260360

ফিলিপাইনে উৎসবমুখর দিনে নারকেলের মদ খেয়ে ১১ জনের মৃত্যু, ৩০০ জন হাসপাতালে

ডেস্ক রিপোর্ট : বড় দিনের উৎসব তো আর মুসলমানের উৎসব নয়, আর সেখানে মদ খেয়ে মৃত্যু হলে বা কেউ হাসপাতালে গেলে এখানে ইসলামের কি করার আছে। এ প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখে কারো মনে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। সবচেয়ে বড় কথা কোনো ধর্মের বা কোনো গোষ্ঠীর একটা উৎসবে মানুষের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক যা উৎসবকে ম্লান করে দেয়। আর এখানে ইসলাম কি বলে তা প্রাসঙ্গিক কি না বা কেউ মদের ব্যাপারে ইসলামের ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে বলে অন্য ধর্মের মানুষ বা গোষ্ঠীকে হেয় করা হচ্ছে কি না এমনটাও মনে করতে পারেন। এ লেখার উদ্দেশ্য তা নয়।

বরং ইসলাম এসেছে সমগ্র মানব জাতির জন্যে। বিশে^র সকল মানুষের কল্যাণের জন্যে। ইসলাম কেনো মদকে ধারাবাহিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করলো এ বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক হতে পারে। ‘তোমরা নেশাপূর্ণ অবস্থায় নামাজে দাঁড়াইও না’ এমন নির্দেশনার উল্লেখ করে অনেকে বলেন, তাহলে নামাজের বাইরে হয়ত মদ খাওয়া নিষেধ নয়। এমন বিভ্রান্তি অপসারণ কিংবা আসলে মদ সম্পর্কে ইসলাম কি বলেছে সে কৌতুহল সম্পর্কে জানান দিতে এ প্রতিবেদনে ফিলিপাইনে মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনাটি উদাহরণ হিসেবে টানা হয়েছে মাত্র। আর কেউ যদি বলেন মুসলমানের জন্যে মদ হারাম তো অমুসলিমের জন্যে মদ তো হারাম না। তাহলে বলতে হয় হাদিস বা কোরআনে মদ সম্পর্কিত নির্দেশ নয় সবধরনের আদেশ, নিষেধ কোনো বিশেষ ধর্ম গোষ্ঠী নয় সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশে বলা হয়েছে। শুধু ফিলিপাইন কেনো, বাংলাদেশেও বা বিশে^র অন্য দেশেও মদ কিংবা বিষাক্ত মদ খেয়ে মানুষের করুণ মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটে। কেউ মদ পান করবেন কি করবেন না এটি তার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। এক্ষেত্রে ধর্মের বিধিবিধান মেনে চলবেন কি চলবেন না সেটিও যার যার সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার।

তবে সন্দেহ নেই মদ উম্মাদনা সৃষ্টি করে। এবং অতিরিক্ত মদ পান মানুষকে অনেক সময় বেদিশা করে দেয়। মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় হারিয়ে ফেলে। শুধু মদ কেনো যে কোনো জিনিষ বা বিষয় যদি মানুষকে তার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে ফেলতে বাধ্য করে তাই ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ মানুষ তার ওপর যে কোনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তার ওপর সমূহ বিপদ নেমে আসতে পারে। স্বাস্থ্যগত ছাড়াও যে কোনোভাবে সে দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। এজন্যে পশ্চিমা দেশে অনেকে যখন পার্টিতে অংশ নেন তখন তার যদি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফেরার কথা থাকে, একই কারণে তিনি মদ পান থেকে বিরত থাকেন। এটি তিনি করেন সাবধানতা থেকে।

হাদিসে বলা হয়েছে, সবধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ। মদতো মাদকদ্রব্যেরই অন্তর্গত। আল্লাহ যে কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ করতেই নিষেধ করেছেন। কারণ এটি বিভিন্ন পাপের পথে মানুষকে টেনে নিয়ে যায়। মানুষ একটু নির্ভার হতে, শিথিল হতে বা আনন্দ করতে মদ পান করলেও একটি পর্যায়ে সে আর তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। হারিয়ে ফেলে। সুরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘ তারা তোমাকে (রাসুল সা:) মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, বলে দাও উভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার।

যদি পাপ হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে তাহলে ও পথ না মাড়ানো ভাল। কারণ তা নিষিদ্ধ। সন্দেহ নেই মদ ক্ষতিকর যা মন ও শরীরকে বেহুঁশ করে দেয়। এবং আল্লাহ মানুষের মন ও শরীরের জন্যে যা ক্ষতিকর তা নিষেধ করেছেন। কারণ তা মানুষের শক্তিকে ক্ষয় করে। আল্লাহ এও বলেছেন, তোমরা নিজেকে হত্যা করো না। ধংসাত্মক কাজে তোমরা নিজেদের নিয়োজিত করো না।’ সুরা নিসায় এ আদেশ দিয়েছেন আল্লাহ।
একারণেই যা কিছু মানুষের জন্যে ক্ষতিকর তা নিষিদ্ধ। সে বিবেচনায় মদ অর্থের অপ্রয়োজনীয় অপচয়। সুরা ইসরায় আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।

কিন্তু মদ পান ছাড়া যদি এর অল্প কিছু অংশ পারফিউমে ব্যবহার করা হয়, কিংবা কাপড় পরিস্কার করার কাজে পরিশোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কিংবা ওষুধে তাহলে তা নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু যে কোনো প্রকারে মদ পান নিষিদ্ধ। এজন্যে পানীয়ের বোতলের গায়ে উপাদানে উপকরণের উপাদান উল্লেখ থাকে। যা বাধ্যতামূলক।

ফিলিপাইনের কথাই ধরুন, আনন্দে উৎসবে এই মদ পান কিভাবে দুঃখজনক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ বলছে মদ পানের পর আক্রান্তকারীদের পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। কারো কারো মাথা ঘুরতে থাকেন। এবং অনেকে কোমায় চলে যান। লাগুনা’র মেয়র ভেনের মুনোজ ডাক্তারদের শরণাপন্ন হতে বলেন। স্থানীয়ভাবে নারকেলের মদ ল্যামবানগ হিসেবে পরিচিত ও জনপ্রিয়। এটি সাধারণত উৎসব, পার্টি বা ছুটির দিনে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু অবৈধভাবে এটি তৈরি হয় এবং তা বিক্রিও নিষিদ্ধ। যারা মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান তাদের রক্ত পরীক্ষার পর তাতে বিষক্রিয়ার প্রমাণ মিলেছে। এধরনের মদ খাওয়ার ব্যাপারে ফিলিপাইনের ফুড এন্ড ড্রাগ প্রশাসন আগে থেকে সতর্ক করে দিয়েছিল। এক বছর আগে এধরনের মদ প্রকাশ্যে বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। গত বছর ল্যামবানগ খেয়ে ফিলিপাইনে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সূত্র : আমাদের সময়.কম

পাঠকের মতামত

Comments are closed.