255225

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিত রাখার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশেষজ্ঞরা উপযুক্ত ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ভাসানচরে স্থানান্তর স্থগিত রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ভাসানচরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরে বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণার পর এই আহ্বান জানালো ওয়াশিংটন।

‘দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার’ শীর্ষক কংগ্রেশনাল এক শুনানিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালিস ওয়েলস ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।

কংগ্রেশনাল শুনানিতে অ্যালিস ওয়েলস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে বারবার আশ্বস্ত করেছেন। স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা স্থানটিকে উপযুক্ত ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত ভাসানচরে কোনো শরণার্থীদের স্থানান্তর স্থগিত রাখার জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

যুক্তরাষ্ট্রেরর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যর্পণের পরিবেশ সৃষ্টি এবং আনান কমিশনের সুপারিশ অনুসারে তাদের অধিকার দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ সাল থেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরো প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। দীর্ঘদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যায়নি। মিয়ানমার থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে ফেরত পাঠানোর আগ পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকে ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য গত বছর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। সাগরবর্তী এই বিস্তৃর্ণ চরটির উন্নয়নে ২৮ কোটি ডলার ব্যয় করছে বাংলাদেশ। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই চরটির উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে, ভাসানচরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। জাতিসংঘ থেকেও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে না গেলে তাদের সেখানে জোর করে নেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার ভাসানচর নিয়ে কোনো লুকোচুরি করছে না। সব নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে আগ্রহী কূটনীতিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।

কংগ্রেশনাল শুনানিতে ভারতের জম্মু-কাশ্মির মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আসাম রাজ্যের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ইস্যুও গুরুত্ব পেয়েছে। তবে অ্যালিস ওয়েলসের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশের পরিস্থিতি স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রমনীতির বিষয়ে মন্তব্যে অ্যালিস বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র যে পথে ধাবিত হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ এখনও রয়েছে।

অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আরো বলেন, আমরা এখনও মনে করি, নাগরিক সমাজ ও তাদের সংগঠনকে কাজ করতে দেওয়া, অনলাইনসহ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে তাদের মত মুক্তভাবে প্রকাশের সুযোগ এবং গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনীতিকদের আইনি ভূমিকা পালন করতে দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.