বাগদাদি মৃত্যুর ভয়ে মাঝে মাঝেই মেষপালকের ছদ্মবেশ নিতেন
ডেস্ক রিপোর্ট : গত ২৬ অক্টোবর সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বারিশা এলাকায় মার্কিন বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সর্বোচ্চ নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। মৃত্যুর আগে সারাক্ষণ শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়ার আতঙ্ক তাড়া করতো তাকে। তাই মাঝেমধ্যেই মেষপালকের বেশ ধরতেন তিনি। তার সন্দেহ ছিলো, যে কোনও সময়, যে কোনও দিক থেকে আক্রমণ আসতে পারে। তার মানসিক অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, খুব কাছের লোকদের প্রতিও অবিশ্বাস জন্মেছিলো। এপি
আকস্মিক সেই হামলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েন বাগদাদি। তিন সন্তানকে নিয়ে একটি সুড়ঙ্গের মধ্যে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে তিন সন্তান ও নিজেকে উড়িয়ে দেন বাগদাদি। সেই সময় তার কয়েক জন সহযোগী ওই সুড়ঙ্গে অবস্থান করছিলো। তাদের মধ্যে কয়েক জন মার্কিন সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায়। আবার আত্মসমর্পণও করেন কয়েক জন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
আত্মসমর্পণকারী ওই আইএস জঙ্গিরা মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জানান, মার্কিন যৌথ বাহিনীর লাগাতার হামলায় ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো আইএস। তাদের দখলে থাকা একাধিক এলাকাও একে একে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো। তাতেই নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করেছিলো বাগদাদিকে। জীবনের শেষ দিনগুলিতে উৎকণ্ঠায় ভুগছিলেন তিনি। ইরাক সীমান্তে পূর্ব সিরিয়ার যেটুকু অংশ তাদের হাতে বেঁচেছিলো, সেখানেই নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। শেষমেশ আলকায়দা-সহ প্রতিদ্বন্দ্বী জঙ্গি সংগঠনগুলির সম্রাজ্য উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ইদলিবেই আস্তানা গাড়েন তিনি। হাতেগোনা কয়েক জন ছাড়া আর কারও সেখানে যাওয়ার অনুমতি ছিলো না।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবের আল-আরবিয়া চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন বাগদাদির আত্মীয় মোহাম্মদ আলি সাজিদ। তিনি জানান, মৃত্যুর আগের কয়েক মাস সর্বদা উৎকণ্ঠায় ভুগতেন বাগদাদি। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও আগের চেয়ে অনেক বেশি খুঁতখুঁতে হয়ে উঠেছিলেন। রাতের অন্ধকার ছাড়া বাইরে বের হতেন না। একান্তই বের হতে হলে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে, নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে বাহিরে যেতেন। সেইসময় তাকে ‘হাজি’ বা ‘শেখ’ বলেই ডাকতো নিরাপত্তারক্ষীরা। এমনকি নিজের অনুচরদের প্রতিও অবিশ্বাস জন্মেছিলো তার। যে কোনও মুহূর্তে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে বা আইএস জঙ্গি সেজে কেউ বাইরে থেকে দলে ঢুকে পড়তে পারে বলে সর্বদা আতঙ্কে ভুগতেন। তাই সর্বদা নিজের সঙ্গে আত্মঘাতী জ্যাকেট বা বেল্ট রাখতেন, এমনকি ঘুমানোর সময়ও।
তিনি আরও জানান, বাগদাদির ডায়বেটিসের সমস্যাও আচমকা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিলো। তার জন্য সারাক্ষণ ব্লাড সুগারের উপর নজর রাখতে হত। নিতে হত ইনসুলিনও। এক সময় ইরাকের মসুলে আল নুরিতে দাঁড়িয়ে তার দেয়া এক জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে পরিবার পরিজনদের ছেড়ে তার দলে ভিড়েছিলো হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। কিন্তু জীবনের শেষ দিনগুলিতে সেই প্রতাপ ধরে রাখতে পারেনি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি। ওয়াইএ/এসবি