোর্ট নম্বর এফটি ৫০০৫০১), সার্গি (পাসপোর্ট নম্বর এফএইচ ৪২৪৩৯৪) ও ভোলোবিহাইন (পাসপোর্ট এফটি ৩৭৯৯৮৩)।

এরা সবাই রাজধানীর পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন আবাসিক হোটেলে উঠেছিলেন বলে জানা গছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহিদুর রহমান রিপন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই জালিয়াতচক্রটির একাধিক সদস্য এখনো পলাতক রয়েছেন।

আটক ব্যক্তিদের সহযোগীদের আটক করতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। এই প্রতারক ও জালিয়াতচক্রের সাতজন ইউক্রেন থেকে একসঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে। এদের মধ্যে ভিটালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৪৮) অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। তবে সে যাতে বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য দেশের সবকটি ইমিগ্রেশন পয়েন্টে তার বিষয়ে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।

অপর এক সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে দুজন বিদেশি নাগরিক তিন লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান। সেখান থেকে তারা যাওয়ার সময় তারা কিছু টাকা বুথে ফেলে যায়। পরে এই বিষয়টি বুথের নিরাপত্তারক্ষী ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন।

আর ওই ফুটেজে দুই বিদেশি নাগরিকের টাকা উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু ব্যাংকের সার্ভারে এই টাকা উত্তোলনের কোনো হিসাব জমা না পড়ায় বিষয়টি ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এরপর গত শনিবারও দুই বিদেশি নাগরিক পুনরায় একই বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে যান।

তাদের মুখে মাস্ক ও মাথায় ক্যাপ এবং বেশি সময় নেয়ার কারণে নিরাপত্তারক্ষী আশপাশের লোকজন ডেকে জড়ো করেন। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে সেখান থেকে দুই বিদেশি নাগরিক পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের একজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশকে জানানো হয়। এরপর আটক ব্যক্তির দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে আরও ছয়জনকে আটক করা হয়।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আটক ব্যক্তিদের বুথ থেকে জালিয়াতচক্রটি মোট চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে যাতে ব্যাংকের সার্ভারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ৩০ মে সাতজন ইউক্রেনের নাগরিক তাদের হোটেলের অষ্টম তলার ৮০৫ ও ৮০৭ নম্বরের দুটি কক্ষ ভাড়া নেয়। তারা দিনের বেলা ঘন ঘন বাইরে বের হতো ও প্রবেশ করতেন। এরপর গত শনিবার গোয়েন্দা পুলিশ তাদের আটক করে নিয়ে যায়।

এই জালিয়াতচক্র যে পদ্ধতিতে এটিএম বুথ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সহজেই বুঝতে পারে না। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো কোনো বুথ থেকে টাকা তুলেছে কিনা তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে। বিদেশি ছাড়াও এদের এক শ্রেণির সিকিউরিটি গার্ড কর্তৃক এটিএম বুথ থেকে টাকা লুটের ঘটনা অহরহ ঘটছেই। শুধু তাই নয়, এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডদের হত্যার পর টাকা লুট করা হচ্ছে।

গত ২১ জানুয়ারি রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় শামীম (২৪) নামের এক নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার পর টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন সোমবার ভোর ৬টার দিকে ভাটারা থানার বারিধারা ‘জে’ ব্লকের যমুনা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

বারিধারা ‘জে’ ব্লকের কাতিল ফার্নিচারের নিচে যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে শামীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় আঘাত চিহ্ন রয়েছে। ভারী কোনো কিছু দিয়ে আঘাতের পর হত্যা করা হয়েছে। বুথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতককে আটকের পর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে, বলেন তিনি।

গত বছর রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড-ইবিএলের এটিএম বুথ থেকে এক নিরাপত্তাকর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এটিএম বুথের ভেতরে নিরাপত্তাকর্মীর লাশ পড়ে ছিল। নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করেছে।

তাছাড়া, রাজধানীর উত্তরায় একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে গত মে মাসের প্রথম দিন বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছে পুলিশ। একটি ওষুধের বাক্সে বস্তুটি রাখা ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট। উত্তরার ৬নং সেক্টর এলাকার রাজউক কলেজের পাশে একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে বস্তুটি উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) ঘটনার পর সাংবাদিকদের জানান, প্রেসার মেশিন যন্ত্রের দড়ি নিয়ে এর সঙ্গে তার পেঁচিয়ে সেটা ওষুধের বাক্সে বসিয়ে টাইমার বোঝানো হয়েছিল। টাইমার দেখে বোমা সাদৃশ্য মনে হলেও বাক্সটি খুলে কিছু ওষুধ পাওয়া যায়। কেউ রসিকতা বা আতঙ্ক ছড়াতে এ কাজটি করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এমন কাজ একেবারেই অনুচিত। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঈদ সামনে রেখে রাজধানীসহ সারাদেশের নিরাপত্তার বিষয়ে বলেছেন, বড় সব ঈদ জামাতে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে।

তিনি বলেন, বড় বড় জামাতে সাদা পোশাকে, ইউনিফর্মে এবং ছদ্মবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে ঈদসামগ্রী প্রদান শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

ঈদে রাজধানীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। রাজধানীতে কোনো ধরনের অঘটন ঘটবে না। ছিনতাই, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি কমেছে। বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সবাই সতর্ক থাকলে কোনো ঘটনা ঘটবে না।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.