255477

সম্মেলনে যোগ ট্রেনের প্রথম শ্রেণির ৩৮০ ফ্রি টিকেট চেয়েছে চট্টগ্রাম কৃষক লীগ, বিব্রত রেলওয়ে

ঢাকার জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে ৩৮০ টিকিট ফ্রি দিতে অনুরোধ জানিয়েছে চট্টগ্রাম কৃষক লীগ। কৃষক লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এ অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে।

৬ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ১৯০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষক যোগ দেবেন। তারা ৫ নভেম্বর ঢাকা যাবেন এবং ৬ নভেম্বর সম্মেলন শেষে রাতে চট্টগ্রামে ফিরবেন বলে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানান হয়।

তাদের পক্ষ থেকে যাওয়া-আসার জন্য রেলওয়ের কাছে তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেসের চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রথম শ্রেণির ফ্রি টিকিট চেয়েছে সংগঠনটি। কৃষক লীগের এমন চিঠিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিব্রত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ে কৃষক লীগ নেতাদের লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের বিনা মূল্যে টিকিট সরবরাহের কোনো বিধান নেই।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কৃষক লীগের আবেদনটি আমরা পেয়েছি। রেলওয়েতে ফ্রি টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। টিকিট পেতে হলে টাকা দিয়ে কিনতে হবে। রেলওয়ে সূত্রমতে, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের প্রথম শ্রেণির প্রতিটি টিকিটের দাম ৭৩৫ টাকা। সেই হিসেবে ক্ষেত্রে ৩৮০টি টিকিটের দাম আসে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০ অক্টোবর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (সিসিএম) উদ্দেশ্য করে চিঠি দেয় বাংলাদেশ কৃষক লীগ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি। সংগঠনটির প্যাডে সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই ফ্রি টিকিটের আবেদন জানানো হয়।

আবেদনের সঙ্গে ১৯০ জন প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকের নাম, পরিচয় ও মোবাইল ফোন নম্বরও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কৃষক লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান তারা দরিদ্র কৃষক হিসেবে এই ফ্রি টিকিটের আবেদন করেছিলেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন, আমরা গরিব কৃষক। বেশির ভাগের আর্থিক অবস্থা ভালো না। ট্রেনের টিকিট কেনার টাকা নাই। এ জন্য আমরা লিখিতভাবে জানিয়েছি, ফ্রি টিকিট দেওয়ার কোনো সিস্টেম আছে কি না। আমরা চেয়েছি আমাদের ১৯০ জনের যাওয়া-আসার জন্য যেন একটা বগি দেওয়া হয়।

তবে প্রতিনিধি তালিকায় থাকা অনেকে ট্রেনের টিকিট ফ্রি চাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের দাবি, তারা প্রত্যেকে ট্রেনের টিকিটের জন্য এক হাজার টাকা করে দিয়েছেন।

এর জবাবে নজরুল ইসলাম জানান, যখন রেলওয়ে থেকে জানিয়ে দিল যে তাদের ফ্রি দেওয়ার সিস্টেম নাই, তখন আমরা সবাইকে বললাম যারা যারা যেতে ইচ্ছুক তারা যেন চাঁদা দেয়। যেতে-আসতে খাওয়া-দাওয়া করার তো খরচ আছে। আগে আমরা ১৯০ জনের ফ্রি টিকিটের আবেদন করেছিলাম। সেটি নাকচ হওয়ার পর এখন ১৪০ জনের জন্য আবার দরখাস্ত করেছি টাকা দিয়ে টিকিট কেনার জন্য।

তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, একসঙ্গে এভাবে ১৪০ যাত্রীর জন্য টিকিট বিক্রি করা যাবে কি না, সেটা তাদের দেখতে হবে। বাংলাদেশের কয়েকটি সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে রেলওয়ের প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ পাবেন।

রেলওয়ে যেখানে জনগণের অর্থে পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেখানে লিখিতভাবে এই ফ্রি টিকিট চাওয়ার বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, এ ধরনের আবেদনকে কোনো অবস্থায় যৌক্তিক বলে বিবেচনা করা যাবে না। এটা বেআইনি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। তারা তাদের মূল সংগঠনের ক্ষমতা ব্যবহার করেই এ ধরনের আবেদন জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.