অল্প দিনেই যেভাবে মোহাম্মদপুরের সুলতান হয়ে ওঠেন রাজীব
ডেস্ক রিপোর্ট : যুবলীগ দিয়েই শুরু হয় তারেকুজ্জামান রাজীবের রাজনৈতিক জীবন। চালাক-চতুর হওয়ায় অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে এসে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার পর যেন হাতে পান আলাদিনের চেরাগ। অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন এলাকার অলিখিত সুলতান। চাঁদাবাজি ও দখলের টাকায় রাতারাতি ধনকুবের বনে যান। রাস্তায় বের হতেন বিশাল গাড়িবহর আর প্রটোকল নিয়ে। গতকাল রাতে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার মধ্য দিয়ে মোহাম্মদপুরে আপাতত রাজীবের সুলতানীর অবসান হলো।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির বাড়ির ছোট্ট এক কক্ষে সস্ত্রীক ভাড়া থাকতেন রাজীব। ভাড়া দিতেন ৬ হাজার টাকা। এখন ওই হাউজিংয়েই নির্মাণ করেছেন রাজপ্রাসাদের আদলে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। নামে-বেনামে তার অন্তত ছয়টি বাড়ি রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকাতেই।
এ ছাড়াও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, দুবাইয়ে বুর্জ খলিফার পাশে একটি বাড়ি এবং সৌদি প্রবাসী মিজান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে হোটেল ব্যবসায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ছয় বছর আগে একমাত্র বাহন মোটরসাইকেলের পরিবর্তে এখন তার মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কারসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ি। কিছুদিন পরপরই পরিবর্তন করেন গাড়ির ব্র্যান্ড। যেখানেই যান, তার গাড়িবহরের সামনে-পেছনে থাকে শতাধিক সহযোগীর একটি দল।
মাত্র এক বছর রাজনীতি করেই বাগিয়ে নেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ। এর পরই থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে জুতাপিটাসহ লাঞ্ছিত করেন। সে সময় সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে উল্টো ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বনে যান তারেকুজ্জামান রাজীব। কেন্দ্রীয় যুবলীগের আলোচিত দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমানকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে এ পদ পান বলে জানা যায়।
২০১৪ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তারেকুজ্জামান রাজীব। এর আগে রাজনীতির পাশাপাশি এক চাচাকে কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন। ঠিকাদার ওই চাচাই নিজের একটি জমি বিক্রি করে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে তাকে নির্বাচন করান। কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই সম্পূর্ণ বদলে যান রাজীব। তার চালচলনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এখন ওই চাচার সঙ্গেও যোগাযোগ নেই তার।
রাজীবের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ। আর সেই টাকা দিয়েই গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য জানা গেছে, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটে রাজীবের ডুপ্লেক্স বাড়িটি করতে খরচ হয়েছে ছয় কোটি টাকা।
এর বাইরে রহিম ব্যাপারী ঘাট মসজিদের সামনে আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তির ৩৫ কাঠার একটি প্লট যুবলীগের কার্যালয়ের নামে দখলে নেন। ওই জমির পাশেই জাকির হোসেনের সাত কিংবা আট কাঠার একটি প্লট দখল করেছেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের ময়ূর ভিলার মালিক রফিক মিয়ার কয়েক কোটি টাকা মূল্যে জমিও দখল করেন রাজীব। পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে জমিটি দখল করা হলেও সেখানে পাঁচটি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
ঢাকা রিয়েল এস্টেটের ৩ নম্বর সড়কের ৫৬ নম্বর প্লট, চাঁদ উদ্যানের ৩ নম্বর রোডের রহিমা আক্তার রাহি, বাবুল ও মো. জসিমের তিনটি প্লটসহ অন্তত দশটি প্লট দখল করেছেন মোহাম্মদপুরের এই সুলতান।
মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে আল্লাহ করিম মসজিদ ও মার্কেটের নিয়ন্ত্রণও রাজীবের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বসিলা এলাকার পরিবহনে চাঁদাবাজিও তার নিয়ন্ত্রণে। অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলে তার লোকজন। পাঁচ বছর ধরে এলাকার কোরবানির পশুরহাটের ইজারাও নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন রাজীব।
এর বাইরে মোহাম্মদপুর এলাকার সব মাকের্টেও তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। রাজীবের সব অপকর্মের সঙ্গী স্ত্রীর বড় ভাই ইমতিহান হোসেন ইমতি, যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবন, সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, ফারুকসহ অর্ধশত ক্যাডার। অভিযোগ রয়েছে, রাজীবের নির্দেশেই যুবলীগকর্মী তছিরকে হত্যা করে তার ঘনিষ্ঠরা। দৈনিক আমাদের সময়