256759

সরকারি অফিস-আদালতে ‘বিজয়’ ছাড়া অন্য কিবোর্ড এর অনুমোদন নেই : মোস্তফা জব্বার

‘বিজয় বাংলা কীবোর্ড’ জাতীয় প্রমিত মানের কীবোর্ড হিসেবে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হওয়ায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি এই কীবোর্ড ব্যবহার করে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

মন্ত্রী স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বিজয় বাংলা কীবোর্ড ৩.০ এখন জাতীয় প্রমিত মান। যেটির বিডিএস নাম্বার ১৭৩৮:২০১৮। সরকারি নিয়ম অনুসারে কেবলমাত্র এই কীবোর্ডই সর্বত্র ব্যবহৃত হবার কথা। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং কেবিনেট ডিভিসন তেমন নির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশে আর কোনো কীবোর্ড এর সরকারি স্বীকৃতি নেই। সবাই প্রমিত মান মেনে চলুন। সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা হবে এই কী বোর্ডেই। এখন পর্যন্ত বিজয় ছাড়া এসব মানসম্মত আর কোনো কী বোর্ড বা সফটওয়্যার বাংলাদেশে নেই।’

পরবর্তীতে গতকাল (২ নভেম্বর) তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে বাংলাকে রোমান না লিখতে আহবান জানিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, আসুন বাংলা হরফে বাংলা লিখি। রোমান হরফে বাংলা লিখে বাংলা হরফকে অসম্মান ও বাংলা ভাষাকে আমরা বিকৃত করতে পারিনা।

মন্ত্রীর এই স্ট্যাটাসের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন অনেকেই। অনেকের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা ও দুশ্চিন্তা। তার ঐ পোস্টের নিচেই এমন অনেক কমেন্ট লক্ষ্য করা যায়। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে গেছেন ফেসবুক ব্যবহারকীরা।

এমডি সুমন খালিদ নামের একজন লিখেছেন, “স্যার, প্রধান উদ্দেশ্য বাংলা লেখা। সেটা কিভাবে, কোন কিবোর্ড দিয়ে লেখা হলো এটা কি নির্দেশনা দিয়ে সীমাবদ্ধ করে দেয়াটা ঠিক?”

মোস্তফা জব্বারকে উদ্দেশ্যে করে আসাদুজ্জামান সবুজ নামের একজনের মন্তব্য, “বাঙালী এবং বাংলা ভাষার জন্য এত টান থাকলে বিজয়কে ওপেন সোর্স করতে পারতেন। সহজ ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হিসেবে চিন্তা করলে অভ্রই এগিয়ে থাকবে।”

“স্যার বাংলা বাঙালীর ভাষা, কিন্তু বাঙালীরা তো এসব প্রযুক্তি আবিষ্কার করেনি। তারাই করেছে। এবং তারা পরিক্ষা নীরিক্ষা করেই এসব সফটওয়্যার এর লাইসেন্স স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।”

মেহেদী হাসান অর্পণ নামের একজনের প্রশ্ন, “এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কি সরকারের কোন নির্দেশনা আছে? সরকারি দপ্তরগুলোতে যদি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিজয় ব্যবহার না করতে চায়, তাহলে তাদের কী করণীয়?”

অবশ্য প্রায় সবারই প্রশ্নের ও মন্তব্যের যথাযথ উত্তর দেয়ার দেয়ার চেষ্টা করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নিজেই।

এ প্রসঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দি বাংলাদেশ টুডে’র পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটিও হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘বিজয় বাংলা কীবোর্ড এখন সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জাতীয় প্রমিত মানের কীবোর্ড। নিঃসন্দেহে খুব বড় একটি সুসংবাদ । কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী বলেছেন- ‘সরকারি নিয়ম অনুসারে কেবলমাত্র এই কীবোর্ড-ই সর্বত্র ব্যবহার হবার কথা’। জাতির কাছে প্রশ্ন -‘‘আমরা কি খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, চলাফেরা, দৈনন্দিন কাজ সব কিছুই কি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করি?’

এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার একটি কারণ আছে- সেটা হলো ‘এক সময় ‘ইউনিজয় (Unijoy)’ নামে একটি ওপেন সোর্স ‘বাংলা কীবোর্ড’ ছিল যার ডেভেলপমেন্টে কাজ করতো অনেক মেধাবী ছেলেমেয়ে। মেধাবীদের মেধা বিকাশে এবং নিত্যনতুন সৃষ্টিতে এই ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী সমাদিত। সেই ওপেনসোর্স প্ল্যাটফর্মের ‘ইউনিজয় বাংলা কীবোর্ড’ টিকে আইন করে কোর্ট অর্ডার নিয়ে তাদেরকে নাকানিচুবানি খাইয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল বিজয় কীবোর্ড কর্তৃপক্ষ। বিজয় কী-বোর্ড কর্তৃপক্ষ দেশে ডেভেলপার তৈরি করার কাজে কখনোই সহায়ক ছিল না, তারা শুধু ব্যবসা চিনে, বিজয় ছাড়া অন্য কেউ দেশে বাংলা কীবোর্ড নিয়ে কাজ করবে এটা তারা মেনে নিতেই পারেন না।

তাই ভয় হয় সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিজয় কীবোর্ডটি যেন নিয়ম না হয়ে আবার আইন হয়ে যায়- অর্থ্যাৎ এমনও হতে পারে বিজয় কীবোর্ড ছাড়া অন্য কোন কীবোর্ড ব্যবহার করলে ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে, মোবাইলকোর্ট বসিয়ে জরিমানা আদায় করা হবে।

সর্বত্র কোন কী-বোর্ড ব্যবহৃত হবে- সেটা চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়, ব্যবহারকারীরা যে যেটা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে তারা সেটাই করবে। একটা কীবোর্ড সফটওয়ারে প্রমিত মান কিংবা স্বীকৃতির কিছু নেই, বিজয় এর ডেভেলপাররা এমন কোন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করেন না যা অতি মাত্রায় আধুনিক অন্যকেউ পারে না, কিবোর্ডের বাটন তৈরিতে এমন কোন প্লাস্টিক ব্যবহার করেন না যেখানে হালাল-হারামের ব্যাপার আছে…।

যদিও আমি গত ২০ বছর ধরে বিজয় কীবোর্ড ব্যবহারকারী কিন্তু আমি চাই বাংলা কীবোর্ড নিয়ে দেশে আরও মেধাবিরা কাজ করুক, কারণ বাংলা ল্যাংগুয়েজকে ম্যাশিন ল্যাংগুয়েজে কাজ করাতে হলে এখনো প্রচুর গবেষণা বাকী, তাই বিজয়দের ভয়ে ইউনিজয় এর মতো আর কেউ যেন থেমে না যায়…।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.