260611

দিনে স্কুল আর রাতে চা বিক্রি করা বিশাল জিপিএ-৫ পেয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট : দিনের বেলা স্কুল শেষ করে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাবার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে চায়ের দোকানে কাজ করে স্কুলছাত্র বিশাল মিয়া (১১)। চায়ের দোকানে কাজ শেষ করে গভীর রাতে বাড়িতে গিয়ে বসে বই-খাতা নিয়ে। পড়ালেখায় বেশ আগ্রহ তার। ছোট্ট বিশাল এবার তার আগ্রহ আর পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার এই ফলে অনেকেই অবাক হয়েছে। গর্ববোধ করছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরাও।

বিশালের বাবা মো. লিয়াকত মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মৌড়াইল এলাকায়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। বাড়িভাড়া, তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচসহ অন্যান্য সাংসারিক ব্যয় মেটানো হয় চা বিক্রির আয় থেকে। আগে বড় ছেলে ইভান দোকানে থাকত। কয়েক বছর ধরে সঙ্গে থাকে বিশাল।

তিনি আরও জানান, বড় ছেলে ইভান মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের ইসলামপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। মেয়ে তারিন আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।

বিশাল মিয়া জানায়, মা কুলসুম বেগম স্কুলে আসা-যাওয়া ও পড়ালেখার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেন। এ ছাড়া স্কুলের সব শিক্ষকও উৎসাহ জুগিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছেন। বিশাল আরও জানায়, প্রায় চার বছর ধরেই তার বাবার সঙ্গে এই কাজে সহযোগিতা করে আসছে। রাত ১১-১২টা পর্যন্ত চলে তাদের দোকানে চা বিক্রি।

দোকান থেকে মালামাল আনা, চা বানানো, ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা রাখাসহ সব কাজই করে সে। ফল পাওয়ায় সে বেশ খুশি।

বিশালের পিইসির ফল বিবরণী থেকে জানা যায়, সে ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতেই এ প্লাস পেয়েছে। বাংলায় ৮৫, ইংরেজিতে ৮৭, গণিতে ৮০, সমাজবিজ্ঞানে ৯০, সাধারণ বিজ্ঞানে ৯১ ও ধর্মে ৯৬ নম্বর।

এ ব্যাপারে সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন খান জানান, বিশাল ছেলেটি খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী।

পরিশ্রম করে বাবার সঙ্গে কাজ করে এতদূর এসেছে ছেলেটি। দারিদ্র্যতা তাকে আটকে রাখতে পারেনি। সে জীবনে অনেক ভালো করবে।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.