197626

পোড়া তেলে দেদার রান্না, ওত পেতে আছে ক্যান্সার

এই সময় : একশ্রেণির রেলকর্মীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বলি হল এক নাবালক। গুয়াহাটি-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের দেহ। তখন রেললাইনে রং করার কাজ করছিল বছর তেরোর রাজা সরকার। আর ৯ দিন পরেই ১৪-য় পা দিত সে।

কেন রেলের কাজ করছিল রাজা? অভিযোগ, একশ্রেণির রেলকর্মী ডিউটিতে ফাঁকি দিয়ে সেই কাজ স্টেশন লাগোয়া এলাকার নাবালকদের দিয়ে করাতেন। বিনিময়ে সেই নাবালকদের দৈনিক মিলত মাত্র ৫০ টাকা। সামান্য সেই টাকার লোভে স্কুল ফাঁকি দিয়ে হলেও ওই কাজ করত নাবালকরা। শুক্রবার নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনে দুর্ঘটনায় মৃত রাজা সরকার (১৩) সে ভাবেই কাজে যুক্ত হয়েছিল। শুধু জং ধরা রেললাইন রং করা নয়, থ্রু পাস ট্রেনগুলিকে পতাকা নেড়ে সংকেত দেওয়ার কাজও করানো হত নাবালকদের দিয়ে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে গ্যাংখালাসির ওই কাজ নাবালকরা দিনের পর দিন করলেও কেন রেলকর্তা বা ট্রেনচালকদের নজর এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মৃতের পরিবারও টের পায়নি যে রাজা স্কুল ফাঁকি দিয়ে এই কাজ করত। রাজার টোটোচালক বাবা সুজিত সরকার স্টেশনের বাইরেই ছিলেন। হইচই শুনে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে ছেলের রক্তাক্ত দেহ দেখে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। রাজার দেহ ছিন্নভিন্ন হওয়ার খবর পেয়ে স্টেশনে পৌঁছে ঘণ্টা তিনেক রেল অবরোধ শুরু করে রাখেন তৃণমূল কর্মীরা। চাপে পড়ে তদন্তের নির্দেশ দেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের কর্মচারী বা ট্রেন যাত্রী না-হলেও মৃত নাবালকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। আলিপুরদুয়ারের বিভাগীয় রেল ম্যানেজার চন্দ্রভীর রমন বলেন, ‘যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। রেলের আইন মেনে ওই কিশোরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ কিন্তু ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে। ৮ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের কথা জানিয়েছে রেল। কিন্তু তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি মোহন শর্মা বলেন, ‘আমরা এর বিরোধিতা করছি। রেলকর্মীদের চরম গাফিলতির মূল্য কি মাত্র ৮ লক্ষ টাকায় চোকানো যায়?’ তৃণমূল এই ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষকেই কাঠগড়ায় তুলেছে। মোহন শর্মার অভিযোগ, ‘এ কেমন নজির রেলের ঘরে? মানবতার চরম অবনমন।’

পাঠকের মতামত

Comments are closed.