199977

কেউ কথা রাখেনি, ৩০০ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমে হচ্ছে রাস্তা

শীতের সকাল, আর এ কারণে ৭টা বাজলেও কুয়াশাচ্ছন্ন গোটা গ্রাম। আধার কাটলেও এখনো পূর্ব আকাশে সূর্যের আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছেনা। তারপরও গ্রামের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের শত শত মানুষ হাতে কোদাল, ঝুড়ি কাস্তেসহ নেমে পড়েছে রাস্তা নির্মাণের কাজে। এমন দৃশ্য চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের। গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের মানুষ প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে এভাবেই নিজেদের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া ও মাখালডাঙ্গা গ্রামের মাঝে তিন কিলোমিটার দূরুত্বের একটি সংযোগ কাঁচা রাস্তা রয়েছে। এই সংযোগ রাস্তাটি বেশ কয়েক বছর ধরেই চলাচলের অনুপযোগী। গ্রাম্য রাস্তা হওয়ায় গত বর্ষায় রাস্তাটি ভেঙে চলাচলের একেবারেই অযোগ্য হয়ে পড়ে।

আব্দুল লতিফ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, দুটি গ্রামের এই সংযোগ রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে দুটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়। তাছাড়া গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কবরস্থানটিও সংযোগ রাস্তার একেবারেই কাছে। এ কারণে গ্রামের কোনো মানুষ মারা গেলে কবরস্থানে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয় গ্রামবাসীর। রাস্তার বেহাল দশার কারণে বেশ কয়েকবার খাটিয়া থেকে মরদেহ নিচে পড়ে যাবারও ঘটনা ঘটেছে বলেন এই বাসিন্দা। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জনপ্রতিনিধ ও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে জানলেও তাদের ঘুম ভা্ঙেনি। সড়কটি নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের লোকজন। কিন্তু কথা রাখেনি।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, দুটি গ্রামের সংযোগ এ রাস্তাটি মেরামতের জন্য কয়েক বছর ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য থেকে সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে বার বার ধর্না দিয়েছেন। প্রতিবারই শুধু মিলেছে আশ্বাস। বাস্তবায়ন হয়নি আশ্বাসের। আর তাইতো নিজেদের রাস্তা নিজেরাই তৈরি করতে কাজ শুরু করেছেন।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা হাসানুর রহমান জানান, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করছি আমরা। আমাদের এ কাজে গ্রামের যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও সহযোগিতা করছেন। আমরা কাজ করছি প্রায় ৪০০ মানুষ। সবাই স্বেচ্ছাশ্রমে নিজ তাগিদ থেকে কাজ করছে রাস্তা নির্মাণে।

গত শরিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট-বড়, ধনী-গরীব সকল ভেদাভেদ ভুলে রাস্তা তৈরিতে কাজ করছে গ্রামের প্রায় সাড়ে তিনশ’র অধিক মানুষ। ইতিমধ্যে রাস্তার অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। রাস্তাটি সম্পূর্ণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান গ্রামের বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তিত্ব খায়রুল মন্ডল।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াশীমুল বারী অবশ্য বলছেন, গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দারা একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি জানান, সরকারি তহবিল থেকে যতটুকু সম্ভব তাদের জন্য ব্যবস্থা নিবেন।  ইউএনবি।

পাঠকের মতামত

Comments are closed.