183700

ভারতে মাওবাদীদের উত্থান যেভাবে

নূসরাত জাহান: ১৯২০-এর দশকে ভারত উপমহাদেশে তখন উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। একই সময় সেখানে শুরু হয় সমাজতান্ত্রিক বা কমিউনিস্ট রাজনৈতিক মুভমেন্ট। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশে মাওবাদী আন্দোলনের বীজ বপন হয় ১৯৪৭ সালে। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরপরই। সেই থেকেই মাওবাদী আন্দোলনের শুরু, এখনও চলছে। তফাৎ এটাই এখন আর আন্দোলন এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়েছে ভারত জুড়ে। অনেক এলাকায় তারা বেশ শক্তপোক্ত জায়গাও করে নিয়েছে।

শুরুতে আন্দোলন সহিংস বা সশস্ত্র ছিল না। ধীরে ধীরে তা সশস্ত্র হয়ে ওঠে। ১৯৬৭ সালে পশ্চিবঙ্গের নক্সাশবাড়ি গ্রামে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে। একজন কৃষককে তার জমি থেকে উচ্ছেদ করা নিয়ে টানা ৭২ দিন আন্দোলন হয়। এর জেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দাবি মেনে নেয়। এই ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সেই আন্দোলনে ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

১৯৭২ সালে ভারত সরকার প্রথম বামপন্থীদের উগ্রপন্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। ভারতে মাওবাদীরা নক্সাশ নামে অধিক পরিচিত। এর পরবর্তী দুই দশক মাওবাদীদের আন্দোলন শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। অন্ধ্র প্রদেশে ১৯৭৬ সালে পিপল’স ওয়ার গ্রুপ (ডিইব্লউপি) গঠন করা হয়। একই সময় বিহারে মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি) বৈঠক করছিল। আর ১৯৯২ সালে গঠন করা হয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া-মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট-জনশক্তি। এ সংগঠনটি বিস্তার আছে তিনটি রাজ্যে। এগুলো হলো অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, ওড়িষ্যা আর মহারাষ্ট্র।

মাওবাদীদের আন্দোলনে চলমান ধারা শুরু হয় ২০০৪ সালে। একই সময় পিডব্লিউজি এমসিসি’র সঙ্গে মিলিত হয়। আর একসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী) বা সিপিআই-এম গঠন করে। এই গোষ্ঠী ভারতে নিষিদ্ধ। আর সিপিআই-এম এর শাখা গ্রুপ হচ্ছে তৃতীয় প্রস্ততি কমিটি (টিপিসি)।
জনযুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্যের ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে সিপিআই-এম লড়াই করে যাচ্ছে। তবে এ সংগঠনের সঙ্গে চীনের মাও সেতুং-এর আন্দোলনের কোনো মিল নেই।

সিপিআই-এম এর সশস্ত্র শাখা হচ্ছে পিপল’স লিবারেশন গেরিলা আর্মি (পিএলজিএ)। যারা ভারতে নক্সাল নাশে অধিক পরিচিত। ভারতের অনেক রাজ্যেই মাওবাদীরা সক্রিয়। মাওবাদীদের সঠিক সংখ্যা জানা নেই। ধারণা করা হয় সারা দেশে ২৫ হাজার মতো মাওবাদী আছে। তবে ভারত সরকারের দাবি এ সংখ্যা আরো কম।

ভারতের মধ্যঞ্চাল ও পূর্বাঞ্চলে ৮ কোটি ৪০ লাখ আদিবাসী মানুষের বাস। এসব এলাকা খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ভূমিহীন। মাওবাদীদের আন্দোলনের কারণে এই এলাকার সম্পদ পুরোদুস্তুর ব্যবহার কার সম্ভব হয় না। এছাড়া রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বিষুদ্ধ খাবার পানির অভাব। ফলে উন্নয়নও করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্র: আল-জাজিরা।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.