ত্রিশালে পথশিশুদের সাহায্যার্থে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেন্ট
ডেস্ক রিপোর্ট : ময়মনসিংহ ত্রিশালে পথশিশুদের সাহায্যার্থে আরফান ফ্যামেলিস স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সমাজের অবহেলিত, এতিম ও ঠিকানাবিহীন পথশিশুদের পাশে দাঁড়াতে ভ্রাম্যমাণ রেস্টুরেটের উদ্বোধন করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনটির কর্ণধার আরফান উদ্দিন অপুর ব্যতিক্রমী উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানের নব পরিকল্পনায় সরকারি নজরুল কলেজ গেটে গত বুধবার সকাল ১০টায় পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মিনি রেস্টুরেন্টটির যাত্রা শুরু হয়।
আরফান ফ্যামেলিস স্মাইলিং বেবি ফাউন্ডেশন ২০১৫ সালে আরফান উদ্দিন অপুর নিজস্ব অর্থায়নে ১১০ জন পথশিশু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মিনি রেস্টুরেন্টের উদ্বোধন করে প্রতিষ্ঠানটি। ভ্রাম্যমাণ মিনি রেস্টুরেন্টের লাভের শতভাগ অর্থই ব্যয় করা হবে সমাজের অবহেলিত, এতিম ও ঠিকানাবিহীন পথশিশুদের জীবনমান উন্নয়নে। পথশিশুরা যাতে উন্নত ভবিষ্যত্ সৃষ্টি করতে পারে সেই লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিত্সার জন্য জোগান দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আরফান উদ্দিন অপু বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুরা নানা প্রতিকূলতার মাঝে বেড়ে ওঠে। সাধারণত পথশিশুরা অসত্য বলা, অতিমাত্রা আবেগপ্রবণ, নিজ প্রয়োজনে অন্যকে প্রভাবিত করা, কাউকে সহজে বিশ্বাস করে না, ধ্বংসাত্মক কাজে আগ্রহ, নেতিবাচক আচরণ, খোলামেলা স্বাধীন জীবনে অভ্যস্ত, সহজে কাউকে মান্য করে না। এদের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তনে সামাজিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে তাদের কাউন্সেলিং বিচক্ষণতার সঙ্গে সম্পন্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সুবিধাবঞ্চিত ও পথশিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তাদের শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বিকাশ, একাডেমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, ভরণ-পোষণ এবং ভবিষ্যত্ জীবনে স্বাবলম্বী করে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছি।’
ইউনিসেফ কর্তৃক পথশিশু বলতে, যে সকল শিশুর জন্য রাস্তাই বসবাসের স্থান অথবা জীবিকার উপায় হয়ে গেছে তাদেরকে আমরা পথশিশু বলি। ২০০৫ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪১% শিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০% প্রতিদিন গোসল করতে পারে না, ৩৫% খোলা জায়গায় পায়খানা করে, ৮৪% শিশুর কোনো শীতবস্ত্র নেই, ৫৪% শিশুর অসুস্থতায় দেখার কেউ নেই, ৭৫% শিশু অসুস্থতায় ডাক্তার দেখাতে পারে না। মাদকাসক্তির চিত্র আরও ভয়াবহ। শিশু অধিকার ফোরামের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮৫ ভাগ পথশিশু মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসা সম্প্রসারণে সম্পৃক্ত অথবা মাদক ব্যবসায়ী ধারা নিয়ন্ত্রিত। ১৯% হেরোইন, ৪৪% শিশু ধূমপান ২৮% ইয়াবা, ৮% ইঞ্জেকশন ও ৮০% শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে জীবন টিকিয়ে রাখছে। এছাড়া ২০% শারীরিকভাবে নির্যাতিত, ৪৬% মেয়ে শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার ও ১৪.৫% শিশু সার্বিকভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে বলা হয়েছে, পারিবারিক পরিবেশ থেকে যে শিশু সাময়িক বা চিরতরে বঞ্চিত বা স্বার্থ রক্ষায় যে সকল শিশুর পারিবারিক পরিবেশ উপযুক্ত নয় সে সকল শিশু রাষ্ট্র থেকে বিশেষ সুরক্ষা ও সহায়তার অধিকারী। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০% শিশু, তন্মধ্যে ১৫% সুবিধাবঞ্চিত। বাংলাদেশ শিশু আইন ১৬টি ক্যাটাগরিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুর কথা বলেছে। বিশ্ব শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পথশিশু পুনর্বাসনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন বলেন, ‘আমাদের শিশুরা কেন রাস্তায় ঘুরবে? একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না। একটা শিশুও এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে না।’ এ লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে একযোগে পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। সূত্র : ইত্তেফাক