193398

শুধু স্ত্রী নয় শ্রীদেবী ছিল ভালো বন্ধুও: বনি কাপুর

 

ডেস্ক রিপোর্ট: সারাবিশ্বের কাছে ‘চাঁদনি’ হয়ে থাকলেও স্বামী বনি কাপুরের কাছে অভিনেত্রী শ্রীদেবী শুধু একজন স্ত্রী নয় ভালোবাসার মানুষ ও ভালো বন্ধুও ছিলেন।

বুধবার চোখের জলে বলিউডের প্রথম ‘ফিমেল সুপারস্টার’কে বিদায় জানানো হয়। শেষ যাত্রায় সবাইকে কাঁদিয়ে যান এই অভিনেত্রী।

শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর শ্রীদেবীর টুইটার অ্যাকাউন্টে এক নোটে পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তার স্বামী বনি কাপুর।

বনি কাপুর বলেন, একজন স্ত্রী, একজন বন্ধু আর দুই মেয়ের মাকে হারানোর অনুভূতি জাননোর ভাষা নেই। এসময় যারা পাশে ছিলেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

শ্রীদেবীকে বন্ধু উল্লেখ করে স্বামী বনি কাপুর বলেন, সারাবিশ্বের কাছে শ্রীদেবী চাঁদনি হয়ে থাকলেও সে আমার কাছে ছিল ভালোবাসা; আমার ভালো বন্ধু এবং আমাদের দুই সন্তানের কাছে একজন মা।

শ্রীদেবীর পরিবারের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে একটি বিবৃতিও বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো হয় বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়।

ছোট মেয়ে খুশী কাপুর এবং স্বামী বনি কাপুরের সঙ্গে শ্রীদেবী দুবাই গিয়েছিলেন এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। শনিবার রাতে সেখানকার একটি হোটেলে ৫৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি।

শ্রীদেবীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দুবাইয়ের জুমেইরাহ ইমিরেটস টাওয়ারস হোটেলের একটি কক্ষে ছিলেন শ্রীদেবী-বনি। বনি কাপুর আগেই দুবাই থেকে মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু শ্রীদেবীকে চমকে দিতে তিনি আবার শনিবার দুবাই যান। রাতের খাবারের জন্য শ্রীদেবীকে প্রস্তুত হতে বলেন বনি কাপুর। এসময় শ্রীদেবী বাথরুমে যান।

দীর্ঘ সময় পরও শ্রীদেবী বের না হলে বনি তাকে ডাকেন। কোনো সাড়া না মিললে বনি দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তিনি ভেতরে গিয়ে শ্রীদেবীকে পানিভর্তি বাথটবে নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার এক বন্ধুকে ডাকেন। শ্রীদেবীকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

তার এমন মৃত্যুতে গোটা পরিবার শোকে বিহ্বল হয়ে পড়ে। বনি কাপুরের ছোট ভাই সঞ্জয় কাপুর জানিয়েছেন, শ্রীদেবীর হৃদরোগের কোন লক্ষণ ছিল না।

পরে ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে দুবাই পুলিশ জাানায়, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যু হয়েছে বাথটাবের জলে দম আটকে।

শ্রীদেবীর রক্তের নমুনায় পাওয়া গেছে অ্যালকোহলও। তবে সব কিছু খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন- এটি দুর্ঘটনাই, এর পিছনে অন্য কিছু নেই।

শ্রীদেবীর মৃতদেহ দুবাই থেকে মুম্বাই ফেরে মঙ্গলবার। ভারতের দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ও তার পরিবারের কাছে অনুমতিসংক্রান্ত কাগজ ও মরদেহ এরই হস্তান্তর করে এদিন।

দুবাই থেকে শ্রীদেবীর মরদেহ ভারতে নেওয়ার পর বুধবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মুম্বাইয়ের সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে তা রাখা হয় বলে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়।

সেখান থেকে শ্রীদেবীর শববাহী গাড়ি দুপুর ২টা ২৬ মিনিটে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রওনা হয় ভিলে পার্ল শ্মশানের দিকে। সেখানেই সন্ধ্যা সোয় ৫টার দিকে শ্রীদেবীর শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

মরদেহে মুখাগ্নি করেন বনি কাপুর। সঙ্গে ছিলেন শ্রী এবং বনি দুই মেয়ে জাহ্নবী এবং খুশি। অত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ৬টার দিকে একে একের শ্মশান চত্বর ছাডেন সঞ্জয় লীলা বানশালী, রাজকুমার হিরানি, সুধীর মিশ্র, বিধু বিনোদ চোপড়া, জে পি দত্ত, নাগমা, বিদ্যা বালন, সিদ্ধার্থ রায় কাপুরসহ অসংখ্য বলি‌উড তারকা।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ‘লমহে’ ছবির শুটিং-এর সময়ই শ্রীদেবী ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তার মৃত্যুর পর যেন সব কিছুই যেন সাদা কাপড়ে মুড়ে ফেলা হয়। নায়িকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাই সব কিছুই সাজানো হয়েছিল তার প্রিয় রং সাদায়।

সাদা ফুল দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি শ্রীদেবী-র বাংলো ‘ভাগ্য’ও মুড়ে ফেলা হয়েছিল সাদা কাপড়ে। অন্ত্যেষ্টিয়াতেও সকলকে অনুরোধ করা হয়েছিল সাদা পোশাকে আসতে। সেই মতো প্রায় সব বলিউড তারকাকেই এ দিন দেখা গিয়েছে সাদা পোশাকে লোখণ্ডওয়ালার সেলিব্রেশন স্পোর্টস ক্লাবে।

শ্রীদেবীকে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র নারী সুপারষ্টার বলা হয়। ‘সাদমা’, ‘লামহে’, ‘মি. ইন্ডিয়া’, ‘চাঁদনি’, ‘হিম্মতওয়ালা’- ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য শ্রীদেবী এখনও স্মরনীয় হয়ে আছেন। শুধু হিন্দি নয়, গুণী এই অভিনেত্রী তামিল, তেলেগু এবং কন্নড় ছবিতেও সমান সাফল্য পেয়েছেন।

বনি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের ১৫ বছর পর ২০১২ সালে শ্রীদেবী ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিটি দিয়ে আবারও বলিউডে প্রত্যাবর্তন করেন। ছবিটি যথেষ্ট প্রশংশিত হয়। তার অভিনীত ‘মম’ ছবিটিও দর্শকনন্দিত হয়েছে। মেয়ে জান্ববী বলিউডে অভিষেকের মাত্র এক মাস আগে শ্রীদেবী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। সুত্র মানবজমিন

পাঠকের মতামত

Comments are closed.